বুকভরা কষ্ট নিয়ে জেফ ক্রো আজ মিরপুরে

বৃহস্পতিবার মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে যখন ভারত ও সংযুক্ত আরব আমিরাত মুখোমুখি হচ্ছে, তখন ম্যাচ রেফারির রুমে বিষণ্ন মনে মাঠের দিকে তাকিয়ে আছেন জেফ ক্রো! অচেনা যে কারোই হয়তো প্রশ্ন জাগতে পারে হঠাৎ কী হলো এশিয়া কাপের চূড়ান্ত পর্বের ম্যাচ রেফারির।
আসল সত্যটা হলো, ছোট ভাই মার্টিন ক্রো চিরদিনের মতো না ফেরার দেশে চলে গেছেন আজই। অথচ ঠিক এই সময়ে পেশাগত কারণে বড় ভাই জেফ ক্রোকে বসে থাকতে হচ্ছে বাংলাদেশে। তাই হয়তো বিষণ্ন মনে ছোট ভাইয়ের সঙ্গে কাটানো হারানো দিনগুলোর স্মৃতিচারণা করছেন তিনি।
হ্যাঁ, নিউজিল্যান্ডের সদ্য প্রয়াত ক্রিকেট তারকা মার্টিন ক্রোর বড় ভাই জেফ ক্রো। যিনি নিজেও একসময় নিউজিল্যান্ড দলের অধিনায়ক ছিলেন, ১৯৮৬-১৯৮৭ মৌসুমে। এবারের এশিয়া কাপের চূড়ান্ত পর্বে ম্যাচ রেফারির দায়িত্ব পালন করছেন ১৯৮৩ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত কিউইদের হয়ে ৩৯টি টেস্ট ও ৭৫টি ওয়ানডে খেলা এই ক্রিকেটার।
তাই ভাইয়ের মৃত্যুর দিনেও তাঁকে ম্যাচে রেফারির দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। খেলা চলাকালীন সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলা বারন। তাই অনেক চেষ্টা করেও পাওয়া গেল না ভাইয়ের মৃত্যু নিয়ে তাঁর কোনো অনুভূতি।
অবশ্য তাঁর সঙ্গে কথা বলে আসা বিসিবি পরিচালক আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ববি জানিয়েছেন, 'ভাইয়ের মৃত্যুর সংবাদ শোনার পর থেকেই জেফ ক্রো ভারাক্রান্ত হৃদয়ে বসে আছেন। তবে তাঁর পেশাদারি আচরণে আমি রীতিমতো অভিভূত। আপনজনের মৃত্যুর সংবাদ শোনার পরও নিজের কর্মক্ষেত্রে বসে আছেন, বিষয়টা সত্যিই অবাক করার মতো ব্যাপার।'
দীর্ঘ চার বছর ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করে বৃহস্পতিবারই শেষ পর্যন্ত হার মৃত্যুর কাছে মানতে হলো মার্টিন ক্রোকে। নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেট-ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যানের বয়স হয়েছিল ৫৩ বছর।
১৩ বছরের ক্যারিয়ারে তাঁর কীর্তি কম নয়। চোটের কারণে ১৯৯৫ সালে অবসর নিতে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি। সে সময় দেশের হয়ে টেস্টে সর্বোচ্চ রান (৫,৪৪৪), ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ইনিংস (২৯৯), সবচেয়ে বেশি শতক (১৭টি) আর সবচেয়ে বেশি অর্ধশতকের (৩৫টি) রেকর্ড ছিল তাঁর দখলে।
৩৩ বছর বয়সে অকাল অবসরের মতো আরেকটা আক্ষেপ ছিল মার্টিন ক্রোর জীবনে। প্রথম নিউজিল্যান্ডার হিসেবে টেস্টে ত্রিশতকের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেও তিনি ‘ইতিহাস’ গড়তে পারেননি। ১৯৯১ সালে ওয়েলিংটনে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২৯৯ রানে আউট হওয়ার আক্ষেপ নিয়ে ফিরতে হয়েছিল তাঁকে।
শুধু টেস্ট নয়, ওয়ানডেতেও মার্টিন ক্রো ছিলেন সফল ব্যাটসম্যান। ১৪৩ ম্যাচে চারটি শতক, ৩৪টি অর্ধশতকসহ ৪,৭০৪ রান সে সাক্ষ্যই দিচ্ছে। ১৯৯২ বিশ্বকাপে মার্টিন ক্রোর বুদ্ধিদীপ্ত অধিনায়কত্ব আর দুর্দান্ত ব্যাটিং সেমিফাইনালে পৌঁছে দিয়েছিল কিউইদের। অকল্যান্ডের ইডেন পার্কে পাকিস্তানের বিপক্ষে সেমিফাইনালে ৮৩ বলে ৯১ রানের চমৎকার ইনিংস খেলে দলকে এনে দিয়েছিলেন ভালো সংগ্রহ।
তবে ইনজামাম-উল-হকের ঝড়ো ইনিংসের (৩৭ বলে ৬০ রান) কাছে হার মেনে ঘরের মাঠের বিশ্বকাপ থেকে হতাশা নিয়ে বিদায় নিতে হয়েছিল নিউজিল্যান্ডকে।