অধরা জয়ের লক্ষ্যে আজ দ্বিতীয় টেস্টে পাকিস্তানের মুখোমুখি বাংলাদেশ

অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের প্রত্যাবর্তনে উজ্জীবিত হয়ে আজ শনিবার মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে পাকিস্তানের মুখোমুখি হচ্ছে। ম্যাচটি শুরু হবে সকাল ১০টায়।
হ্যামস্ট্রিং ইনজুরির কারণে পাকিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ এবং চট্টগ্রামে প্রথম টেস্টে খেলতে পারেননি সাকিব আল হাসান। সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ইনজুরিতে পড়েন তিনি। সাকিবের অনুপস্থিতিতে সবগুলো ম্যাচই হারে বাংলাদেশ।
দ্বিতীয় টেস্টে পাকিস্তান জয় পেলে ঘরের মাঠে টেস্ট সিরিজেও হোয়াইটওয়াশ হবে বাংলাদেশ।
প্রথম টেস্টে খেলার পথেই ছিলেন দেশসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। কিন্তু, ফিটনেস পরীক্ষায় ব্যর্থ হওয়ায় সাইডলাইনে বসে থাকতে হয় তাঁকে। প্রথম টেস্টে ৪৪ রানের লিড পেয়েও ৮ উইকেটে ম্যাচ হারতে হয় বাংলাদেশকে।
চট্টগ্রামে ম্যাচের প্রথম ইনিংসে টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরির দেখা পান লিটন দাস। মুশফিকুর রহিম করেন ৯১ রান। দুজনের ব্যাটিংয়ের সঙ্গে বাঁ-হাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম ১১৬ রানের বিনিময়ে সাত উইকেট শিকার করেন। কিন্তু, প্রথম ইনিংসে তাঁদের ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স দলের কোনো উপকারে আসেনি। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটাররা ব্যর্থ হওয়ায় সহজ জয় পায় পাকিস্তান।
প্রথম ইনিংসে লিড পেলেও ম্যাচ জয়ের আত্মবিশ্বাসে ঘাটতি ছিল বাংলাদেশের। মুশফিক-লিটন ও তাইজুল ছাড়া স্বাগতিক দলের ব্যাটিং-বোলিংয়ে ঘাটতি ছিলো চোখে পড়ার মতো। যে কারণে সাকিবের অনুপস্থিতি ব্যাপকভাবে ফুটে ওঠে।
সাকিব থাকলে দলের খেলোয়াড়দের আত্মবিশ্বাস এবং ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের উন্নতি ঘটে বলে সবার বিশ্বাস।
কিন্তু, টপ অর্ডার ব্যাটারদের পারফরম্যান্স বড় ক্ষতি করে বাংলাদেশের। প্রথম ইনিংসে ৪৯ রানে এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ৩৯ রানে ৪ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। সুবিধাজনক অবস্থানে থাকার পরও এটাই ছিল বাংলাদেশের হারের পেছনে প্রধান কারণ। অধিনায়ক মুমিনুল হকের মতে, তাঁর এবং টপ অর্ডারেরও ব্যর্থতাও এটির অংশ ছিল।
মুমিনুল জানান, বাংলাদেশ যদি সবকিছু ঠিকঠাক করতে না পারে, তাহলে টেস্ট সিরিজে তাঁদের কামব্যাক করার কোনো উপায় নেই।
তবে, মিডল-অর্ডার ব্যাটার ইয়াসির আলী চৌধুরী নিজের অভিষেক টেস্টে পাকিস্তান পেসার শাহিন শাহ আফ্রিদির শর্ট পিচ ডেলিভারিতে মাথায় বলের আঘাত পাওয়ার আগে নিজের প্রতিভার ঝলক দেখিয়েছিলেন। পরে ইয়াসির মাঠ ছাড়লে নুরুল হাসান সোহান ‘কনকাশন সাব’ হন। দ্বিতীয় টেস্টে ভালো পারফরম্যান্সের জন্য প্রথম ম্যাচের ভুলগুলো সংশোধন করতে আগ্রহী বাংলাদেশ।
ইয়াসির বলেন, ‘আমরা জানি না দ্বিতীয় টেস্টে উইকেট কেমন হবে। আমাদের যা করতে হবে তা হলো, উইকেটের আচরণ দেখে খেলতে হবে এবং মূল বিষয় হলো—আমাদের যে প্রক্রিয়াটি আছে, তা ধরে রাখতে হবে। আপনাকে সবকিছু স্বাভাবিক রাখতে হবে এবং উইকেটের চাহিদামতো ব্যাট করতে হবে।’
পাকিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচ সিরিজের শেষ টি-টোয়েন্টিতে ডান হাতের আঙুলে চোট পান তাসকিন আহমেদ। ওই চোট তাঁকে ছিটকে দেয় চট্টগ্রাম টেস্ট থেকে। আশার ব্যাপার হলো, ঢাকা টেস্টের দলে ফিরেছেন তাসকিন। তবে, দলে ফিরলেও পাকিস্তানের বিপক্ষে মাঠে নামার সম্ভাবনা কম তাঁর। মূলত দলের সঙ্গে রেখে নিউজিল্যান্ড সিরিজের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন এ পেসার।
সাকিবের দলে ফেরার অর্থ হলো—একাদশে পরিবর্তন আনতে হবে বাংলাদেশকে। দুই ইনিংসে ব্যর্থ ওপেনার সাইফ হাসান অসুস্থতার কারণে দল থেকে বাদ পড়েছেন। বাংলাদেশ এরই মধ্যেই টি-টোয়েন্টি স্পেশালিস্ট নাঈম শেখকে দলে ডেকেছে। আছেন নতুন মুখ মাহমুদুল হাসান জয়ও। ইনিংস শুরু করার সামর্থ্য তাঁর আছে। তাই দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে মূলত তিনটি পরিবর্তন আনতে হতে পারে বাংলাদেশকে।
তবে যাই হোক না কেন, বাংলাদেশের একমাত্র লক্ষ্য পাকিস্তানের বিপক্ষে জিতে এ ফরম্যাটে অধরা জয়ের স্বাদ নেওয়া।
পাকিস্তানের বিপক্ষে ১০টি টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ। সবগুলোই জিতেছে পাকিস্তান। এর মধ্যে একটি টেস্ট ড্র হয়। সর্বশেষ ২০১৫ সালে বাংলাদেশ সফরে দ্বিপক্ষীয় সিরিজে একটি টেস্ট ড্র হয়েছিল।
বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত ১২২টি টেস্ট খেলেছে, জিতেছে ১৪টিতে, হেরেছে ৯২টিতে। এর মধ্যে ৪৩টি ম্যাচে ইনিংস ব্যবধানে হার। বাকী ১৬ টেস্ট ড্র করেছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ দল : মুমিনুল হক (অধিনায়ক), সাদমান ইসলাম, নাজমুল হোসেন শান্ত, মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান, লিটন দাস, ইয়াসির আলী রাব্বি, নুরুল হাসান সোহান, মেহেদি হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলাম, তাসকিন আহমেদ, এবাদত হোসেন, আবু জায়েদ রাহি, নাইম হাসান, মাহমুদুল হাসান জয়, রেজাউর রহমান রাজা, খালেদ আহমেদ, শহিদুল ইসলাম এবং নাঈম শেখ।