পাঁচশ বছরের প্রাচীন ‘বেড় শিমুল’ গাছ ঘিরে কৌতূহল

পাঁচশ পুরোনো বিশাল আকৃতির একটি শিমুল গাছ দেখতে প্রতিদিনই শেরপুর জেলাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিপুল সংখ্যক দর্শণার্থীর সমাগম হয়। এটি শেরপুর জেলা শহর থেকে ৩০ কিলোমিটার আর নকলা উপজেলা থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে নারায়ণখোলা বাজারে অবস্থিত। ঢাকা থেকে এর দূরত্ব প্রায় ২০০ কিলোমিটার।
এই গাছের নিচে সারাক্ষণ লেগে আছে বিশ্বাসী মানুষদের আনাগোনা। এত বিশালাকৃতির এবং প্রাচীন শিমুল গাছ দেশের আর কোথাও নেই। ঐতিহাসিকভাবে প্রসিদ্ধ এ গাছটির চারদিকে বিশাল দেয়ালের মতো বেড়। তাই একে বেড় শিমুল গাছ বলা হয়।
গাছটির প্রাচীনত্বের কারণেই একে ঘিরে ছড়িয়ে পড়েছে নানা কল্পকথার গুণ কীর্তন। গাছটির বেড় প্রায় ১২০ ফুট। গোড়া থেকে কামরাঙ্গার শিরের মতো বেরিয়ে আসা আটটি শির ৮-১০ জন লোক বসে থাকার মতো ঘর তৈরি করেছে। মোটা মোটা ১০টি ডাল শাখা-প্রশাখা বিস্তার করে রয়েছে কয়েক শতাংশ জমি জুড়ে। গাছটির বয়স কেউ বলেছে ১২শ বছর, আবার কেউ বলেছে পাঁচশ বছর।
রহস্যে ঘেরা এ গাছটিকে একটু গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, গাছটির কাণ্ডের পশ্চিম পাশ হাতিসদৃশ, পূর্ব পাশ বাঘ ও সিংহসদৃশ, দক্ষিণ পাশ কুমিরসদৃশ, উত্তর পাশ নৌকার বৈঠা ও সাপসদৃশ, পূর্ব পাশ মানুষসদৃশ, উত্তর পূর্ব দিক হনুমানসদৃশ, দক্ষিণ-পূর্ব দিক জাতীয় স্মৃতিসৌধসদৃশ। এ ছাড়া আরো অনেক শৈল্পিক নিদর্শন রয়েছে এ গাছের শেকড় ও ডালপালায়। এ গাছের মূল ভেদ করে একটি কাঠাল গাছও বেড়ে উঠেছে। আশ্চর্যের বিষয় হলো- প্রায় একশ ফুট উচ্চতার বিশাল এ গাছটির যেকোনো একটি শাখা ধরে নাড়া দেওয়া হলে পুরো গাছটি ভূমিকম্পের মতো নড়ে উঠে।
প্রাচীন এই গাছটিকে নিয়ে গবেষণা করতে এসে অনেক বিদেশি পর্যটক, গবেষক ও বিজ্ঞানী গাছটির অংশবিশেষ কেটে নিয়ে গেছেন বলে জানা যায়। পর্যটকদের জন্য এই গাছের আশপাশে থাকা ও খাওয়ার সুব্যবস্থা করে থাকেন এলাকাবাসী। সম্প্রতি গাছটির চারপাশে আগত মানুষদের বসার জন্য পাকা বেঞ্চ তৈরি করে দিয়েছে শেরপুর জেলা পরিষদ।
পহেলা বৈশাখে এই বেড় শিমুল গাছকে ঘিরে মেলা বসে। এখানে অনেক অপরিচিত ব্যক্তি রোগমুক্তির আশায় গাছটিকে ঘিরে বিভিন্ন প্রকার মানতও করে থাকেন। আবার অনেকে আগরবাতি ও মোমবাতি জ্বালিয়ে রাখেন। প্রতি বছর মহররম মাসে এখানে মিলাদ-মাহফিলও অনুষ্ঠিত হয়।