আগামীর ভ্রমণ ভাবনা

আমরা যাঁরা ভ্রমণ ভালোবাসি, কিছুদিন পরপর নতুন কোথাও ভ্রমণে না গেলে যাঁদের অস্থির লাগে, বিশেষ করে ভ্রমণ যাঁদের কাছে নেশার মতো হয়ে গেছে, তাঁদের জন্য এমন লম্বা সময় বাসায় বন্দি থাকা কতটা কষ্টের, অসহনীয়, অসহ্য—সেটা আমি প্রতিদিন অনুভব করছি। মনে মনে ২০২০-কে ভ্রমণের অন্যতম সেরা অর্জনের একটা সাল ধরে রেখেছিলাম। এ বছর অনেকগুলো চমৎকার ট্র্যাকসহ, ভারতে বাকি ছয়টা প্রদেশ ভ্রমণ শেষ করে ফেলে নিজের অন্যতম স্বপ্ন পুরো ভারত ভ্রমণের প্রশান্তি অনুভব করব ভেবেছিলাম।
কিন্তু এক অজানা, অচেনা আর অদ্ভুত ভাইরাস আমার সবকিছুই এলোমেলো করে দিয়েছে। শুধু আমার কেন, আমার মতো হাজারো, লাখো ভ্রমণপিপাসু মানুষের স্বপ্ন ভেঙেচুড়ে এলোমেলো করে দিয়েছে। সেইসঙ্গে ভ্রমণ খাতে জড়িয়ে যাঁদের জীবন-জীবিকা নির্বাহ হতো, তাঁদেরও শোচনীয় অবস্থা চলছে, সেটা স্পষ্ট।
তাই বলে কি মন খারাপ করে, হতাশ হয়ে বিষণ্ণতায় দিন কাটাব? মোটেই না। আমাদের এই সময়ের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে, অজানা শত্রুর সঙ্গে নিজেদের ধৈর্য দিয়ে লড়াই করে, পরাজিত করে একটি সুন্দর আগামীর জন্য অপেক্ষা করতে হবে। তবে হ্যাঁ, সেই আগামীটা আসছে ভ্রমণের দিনগুলো আগের মতো হবে না, এটা মাথায় রাখতে হবে খুব ভালোভাবে। আগামী ভ্রমণগুলোতে আমাদের সবাইকে যেসব মানসিক প্রস্তুতি নিতে হবে বলে আমার মনে হয়, সেগুলো হলো—

১. সবকিছু ঠিক হয়ে যাওয়ার পরও যেহেতু আগামী বেশ কিছুদিন আমাদের নিজেদের সুরক্ষার জন্য সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ভ্রমণ করতে হবে, তাই ভ্রমণ খরচ আর আগের মতো অল্প টাকায় হবে না বেশ কিছুদিন। বিশেষ করে বাস, ট্রেন, বিমান এসব বাহনের টিকেটের দাম বেশি হবে বলে মনে হচ্ছে, সামাজিক নিরাপত্তা মেনে কম টিকেট বিক্রি করতে হতে পারে। দেশের বাইরে গেলে পাবলিক ট্রান্সপোর্টের পরিবর্তে পুরো কার বা জিপ রিজার্ভ নিতে হতে পারে, নিজেদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তার জন্য।
তাই এই ঘরবন্দি সময়গুলোতে ঘরে না থেকে বেড়াতে গেলে যে অর্থ খরচ হতো, সেগুলো অযথা খরচ বা অপচয় না করে আগামীর ভ্রমণপিপাসা মেটানোর জন্য জমিয়ে রাখতে পারি। পারিবারিক ভ্রমণের জন্য আমি নিজে এটা করার চেষ্টা করছি।
২. হ্যাঁ, ভ্রমণে নানা রকম খরচ যেমন বেড়ে যেতে পারে, ঠিক তেমনি চাইলে এবং চেষ্টা করলে উল্টো আগের চেয়ে কম খরচেও ভ্রমণপিপাসা মেটানো যেতে পারে! অবাক হওয়ার কিছু নেই এটা খুবই সম্ভব। কীভাবে? বলছি।
আগামীর ভ্রমণ হতে পারে কোনো পাবলিক বাহন ছাড়াই! হ্যাঁ, পাবলিক পরিবহনের ঝুঁকি এড়িয়ে, আগের চেয়ে কম খরচে ভ্রমণ করতে চাইলে যেটা করতে হবে সেটা হলো, অনেক সাহসী, উদ্যমী, পরিশ্রমী আর আমার মতো অবাধ্য হলে একা অথবা সঙ্গী জুটিয়ে নিতে পারলে কয়েকজন মিলে সাইকেলেই চলে যেতে পারেন দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে।

এ ক্ষেত্রে সময় লাগবে অনেক অনেক বেশি। কিন্তু বাড়তি হিসেবে পাবেন পুরো দেশকে নিজের মতো করে দুচোখ ভরে দেখার আর একান্তে অনুভব করার অবারিত সুযোগ। লাগুক না অনেকটা বেশি সময়, হোক না অনেক কষ্ট, অল্প অল্প করে সাইকেলে করে যেকোনো কিছু দেখার মধ্যে যে আনন্দ পাওয়া যাবে, সেটা পাবলিক পরিবহনে কিছুতেই সম্ভব নয়।
আমি নিজে ব্যক্তিগতভাবে সলো ট্রিপ করে বা সঙ্গী পেলে এই অসীম সাহস, অনেক পরিশ্রম আর নিজের মতো করে নিজের দেশটাকে ধীরে ধীরে দেখার পক্ষে। পরিস্থিতি একটু ভালো হলেই সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়ার অপেক্ষায়। এমনকি দলবেঁধে দেশের বাইরেও করা যেতে পারে এমন ভ্রমণ। চাইলে অসম্ভব কিছুই নেই।
তাই যতটা সম্ভব ঘরে থাকুন। সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন আর সুন্দর আগামীর অপেক্ষা করুন।