বাংলাদেশ কেন টেস্টে ব্যর্থ?

একটা সময় ছিল যখন ওয়ানডেতে পুরো ৫০ ওভার ব্যাটিং করাই ছিল বাংলাদেশের প্রধান চ্যালেঞ্জ। প্রতি ম্যাচে হারই ছিল অবধারিত। জয় পেলে সেটা বিবেচিত হতো ‘অঘটন’ হিসেবে। কিন্তু সেই সময় পেরিয়ে বাংলাদেশ এখন পরিণত হয়েছে সমীহ জাগানিয়া শক্তি হিসেবে। বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত গিয়ে আর পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করে সেটা প্রমাণও করেছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। কিন্তু ক্রিকেটের আদিতম ফরম্যাট, টেস্টে এখনো ঠিক খাপ খাইয়ে নিতে পারছেন না মুশফিক-তামিম-সাকিবরা।
ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে দাপুটে নৈপুণ্য দেখার পর বাংলাদেশের সমর্থকরা হয়তো আশা করেছিলেন যে এবার টেস্টে প্রথমবারের মতো জয়ের দেখা পাওয়া যাবে পাকিস্তানের বিপক্ষে। খুলনা টেস্টের প্রথম ইনিংসে চাপের মুখে পড়েও যেভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছিলেন তামিম-ইমরুল কায়েসরা, তাতে সেই স্বপ্ন আরো জোরদার হয়েছিল। কিন্তু ঢাকার শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে যারপরনাই হতাশ হতে হয়েছে বাংলাদেশকে। একদিন বাকি থাকতেই ৩২৮ রানের বড় ব্যবধানে জয় দিয়ে টেস্ট সিরিজ জিতে নিয়েছে পাকিস্তান। বাংলাদেশ যে এখনো টেস্টে অনভিজ্ঞ আর অপরিপক্ব থেকে গেছে সেটা যেন তাঁরা দেখিয়ে দিয়েছেন চোখে আঙুল দিয়ে।
২০০০ সালের নভেম্বরে অভিষেকের পর এ পর্যন্ত বাংলাদেশ খেলেছে ৯০টি টেস্ট। এর মধ্যে হেরেছে ৭১টিতে। ড্র করেছে ১২টি আর জয় এসেছে মাত্র সাতটি ম্যাচে। জয় পেয়েছে শুধু জিম্বাবুয়ে আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। বাংলাদেশের টেস্টে ভালো না করতে পারার পেছনে বেশি টেস্ট খেলার সুযোগ না পাওয়াকে দায়ী করেন অনেকে। পাঁচ দিনের ক্রিকেটে আরো ভালো করার জন্য ঘরোয়া ক্রিকেটকে আরো শক্তিশালী করার পরামর্শ দিয়েছেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু।
ঢাকা টেস্টে হতাশাজনক পরাজয়ের জন্য ব্যাটসম্যানদের দায়িত্বহীনতাকেও দায়ী করে নান্নু বলেছেন, ‘সাকিব আল হাসান ও মাহমুদউল্লাহকে উইকেট বিলিয়ে দেওয়া শট খেলতে দেখে খুব অবাক হয়েছি। একজন সিনিয়র খেলোয়াড় এমন করে আউট হলে জুনিয়ররা তাদের কাছ থেকে কী শিখবে?’
টেস্টে জয় পাওয়ার জন্য খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে হয় বোলারদের। সেখানেও বাংলাদেশের বেশ ঘাটতি আছে বলে মনে করেন নান্নু। বাংলাদেশের অন্যতম সেরা বোলার মাশরাফি বিন মুর্তজা আর পা রাখবেন না টেস্ট অঙ্গনে। তাঁর অভাব কেউ পূর্ণ করতে পারছেন বলে মনে হচ্ছে না। ইনজুরির কারণে ঢাকা টেস্টে খেলতে পারেননি রুবেল হোসেন। তাঁর পরিবর্তে দলে আসা শাহাদাত হোসেনও পড়েছিলেন ইনজুরির কবলে। ফলে টেস্টটা আসলে ১০ জনের দল নিয়েই খেলতে হয়েছে বাংলাদেশকে।
বেশি বেশি টেস্ট খেলার সুযোগ পেলে এবং ঘরোয়া ক্রিকেট আরো শক্তিশালী হলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ টেস্টেও ভালো নৈপুণ্য দেখাতে পারবে বলে আশা করাই যায়।