উত্তাল ভারত, বেড়েই চলছে হতাহতের সংখ্যা

নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ফের প্রতিবাদ সমাবেশে থমথমে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিসহ বিভিন্ন রাজ্য। বিতর্কিত এই আইনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রাজ্যে পুলিশ-বিক্ষোভকারী সংঘর্ষে বাড়ছে হতাহতের সংখ্যা। এরই মধ্যে উত্তরপ্রদেশে ১৫ জনসহ দেশটিতে সপ্তাহজুড়ে ঝরেছে ২৫ প্রাণ। এ ছাড়া অন্তত ২৭০ পুলিশ সদস্যসহ বহু বিক্ষোভকারী আহত হয়েছেন। এরই মধ্যে সাড়ে চার হাজারের বেশি বিক্ষোভকারীকে আটক করেছে পুলিশ। এদিকে, নতুন নাগরিকত্ব আইনটিকে অন্যায্য বলেছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ।
নতুন আইনের বিরুদ্ধে অন্যান্য রাজ্যের পাশাপাশি শনিবার সবচেয়ে বেশি বিক্ষোভ হয় রাজধানী নয়াদিল্লি ও উত্তরপ্রদেশ রাজ্যে।
উত্তরপ্রদেশ
গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবারের সহিংস বিক্ষোভের পর শনিবারও উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন রাজ্যে অব্যাহত ছিল বিক্ষোভ। পুলিশ-জনতা সংঘর্ষে তপ্ত হয়ে ওঠা রাজ্যটিতে তিন দিনে নিহত হয়েছেন অন্তত ১৫ জন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে উত্তরপ্রদেশের অন্তত ১৬ জেলায়। বন্ধ রয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবা। রাজ্যটিতে তিন হাজারেরও বেশি প্রতিবাদকারীকে আটক করা হয়েছে।

বিহার
উত্তরপ্রদেশের মতো তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে বিহার রাজ্যেও। বিহারে রাষ্ট্রীয় জনতা দল ও কংগ্রেসের নেতৃত্বে বিভিন্ন রাস্তায় অবরোধের মাধ্যমে অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষোভকারীরা।
নয়াদিল্লি
এদিকে নতুন করে বিক্ষোভ দানা বাঁধে দিল্লির জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে। শনিবারের এই বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে পুলিশ-বিক্ষোভকারী সংঘর্ষে তিনজন নিহতের প্রতিবাদও জানানো হয়। শীতের দিল্লিতে উত্তাপ বাড়াতে আজ রোববার নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনবিরোধী মিছিলে রাজপথে নামছেন কংগ্রেসের সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী।
পশ্চিমবঙ্গ
পশ্চিমবঙ্গে বিশাল মিছিল বের করেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ও নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) বিরোধী পোস্টার-প্ল্যাকার্ড ও স্লোগানে প্রতিবাদ জানান তাঁরা।
আসাম ও কর্ণাটক
শনিবার আসাম রাজ্যের গুয়াহাটিতে বিক্ষোভে যোগ দেন হাজারো নারী। এ ছাড়া কর্ণাটক রাজ্যে বিক্ষোভ দমনে মোতায়েন করা হয় বিপুল আধা-সামরিক বাহিনীর সদস্য।
বিজেপি
বেড়ে চলা বিক্ষোভের মধ্যে নতুন আইন সম্পর্কে নাগরিকদের বোঝাতে জনসংযোগের পথে হাঁটার ঘোষণা দিয়েছে শাসকদল বিজেপি।
এদিকে রক্তক্ষয়ী বিক্ষোভ থামানোর পথ খুঁজতে আইনশৃঙ্খলাজনিত বিষয়াদি নিয়ে গতকাল শনিবার মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, চলমান বিক্ষোভ হিন্দু জাতীয়তাবাদী মোদি সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় সংকটগুলোর একটি।
মাহাথিরের নিন্দা
এদিকে মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে ইসলামী সম্মেলনে ভারতের নতুন নাগরিকত্ব আইনের নিন্দা জানান দেশটির প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ।
মাহাথির মোহাম্মদ বলেন, ‘ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র ভারতের জন্য এটা খুবই দুঃখজনক। দেশটির মূল সংবিধানে ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে নাগরিকত্ব পেতে কোনো প্রতিবন্ধকতা ছিল না। মুসলিমদের বাদ দিয়ে ভারতের নাগরিকত্ব আইনটি অন্যায্য।’
এদিকে মাহাথিরের এই মন্তব্য সত্য নয় দাবি করে মালয়েশিয়াকে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক না গলাতে বলছে নয়াদিল্লি।