গরমকালে স্বল্প খরচে পাঁচ গন্তব্য

ষড় ঋতুর পরিক্রমায় গরমকাল কোন কোন ক্ষেত্রে ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত হয়ে দাঁড়ায়। সেখানে দেশের ভেতরেই এমন কিছু মনোমুগ্ধকর জায়গা আছে, যেখানে গরমকালে স্বল্প খরচে ভ্রমণ করা যায়। ভ্রমণের ষোলকলা পূর্ণ করতে রোদ-বৃষ্টির এই সময়ের সাথে সামঞ্জস্য রেখেই নির্বাচন করতে হবে সেই জায়গাগুলোকে।
যেকোনো দর্শনীয় স্থানের ক্ষেত্রেই সেখানকার বৈশিষ্ট্যের সাথে যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হয় তা হচ্ছে আবহাওয়া। নির্দিষ্ট কিছু সময়ে জায়গাগুলো নিজস্ব বিশেষত্ব নিয়ে চোখ জুড়ানো নিসর্গ রূপ ধারণ করে। তাই চলমান উষ্ণতায় চলুন খুঁজে নেয়া যাক বাংলাদেশের দারুণ কিছু ঘোরার জায়গা।
গরমকালে কম খরচে ভ্রমণের জন্য বাংলাদেশের ৫ দর্শনীয় স্থান
সিলেটের পাংথুমাই
সমগ্র বাংলাদেশের গ্রামগুলোর সৌন্দর্য্যের মধ্যে যদি তুলনা করা হয় তাহলে সবার উপরে থাকবে সিলেটের পাংথুমাই। জাফলং ইউনিয়নের সীমানায় গ্রামটি গাছের সবুজ, মেঘের ধূসর এবং জলপ্রপাতের চঞ্চলতার মেলবন্ধনে যেন এক অপরূপ নিসর্গ। খুব জোরে বাতাস বয়ে গেলে অপার্থিব গোঙানি গ্রামের শেষে গুহার উপস্থিতির জানান দিয়ে যায়।
কম খরচে ভ্রমণের জন্য ঢাকা থেকে সিলেটগামী ট্রেনের শোভন চেয়ার বুকিং করা যেতে পারে। অতঃপর সিলেট শহর থেকে মাইক্রোবাস রিজার্ভ নিয়ে থেকে পৌছানো যাবে পাংথুমাইয়ে। গোয়াইনঘাটের সালুটিকর অথবা জৈন্তাপুরের সারিঘাট উভয় পথেই একই দূরত্ব ও সময়ে খরচ হবে।
ভোলার মনপুরা
শহরের কোলাহল ও দাবদাহ থেকে এক নিমিষেই মুক্তি দিতে পারে মনপুরা। ভোলা জেলার নদী ও সাগরের মিলনস্থলে এক বিচ্ছিন্ন দ্বীপ মনপুরা। এখানকার পিন-পিতম নিরবতায় এক সূর্যাস্ত অথবা তারা ভরা রাতের সামীয়ানা এক জীবন্ত রূপকথার আমেজ দেবে।
এ দ্বীপে যেতে হলে ঢাকার সদরঘাট থেকে যেকোনো দিন বিকেলে উঠে পড়তে হবে হাতিয়ার লঞ্চে। সূর্যোদয়ের পর ঠিক সাড়ে ৭ টায় মনপুরা দ্বীপে নামিয়ে দেবে। ফিরতি লঞ্চ ধরতে হলে আপনাকে ঠিক দুপুর ২টায় অপেক্ষা করতে হবে মনপুরার রামনেওয়াজ লঞ্চঘাটে।
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল
একটি কুঁড়ি দুটি পাতার দেশে মন ভুলানো রুপের আধার শ্রীমঙ্গল। পাতা আর কুঁড়ির এই দেশ পাহাড় আর চা বাগানে ঘেরা আর সব সময়ই ভ্রমণপিপাসুদের জন্য এক আদর্শ স্থান। ৪০টি চা বাগানের এই উপজেলা কিছু হাইল-হাওর ছাড়া পুরোটাই চা বাগানে দখলে। মাইলের পর মাইল চা বাগান ছাড়াও এর দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে আছে নির্মাই শিববাড়ী ও লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান।
সিলেটের জাফলং
খাসিয়া জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে পিয়াইন নদী ঘেরা জাফলং যেন প্রকৃতির এক স্বপ্নীল খেয়াল। আনমনে কোন শিল্পী যেন তার নিপুণ হাতে এঁকে দিয়েছেন পাহাড়ের খাঁজে খাসিয়া পল্লী, পানির নিচের পাথর, আর পানের বরজ। কাছেই সংগ্রামপুঞ্জির রাস্তা ধরে এগোলে দেখা মিলবে দেশের প্রথম সমতল চা বাগান।
ট্রেনে চড়ে ঢাকা থেকে সিলেট নামার পর শিবগঞ্জ থেকে জাফলঙের বাস পাওয়া যাবে। শুধু জাফলং দেখার জন্য ভ্রমণসঙ্গী কম হোক বা বেশি হোক; এই ট্রেন ও বাসের যাতায়াত মাধ্যমটিই সাশ্রয় হবে।
নেত্রকোণার বিরিশিরি
চীনামাটির পাহাড় ঘেরা অপরুপ নীল হ্রদ দেখতে হলে যেতে হবে দুর্গাপুরের এই ঐতিহ্যবাহী গ্রামটিতে। হ্রদের নীল পানির ধারা শুরু হয়েছে সমেশ্বরী নদী থেকে। আশেপাশের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে আছে রানীখং গির্জা, কমলা রানীর দীঘি, পাহাড়ী কালচারাল একাডেমী, হাজংদের কিছু স্মৃতিস্তম্ভ এবং সেন্ট যোসেফের গির্জা।
ঢাকার মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে পাওয়া যাবে সুখনগরীর বাস। সুখনগরীতে নেমে উঠে পড়তে হয় নদী পারাপারের নৌকায়। তারপর আবার বাসে দুর্গাপুর।