দুঃখের নদী বিষখালী

বিষখালী বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ নদী। এটি বরিশাল বিভাগের ঝালকাঠি জেলায় অবস্থিত এবং মূলত কীর্তনখোলা নদীর একটি উপনদী হিসেবে পরিচিত। বিষখালী নদী পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে মিশেছে।
এ নদীর পশ্চিম তীরে রাজাপুর, কাঠালিয়া, বামনা, পাথরঘাটা এবং পূর্ব তীরে নলছিটি, বেতাগী ও বরগুনার ধলেশ্বর এবং পায়রা নদীর সংগে মিলিত হয়ে হরিণঘাটা নাম ধারণ করে সাগরে পতিত হয়েছে। এ নদীর দৈর্ঘ্য ৪০ মাইল এবং প্রস্থ্ ২ মাইল।
বিষখালী নদীর নামকরণ
বিষখালী নদীর নামকরণে আছে দুঃখের কাহিনী। যতদূর জানা যায়, একসময় বিষখালীর উত্তাল ঢেউয়ে কাঁঠালিয়া উপজেলার আমুয়া খালের গোড়ার অংশে ঝড়ে প্রায়ই নৌকা ডুবত। ফলে এখান থেকে মাঝিরা পারাপারের ক্ষেত্রে আগ্রহ দেখাতেন না।
এরপরও নদী পারাপারে অনেকে মাঝিদের পীড়াপীড়ি করত। তাদের প্রচণ্ড চাপে এক মাঝি নৌকা পাড়ি না দিয়ে আত্মহত্যা করেন। এ নিয়ে এলাকায় প্রবাদ প্রচলিত রয়েছে ‘বিষখাইলি তো পাড়ি দিলি না’। গল্পটা এখানেই শেষ নয়।
১৭৯৯ সালের গোড়ার দিকে বামনায় তালুক ছিল। তাদেরই একজন ১৮০০ সালে বরিশালের দুপাশা গ্রামের মাহমুদ শফি চৌধুরী কিংবা শফিজ উদ্দিন চৌধুরী চায়নিজদের সহায়তায় লবণের ব্যবসা শুরু করেন। তিনি বামনা উপজেলার উত্তর প্রান্তে একটি ছোট লবণ কারখানা স্থাপন করেন। এ চায়নিজদের নামের অনুকরণে নামকরণ হয় চেচাং। বিষ খাওয়া লোকটিকে দেখতে শত শত মানুষ উপস্থিত হয়। সর্বত্রই ছড়িয়ে পড়ে এ কাহিনী। সেই থেকেই ‘বিষখাইলি’ থেকে নাম হয় ‘বিষখালী’।
এছাড়া বিষখালী নদী সুগন্ধারই অংশবিশেষ ছিল বলে এর পানি এত বেশি লবণাক্ত ছিল যে, মানুষ পানি মুখে নিতে পারত না। কথিত আছে, দরবেশ নেয়ামত শাহের বোন চিনিবিবি হঠাৎ একদিন নদীতে নেমে ওই পানি মুখে দিয়ে তিন ঢোক গিলে ফেলেন এবং বলেন, পানির বিষ খাইয়া ফালাইলাম। সেই থেকে নদীর পানি মিষ্টি হয়ে যায়। এবং নদীর নামকরণ হয় বিষখাই থেকে বিষ খালি, অর্থাৎ বিষশূন্য।
বিষখালী নামকরণের ক্ষেত্রে মতভেদ থাকলেও এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে ইতিহাস, সভ্যতা, সংস্কৃতি এক মিশ্র অনুভূতি।