প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকেই মাকসুদের অপসারণ চান বিনিয়োগকারীরা

পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে আগামীকাল রোববার (১১ মে) বৈঠক করবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ওই বৈঠকেই বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন কমিশনের অপসারণ চান বিনিয়োগকারীরা।
আজ শনিবার (১০ মে) পুরানা পল্টনে ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরামের (সিএমজেএফ) অডিটরিয়ামে সংবাদ সম্মেলনে এ বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট ইনভেস্টর এসোসিয়েশনের সভাপতি এস এম ইকবাল হোসেন এ কথা বলেন।
এতে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক মো. আব্দুল্লাহ আল ফয়সাল। আগামীকালের ওই বৈঠকে অর্থ উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ও বিএসইসির চেয়ারম্যান উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে এস এম ইকবাল হোসেন বলেন, এখন পর্যন্ত প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকে পুঁজিবাজার বুঝে এবং উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারবে এমন কাউকে রাখা হয়নি। যেখানে স্টক এক্সচেঞ্জ, মার্চেন্ট ব্যাংকার, ব্রোকার, সম্পদ ব্যবস্থাপক, বিনিয়োগকারীদের প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের কেউ থাকবে না। অথচ এরাই পুঁজিবাজারের বিদ্যমান সমস্যার কারণ বুঝে। বিপরীতে যাদের নিয়ে অভিযোগ, তাদেরকেই রাখা হয়েছে বৈঠকে। তাই স্বাভাবিকভাবেই তারা তাদের ব্যর্থতা তুলে ধরবেন না প্রধান উপদেষ্টার কাছে।
এস এম ইকবাল হোসেন দাবি করেন, বর্তমান বিএসইসি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বাধীন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে অব্যাহত পতন। এর কারণ হিসেবে মাকসুদ কমিশনের অযোগ্যতাকে দায়ী করেন। তবে নিজের আত্মীয় হওয়ায় অর্থ উপদেষ্টা তাকে অপসারণ করছেন না বলে অভিযোগ করেন। এমনকি প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী রাশেদ মাকসুদকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেন। এই অবস্থায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তাদেরকে নিয়েই পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও শক্তিশালী করার জন্য বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে। যেখানে অন্যসব স্টেকহোল্ডারদের কেউ থাকবে না। এতে করে ওই বৈঠকে প্রকৃতপক্ষে কোন ভালোকিছু হবে না বলে বিনিয়োগকারীদের বিশ্বাস।
সংগঠনের এই নেতা আরও বলেন, মাকসুদ পুঁজিবাজার বুঝেন না। এটা শুধু সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কথা না। এই কথা এখন বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যানসহ স্টেকহোল্ডারদের। তাই মাকসুদের অপসারণ করা উচিত। তারা পুঁজিবাজারের শত্রু হিসেবে অর্থ উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান, খন্দকার মাকসুদ ও আবু আহমেদকে দায়ী করেন। মাকসুদের নেতৃত্বাধীন কমিশন দায়িত্ব নেওয়া পুঁজিবাজার অনেক পিছিয়ে পড়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
এরই মধ্যে সংবাদ সম্মেলনে পুঁজিবাজারের চিত্র তিনি তুলে ধরেন- মার্কেট ক্যাপিটাল হারিয়েছে প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকা; মার্কেট সূচক হারিয়েছে প্রায় ১১০০ পয়েন্টস; ৯০ শতাংশ বিনিয়োগকারী পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে; এ পর্যন্ত সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত জরিপে বাংলাদেশ সিকিউরিটি এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের প্রতি অনাস্থা দাঁড়িয়েছে ৯৫ শতাংশেরও বেশি; ৯৫ শতাংশ বিনিয়োগকারী তার অপসারণ চাচ্ছেন; মার্কেট আরএসআই ১১ বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের ইতিহাসে সর্বনিম্ন এবং বিশ্ব রেকর্ড ও বটে। প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার ক্লিনিক্যালি ডেড হয়ে গেছে; পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট সবাই ইতোমধ্যে মন্তব্য করেছেন যে, বর্তমান কমিশনের চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের পুঁজিবাজার নিয়ে কোন ধারণা নেই বাস্তব অভিজ্ঞতা ও নেই। এমনকি পুঁজিবাজারের উন্নতি ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণের কোন সদিচ্ছা নেই। একটি প্রতিষ্ঠান যথাযথভাবে পরিচালনার জন্য প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বের যোগ্যতা ও গুণাবলী থাকা প্রয়োজন যার কিছুই নেই তার মধ্যে; কমিশনের ওপরে আস্থার সংকটের কারণে গত ৮ মাসেও মৌলভিত্তিক কোন কোম্পানি শেয়ারবাজারে আসার জন্য কোন আগ্রহ দেখায়নি এতে পুঁজিবাজার নিস্তেজ হয়ে পড়েছে; বিধিতে না থাকা সত্ত্বেও নিজেদের জন্য বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ. যার মধ্যে আপ্যায়ন বাবদ প্রতিমাসে চেয়ারম্যান তি হাজার টাকা এবং প্রত্যেক কমিশনারের জন্য আড়াই হাজার টাকা বরাদ্দ থাকলেও বাস্তবে চেয়ারম্যান প্রতি মাসে ২৫ হাজার টাকা এবং কমিশনাররা ১৫ হাজার টাকা করে উত্তোলন করেছেন এবং সরকারি নিয়ম অনুযায়ী কমিটির সদস্যদের প্রতি সভার সম্মানিত ভাতা বাবদ তিন হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা প্রধানের উল্লেখ থাকলেও বাস্তবে তারা প্রতি মাসে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ব্যতিরেখে বহিঃসদস্যদের প্রতি দুই লাখ টাকা প্রদান করা হচ্ছে। যা সম্পূর্ণরূপে পুঁজিবাজারের স্বার্থবিরোধী ও বেআইনি।