ট্রাম্প ও ইরানের মধ্যে নতুন পরমাণু চুক্তির মধ্যস্থতা করতে চায় সৌদি
![](http://103.16.74.218/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2025/02/16/saudi.jpg)
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইরানের মধ্যে একটি নতুন পরমাণু চুক্তির জন্য মধ্যস্থতা করতে আগ্রহী সৌদি আরব। আজ রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন তাদের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
রিয়াদ আশঙ্কা করছে, তাদের আঞ্চলিক প্রতিপক্ষ ইরান পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের পথে এগিয়ে যেতে পারে। তাই, ট্রাম্পের সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে ইরান ও হোয়াইট হাউসের মধ্যে কূটনৈতিক সেতুবন্ধন করতে চায় সৌদি আরব।
তবে সৌদি আরব আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রস্তাব দিয়েছে কিনা, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে এই প্রচেষ্টা ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করতে রিয়াদের আগ্রহ এবং সম্ভাব্য নতুন চুক্তির আলোচনায় নিজেদের অবস্থান নিশ্চিত করার ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটায়।
ট্রাম্প আগেই নতুন চুক্তির বিষয়ে আলোচনা করতে চাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। তবে ইরানের পক্ষ থেকে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি গত সপ্তাহে বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসা "বুদ্ধিমানের কাজ নয়"।
সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর, সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানের মিশন কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
সৌদি-ইরান সম্পর্ক ও পরমাণু ইস্যু
২০১৫ সালে বিশ্ব শক্তিগুলোর সঙ্গে ইরানের সম্পাদিত পরমাণু চুক্তিকে প্রকাশ্যে সমর্থন জানালেও সৌদি আরব গোপনে এই চুক্তির বিরোধিতা করেছিল। তাদের অভিযোগ ছিল, ওবামা প্রশাসন ইরানের আঞ্চলিক কার্যক্রম, বিশেষ করে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি এবং হুথি বিদ্রোহীদের মতো প্রক্সিদের নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে যথেষ্ট পদক্ষেপ নেয়নি।
২০১৮ সালে ট্রাম্প প্রশাসন একতরফাভাবে ওই চুক্তি থেকে বেরিয়ে গেলে রিয়াদ এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানায়। তবে এর এক বছর পর সৌদি আরবের তেল স্থাপনায় ভয়াবহ ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়, যা দেশটির তেল উৎপাদনের অর্ধেক হ্রাস করে দেয়। ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা এই হামলার দায় স্বীকার করলেও যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি ইরানকে দায়ী করে। তবে শেষ পর্যন্ত ওয়াশিংটন সামরিক প্রতিক্রিয়া দেখায়নি।
কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সৌদি-ইরান সম্পর্ক উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হয়েছে। ২০২৩ সালের মার্চে চীনের মধ্যস্থতায় দুই দেশ কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের ঘোষণা দেয়। এর ফলে সৌদি আরবে হুথি বিদ্রোহীদের হামলা বন্ধ হয়েছে এবং ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনার মধ্যেও সৌদি আরব আঞ্চলিক সংঘাত এড়াতে সক্ষম হয়েছে।
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/very_big_1/public/images/2025/02/16/saudi_inner.jpg)
ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া ও সম্ভাব্য চুক্তি
দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ট্রাম্প বলেছেন, তিনি ইরানের সঙ্গে নতুন একটি চুক্তি করতে চান। তবে তিনি এখনো দেশটির ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা বজায় রেখেছেন।
সম্প্রতি ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যাল-এ লিখেছেন, "আমি চাই ইরান একটি মহান এবং সমৃদ্ধ দেশ হোক, তবে এমন একটি দেশ নয় যা পারমাণবিক অস্ত্র ধারণ করবে।"
ট্রাম্প আরও বলেন, "আমি নিশ্চিত চুক্তি চাই, যাতে ইরান শান্তিপূর্ণভাবে বিকশিত হতে পারে। আমাদের এখনই কাজ শুরু করা উচিত এবং চুক্তি স্বাক্ষর হলে মধ্যপ্রাচ্যে একটি বড় উৎসবের আয়োজন করা উচিত।"
ইরানের অর্থনীতি বর্তমানে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ভয়াবহ মন্দার মধ্যে রয়েছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান, যিনি বৈশ্বিক সম্পর্ক উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন, ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি, বেকারত্ব এবং বিদ্যুৎ ঘাটতির কারণে অভ্যন্তরীণ চাপের মুখে রয়েছেন।