‘আমি মরেই যেতাম, ভগবানের মতো এসে বাঁচালেন হাজি সাহেব’
সংঘর্ষ তখন চরম পর্যায়ে। কাঁদানে গ্যাসের ধোঁয়ায় চারদিক অন্ধকার। দাউদাউ করে জ্বলছে বাস। ছুটে আসছে ইট-পাথরের টুকরো। বিক্ষোভের আঁচে আক্ষরিক অর্থেই অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি। এর মধ্যেই ডিউটি করছিলেন ভারতের উত্তর প্রদেশ রাজ্যের পুলিশ সদস্য অজয় কুমার। পরিস্থিতির একপর্যায়ে আচমকাই একা হয়ে পড়েন। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের প্রতিবাদে বিক্ষোভরতদের রোষের মুখে পড়ে যান আচমকা। তাঁকে ঘিরে ধরেন বিক্ষোভকারীরা। মারতে থাকেন। ওই অবস্থায় ত্রাতা হয়ে হাজির হলেন এক ব্যক্তি। তাও আবার তিনি বিক্ষোভকারীদেরই একজন। চরম আক্রোশের সময়েও মুসলিম বয়োজ্যেষ্ঠ হাজি কাদির পালন করলেন মানবিকতার দায়িত্ব। তাঁকেই এখন ‘ভগবান’ বলে মানছেন অজয় কুমার নামের ওই পুলিশ সদস্য।
এখনো পুরোপুরি সুস্থ হননি। ঠিক এক সপ্তাহ আগে লক্ষ্ণৌতে প্রবল বিক্ষোভ চলাকালে সংঘাতের মুখোমুখি পড়ে যে চোট-আঘাত পেয়েছিলেন, তার ক্ষত এখনো দগদগে। হাতে প্লাস্টার করা। ঠিক কী হয়েছিল সেদিন? ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এএনআইর কাছে সে কথা বললেন অজয় কুমার নিজেই।
অজয় বললেন, ‘ভগবানের মতো এসেছিলেন হাজি সাহেব। ওই সময় ওই মানুষটা না এলে আমি মরেই যেতাম হয়তো। ইট-পাথর দিয়ে, লাঠি দিয়ে আমাকে মারছিল। একজন এসে আমাকে প্রায় জাপটে ধরে বাঁচালেন বিক্ষোভকারীদের হাত থেকে। একটি দোকানের মধ্যে নিয়ে গেলেন। পরে একটি মোটরসাইকেলে করে আমাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যান। পানি দেন, খাবার দেন। আমার হাতে মলম লাগিয়ে দেন। নিজের পোশাক বের করে দেন পরার জন্য। সুস্থ করে তোলেন আমাকে। ভগবান হয়ে এসেছিলেন তিনি, না এলে আমি জানে মারা পড়তাম।’
অজয় বলেন, ‘এমন মানুষ যে হতে পারে, আমি ভাবিনি। আমি আমার মৃত্যু চোখের সামনে দেখেছি, তিনি না এলে আমি কোনোভাবেই বাঁচতে পারতাম না। জানি না কোত্থেকে ফেরেশতা হয়ে চলে এলেন। আমাকে জাপটে ধরে দোকানের মধ্যে নিয়ে গেলেন।’
মুসলিম বয়োজ্যেষ্ঠ হাজি কাদির জানান, নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে প্রবল বিক্ষোভ চলছিল। তিনিও শামিল হয়েছিলেন প্রতিবাদে। কিন্তু মাঝে একসময়ে নমাজ পড়ার জন্য মসজিদে যান। তখনই শুনতে পান, বাইরে আচমকা ব্যাপক হৈচৈ হচ্ছে। বেরিয়ে দেখেন, এক পুলিশকর্মীকে ঘিরে ফেলেছে প্রতিবাদীরা।
হাজি কাদির বলেন, ‘আমি ওই পুলিশকে চিনতাম না। কিন্তু এটা জানতাম, তিনি তাঁর ডিউটি করছেন মাত্র। এই ক্ষুব্ধ জনতার মুখে পড়লে প্রাণে বাঁচাই কঠিন হবে তাঁর। তখনই ঝাঁপিয়ে পড়ি। সবাই খুব মারছিল। সবার হাত থেকে আড়াল করি ওই পুলিশকে। তখন তাঁর নামও জানতাম না আমি।’
হাজি কাদির বলেন, কেবল মানবিকতার খাতিরেই অচেনা ওই পুলিশকে রক্ষা করেছেন তিনি। আর পুলিশ সদস্য অজয় বলছেন, এই মানবিকতাই প্রাণ বাঁচিয়েছে তাঁর। হিংসা-বিদ্বেষের রাজনীতির জয়জয়কারের মধ্যে এ যেন এক অন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন হাজি কাদির।