করোনার পর ভারতের ১০ ভ্রমণ গন্তব্য

এই দীর্ঘ ঘরবন্দি সময়ে অনেকেই হাঁসফাঁস করছেন, সেটা বেশ ভালোভাবেই অনুভব করতে পারছি। কারণ আমি নিজেও একই দলের অন্তর্ভুক্ত। সেদিন দেশের মধ্যে কিছুটা কম ঝুঁকিপূর্ণ আর একটু নিরাপদ ভ্রমণের কয়েকটি আকর্ষণীয় স্থানের কথা লিখেছিলাম। কিন্তু যাঁরা পাসপোর্ট-ভিসা হাতে নিয়ে হাঁসফাঁস করছেন আর ভাবছেন পরিস্থিতি একটু ভালো হলে, বর্ডারটা খুলে দিলেই দৌড় দেবেন। তাঁদের জন্য কিছু কথা বলব।
নিজেকে যদি আরো কিছুদিন ঘরে বন্দি করে কিছুতেই রাখতে না পারেন, যদি দেশের বাইরে কোথাও যাবেন বলে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে আপনার প্রথম গন্তব্য হতে পারে হাতের কাছে ভারত। আর অবশ্যই খুব জনপ্রিয় বা দূর পথের কোনো ভ্রমণ গন্তব্য এড়িয়ে, তুলনামূলক কম ট্যুরিস্ট যায় কিন্তু কাছাকাছি কোনো জায়গা বেছে নিতে পারেন। সেখানে একা, পরিবার বা খুব কাছের কাউকে নিয়ে কয়েক দিন নিরাপদে, নিরিবিলি আর ঝুঁকিহীন কাটিয়ে আসতে পারেন। সেসব স্থান হতে পারে—

১. ত্রিপুরা : বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে কাছের গন্তব্য ত্রিপুরা এবং তুলনামূলক কম মানুষ এই রাজ্যে ভ্রমণ করে। অথচ প্রকৃতির নানা রকম উপহারের কোনো কমতি নেই এই রাজ্যে। পাহাড়, অরণ্য, নদী, নানা ঐতিহাসিক স্থাপত্য দর্শনের নিরাপদ আর ঝুঁকিহীন ভ্রমণ গন্তব্য হতে পারে ত্রিপুরা।
২. আসাম : সিলেটের তামাবিল পেরিয়ে মেঘালয়ে না থেমে সরাসরি চলে যেতে পারেন ভারতের আর একটা অপরূপ প্রকৃতির আধারে ভরা রাজ্য আসামে। যেখানে নেই লম্বা পথ পাড়ি দেওয়ার ভয়। আর নেই হাজারও ট্যুরিস্টের অবিরত কোলাহল। অথচ আছে অগণিত অপরূপ জলপ্রপাত আর বিখ্যাত অরণ্যের অদ্ভুত হাতছানি।
৩. মিজোরাম : নিরাপদে আর চুপিচুপি বেড়ানোর একটি লুকানো রত্ন বা রাজ্য মিজোরাম। একটু বেশি পথ পাড়ি দিতে হবে মিজোরামের রাজধানী আইজল যেতে হলে। কিন্তু দল করে গেলে আর জিপ রিজার্ভ নিলে নিরাপত্তার কোনো সমস্যা থাকবে না। যেখানে পেতে পারেন লুকানো নানা রকম রত্নের সন্ধান। যেগুলো গিয়ে, দেখে, নিজ থেকে আবিষ্কার করাই হবে অনেক বেশি রোমাঞ্চকর।

৪. ডুয়ার্স : জলপাইগুড়ি জেলার বিসৃত অঞ্চল জুড়ে ডুয়ার্স অরণ্যের অবস্থান। যে অরণ্যের ব্যাপ্তি জলাপাইগুড়ি ছাড়িয়ে চলে গেছে ভুটানের দ্বারপ্রান্তে। তাই তুলনামূলক কম পর্যটকের ভিড় থাকে এই অরণ্যে। অনেক পর্যটক গেলেও বিস্তৃত অঞ্চল বলে ঝুঁকি কম থাকবে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা যাবে অনায়াসে। তাই এটি হতে পারে অন্যতম ভ্রমণ গন্তব্য।
৫. রিশপ : ফুলবাড়ি বর্ডার পেরিয়ে, একটি কার বা জিপ রিজার্ভ করে পাঁচ-ছয় ঘণ্টার পথ পেরিয়ে খুব সহজেই চলে যেতে পারেন পাহাড়ের স্বর্গ, ছোট নির্জন পাহাড়ি গ্রাম রিশপে। যেখানে পাহাড়, অরণ্য, মেঘ, কুয়াশা আর রোদের লুকোচুরি খেলা ছাড়া আর কিছু নেই। নেই কোনো মানুষের কোলাহল, তার বদলে আছে পাখিদের কলকাকলি।
৬. টুমলিং : একটি ছোট্ট পাহাড়ি জনপদ। মাত্র কয়েকটি ঘর নিয়ে দুই পাহাড়ের ঠিক মাঝখানে গড়ে ওঠা এক অপূর্ব পাহাড়ি বসতি। যেখানে পাহাড়, মেঘ, কুয়াশা ছাড়াও দেখা মেলে অপরূপা কাঞ্চনজঙ্ঘার। সকালে, দুপুরে, বিকেলে, সন্ধ্যায় এমনকি রাতেও। তাই এটাও হতে পারে অন্যতম ভ্রমণ গন্তব্য।
৭. চুরুলিয়া : আমাদের জাতীয় কবি নজরুলের জন্মভিটা। যেখানে সাধারণত কম মানুষ যায়। বেশ অবহেলায়ই একাকী পড়ে আছে বলা যায়। কলকাতা থেকে চার ঘণ্টার দূরত্বের অখ্যাত আর অবহেলিত চুরুলিয়া থেকেও ঘুরে আসতে পারেন চাইলে।

৮. স্বচ্ছ নদীর গ্রাম : সোনাং পেডাং। সিলেট থেকে ভারতের সবচেয়ে কাছের গন্তব্য। যেখানে চাইলে সকালে গিয়ে সারা দিন থেকে সন্ধ্যায় বর্ডার বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগেও ফিরে আসা যায়।
৯. মিরিক : শিলিগুড়ি থেকে মাত্র এক ঘণ্টার দূরের মিরিক হতে পারে কোলাহলহীন, অল্প সময় ও খরচের একটি আদর্শ ভ্রমণ গন্তব্য।
১০. সান্দাকুফু : একটু বেশি রোমান্স, সঙ্গে অ্যাডভেঞ্চার চাইলে চলে যেতে পারেন সান্দাকুফু খুব সহজেই।
যে স্পটগুলোর কথা বলা হলো সবগুলোই অল্প সময়, খরচ আর তুলনামূলক নিরাপদ ভ্রমণ গন্তব্য।