‘মনে হচ্ছে বেলজিয়াম জেতেনি, জিতেছে আর্জেন্টিনা’

‘ব্রাজিল এভাবে খেলতে পারে না! এটা কোনো খেলা নয়। বেলজিয়ামের মতো দলের কাছে ব্রাজিল পাত্তায় পেল না। এটা সত্যিই মানতে পারছি না। খুব খারাপ লাগছে। আর্জেন্টিনার সাপোর্টাররা এবার গলা লম্বা করে কথা বলবে। সেটাও তো কোনো কথা নয়। কথা হলো, বাংলাদেশের বিশ্বকাপ উন্মাদনা শেষ হয়ে গেল।’
ঢাকার গ্রিনরোড স্টাফ কোয়ার্টারের মাঠে ব্রাজিলের জার্সি পরে খেলা দেখতে এসেছে ছয় বন্ধু। ঘাসে খবরের কাগজ বিছিয়ে খেলা দেখছে তারা। এদের মধ্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া তরিকুল ইসলাম (২৬) চোখের জল মুছতে মুছতে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন।
তরিকুল ইসলাম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘কোয়ার্টার ফাইনালে এসে এভাবে বাজে খেলে হারবে তা একবারও ভাবিনি। তবে বেলজিয়াম পাওয়ার ফুটবল খেলেছে। খেলা শেষে আর্জেন্টিনার সাপোর্টারদের উল্লাস দেখে মনে হচ্ছে বেলজিয়াম জিতেনি, জিতেছে আর্জেন্টিনা!’
আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পাশে গ্রিনরোড স্টাফ কোয়ার্টারের মাঠভর্তি দর্শক। গভীর রাতে খেলা হলেও ছেলেমেয়েসহ হাজার হাজার দর্শকে ঠাসা মাঠ। সবারই নজর বড় পর্দায়। ব্রাজিল পায়ে বল নিয়ে ছুটলেই সমর্থকদের গলা ফাটানো চিৎকার। আর বেলজিলাম বল নিয়ে দৌড়ালেই আর্জেন্টিনা সমর্থকসহ সব ব্রাজিলবিরোধী সমর্থকদের সমস্বরে চিৎকার!
রাত ১১টার দিকে গ্রিনরোড স্টাফ কোয়ার্টারের মাঠে প্রবেশ করেই দেখ যায় স্যাঁতসেঁতে আর নোংরা কাদাযুক্ত মাঠ। এর মধ্যেই ঘাসের ওপরে কাগজ, ইট, বস্তা, কাঠ এমনকি শীতল পাটির বিছানা বিছিয়ে খেলা দেখবেন বলে ফুটবলপ্রেমীরা বসে পড়েছে। বন্ধুবান্ধব ও পরিবার পরিজনসহ একসঙ্গে খেলা দেখতে বসেছে অনেকে। খোঁজ নিয়ে জানা যায় রাত ৮টার খেলা শেষ হওয়ার পর থেকেই মানুষ পর্দার সামনে বসে যেতে শুরু করে। পুরো মাঠ ভরা দর্শক। জানতে চাইলে কলোনির বাসিন্দা সরকারি চাকরিজীবী আলম হোসেন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এই মাঠে কমপক্ষে পাঁচ হাজার দর্শক আছে। সন্ধ্যার ম্যাচে আরো বেশি দর্শক ছিল। এখন অনেক রাত বলে লোকজন চলে গেছে। সামনে বসে খেলা দেখব বলে সেই ১১টার পর থেকে বসে আছি এখানে। ভালোই লাগছে, মনে হচ্ছে আর্জেন্টিনা জিতে গেছে!’
দুই গোল হজম করেই ব্রাজিল গেল বিরতিতে। বিরতির পরই অনেক ব্রাজিলের সমর্থক ভরসা ছেড়ে মাঠ ছেড়ে চলে যায়। এদের ভেতরে অনেকেই আর ফিরে আসেনি মাঠে। তাই বিরতির আগের সেই দর্শকভর্তি মাঠ কিছুটা হলেও যেন ফাঁকা হতে শুরু করল।
ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যায়ের সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিভাগের শিক্ষার্থী জহুরুল ইসলাম (২৬) বাসা থেকে দুটি শীতল পাটির বিছানা নিয়ে এসেছেন বন্ধুরা মিলে একসঙ্গে খেলা দেখবেন বলে। কাদার মধ্যেই পাটি বিছিয়ে বসে পড়েছেন। দুটি পাটিতে বসেছে ১৩ জন। পর্তুগালের ভক্ত জহুরুল ইসলাম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘বেলজিয়াম ভালো খেলেই জিতেছে। ব্রাজিল তার নিজস্ব গতিতে খেলতে পারেনি। তবে হেরে বরং ভালোই হয়েছে। ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনার ভক্তরা যা শুরু করেছিল ফেসবুকসহ সব স্থানে! তার একটা সমাধান হলো মনে হয়। এটারই হয়তো দরকার ছিল। আমি এই জয়ে ভীষণ খুশি। ট্যাগ লাগানো ফেবারিট কোনো দলই আর থাকল না বিশ্বকাপ মাঠে।’
নিউ মডেল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই বন্ধু এসেছেন খেলা দেখতে। খেলা শেষ হতেই সে কি কান্না! একে অপরকে জড়িয়ে ধরে নাহিদ হোসেন নামের একজন অপরজনকে বলতে থাকেন, ‘এটা কি হলো দোস্ত? তাই বলে এভাবে হেরে যাবে ব্রাজিল। সহ্য করতে পারছি না আর। আর খেলাই দেখব না এই বিশ্বকাপে।’
ব্রাজিলের ভক্ত রিয়াদ ইসলাম ও অন্তর বসেছেন পাটি বিছিয়ে খেলা দেখতে। খেলা শেষ হলে তাঁদের ভেতর রিয়াদ ইসলাম (২৪) নামের একজন বলেন, ‘খেলা নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না। আগামী চার বছরের জন্য এই দুই ঘণ্টা ভুলে যেতে চাই। বিশ্বকাপের মজাটাই শেষ হয়ে গেল আজ।’
৬০ বছরের এক বৃদ্ধ এসেছেন খেলা দেখতে। তিনি বলেন, ‘আজ কমপক্ষে ৩০ বছর ব্রাজিলকে সাপোর্ট করি। হারলেও ব্রাজিল, জিতলেও ব্রাজিল। তবে আজ খুব খারাপ লাগছে নেইমারের জন্য।’
আর্জেন্টিনার সমর্থক নাজনিন সেতারা (২৪) এসেছেন বন্ধুদের সঙ্গে খেলা দেখতে। খেলা শেষে তিনি বলেন, ‘কী যে ভালো লাগছে তা বুঝিয়ে বলা যাবে না। ব্রাজিলের আজ হারার খুব দরকার ছিল। সেটা শুধু আর্জেন্টিনার জন্য হলেও। তবে ব্রাজিল আজ খারাপ খেলেই হেরেছে।’
আর্জেন্টিনার সমর্থক রুদ্রনীল বিশ্বাস বলেন, ‘যে দলই হারুক চেয়েছিলাম ভালো একটি খেলা দেখব। তবে ব্রাজিলের কাছে যে প্রত্যাশা ছিল তা পূরণ করতে পারেনি তারা। তবে আমি খুশি। আগামী চর বছর অন্তত শান্তিতে থাকা যাবে। না হলে ব্রাজিলের সমর্থকদের মুখের সামনে টিকে থাকা দায় হয়ে দাঁড়াত।’