মেসি, নেইমারের কুয়াশায় এমবাপ্পে

‘দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া / ঘর হতে দুই পা ফেলিয়া / একটি ধানের শিষের উপরে / একটি শিশিরবিন্দু।’ ঠিক তেমনি ফুটবলের বিস্ফোরিত স্ফুলিঙ্গ যেন অদেখা রয়ে গেছে। তবে আগুন যেখানেই চাপা পড়ুক, দিনশেষে কুয়াশায় আচ্ছন্ন জগতকে জানান দেয় তার তেজস্ক্রিয়তা। ফ্রান্সের স্ট্রাইকার কিলিয়ান এমবাপ্পে এমনই এক তেজস্বী জহরত।
২৩ বছর বয়সি এই খেলোয়াড় কত দারুণভাবে উপভোগ করছেন ফুটবলের শুদ্ধ স্বাদ, সেটি তাঁর খেলাতেই প্রকাশ পায়। তবে সে তুলনায় তারকা খ্যাতি অনেকটাই কম এমবাপ্পের। এ সময়ের তারকা লিওনেল মেসি, নেইমার জুনিয়র কিংবা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোদের কুয়াশায় ঢাকা পড়ে গেছেন এমবাপ্পে। তবুও ফুটবল নিজেই চিনতে পেরেছে এই প্রতিভাকে। তাইতো ফুটবল ইতিহাসের সেরা আর্থিক চুক্তি করা হয়েছে এমবাপ্পের সঙ্গেই।
৩০-৩৫ বসন্ত পার করেও যে আফসোস নেইমার ও মেসিরা করেন, সেখানে সফল ফরাসি স্ট্রাইকার এমবাপ্পে। মাত্র ১৯ বছর বয়সেই সর্বোচ্চ শিরোপাতে চুমু আঁকার স্বাদ পেয়েছেন। সময় রয়েছে আরও। হয়তো কিংবদন্তি পেলের অনন্য রেকর্ড তিন বিশ্বকাপ জেতার সীমানাও ছুঁয়ে ফেলবেন এমবাপ্পে।
কাতার বিশ্বকাপ ফরাসি এই তারকার দ্বিতীয় বিশ্বকাপ। এখন পর্যন্ত দুই বিশ্বকাপে ১১ ম্যাচ খেলে গোল করেছেন ৯টি। মেসিরও সমান সংখ্যক গোল রয়েছে বিশ্বকাপে। তবে ৯ গোল করার জন্য মেসির খেলতে হয়েছে পাঁচটি বিশ্বকাপের ২৩টি ম্যাচ। ভাবুন একবার! আর নেইমার তিন বিশ্বকাপে ১১ ম্যাচ খেলে গোল করেছেন ৬টি।
ফ্রান্সের হয়ে ৬৩ ম্যাচে এমবাপ্পে পেয়েছেন ৩৩ গোল। মেসি আর্জেন্টিনার হয়ে ১৬৯ ম্যাচে গোল করেছেন ৯৪টি। আর নেইমার ব্রাজিলের হয়ে ১২২ ম্যাচে ৭৫ গোল করে হিসাবে একটু এগিয়ে আছেন। তবে এমবাপ্পের সামনে পড়ে আছে সোনালি সময়। তাতে অন্যান্য তারকাদের ছাড়িয়ে যেতে হয়তো বেশি সময় লাগবে না।
ক্লাব এবং জাতীয় দল মিলে কিলিয়ান এমবাপ্পে এখন পর্যন্ত ৩৫৭টি ফুটবল ম্যাচ খেলেছেন। গোল পেয়েছেন ২৪৮টি। দুদিন আগেই লিওনেল মেসি ১ হাজারতম ম্যাচ খেললেন। মেসির গোল সংখ্যা ৭৫৯টি। নেইমার ৬৯৬ ম্যাচ খেলে গোল পেয়েছেন ৪৩০টি। আর সিআরসেভেন খ্যাত ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো খেলেছেন সবচেয়ে বেশি ম্যাচ। ১ হাজার ১৪১ ম্যাচে রোনালদোর গোল সংখ্যা ৮১৯টি। এই পরিসংখ্যানে অভিজ্ঞ মেসি-রোনালদো কিছুটা এগিয়ে থাকলেও শতকরা হিসেবে নেইমারকে পিছনে ফেলেছেন এমবাপ্পে।
খেলার মাঠে ক্ষিপ্র গতির স্ট্রাইকার এমবাপ্পে বেশ শান্ত এবং নমনীয় থাকেন। মার্জিত ফুটবল শৈলীই যেন তাঁর খেলার অনুষঙ্গ। তবে স্কুল জীবনে এমবাপ্পে ছিলেন যেন ভিন্ন এক বালক। শিক্ষক এবং সহপাঠীদের সামনে বেশ ডানপিটে ছিলেন তিনি। ফুটবলে এসে রূপান্তর ঘটেছে ভদ্র বালক হিসেবে। কাতার বিশ্বকাপের ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৮ ডিসেম্বর। তার দুদিন পরেই তরুণ্যে ভরা এই ফুটবলারের ২৪তম জন্মদিন। ভক্তরা নিশ্চয়ই চাইবেন এমবাপ্পের এই জন্মদিনটি কাটুক দ্বিতীয় শিরোপার স্বাদ পেয়ে। আপাতত তাঁর সামনে রয়েছে এই আসরের কোয়ার্টার ফাইনাল বাধা।
আগামী ১০ ডিসেম্বর রাত ১টায় কাতারের আল বায়াত স্টেডিয়ামে কোয়ার্টার ফাইনালে ফ্রান্সের মুখোমুখি হবে ইংল্যান্ড।