কাবুলে বন্ধ দোকানপাট, প্রাণ বাঁচাতে পালাচ্ছে মানুষ
![](http://103.16.74.218/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2021/08/16/biakfiw6qvkxhdrkohajyli5lm_0.jpg)
তালেবান বিনাযুদ্ধে আফগানিস্তানের রাজধানীর নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পরদিন সকালে কাবুলের রাস্তাগুলো ছিল জনশূন্য, দোকানপাট বন্ধ ছিল আর নগরীর নিরাপত্তা রক্ষীদের খোঁজ মেলেনি।
সোমবার সকালে শহরে এমন চিত্র দেখা গেলেও বিপরীত চিত্র ছিল কাবুল বিমানবন্দরে। সেখানে শত শত আফগান জড়ো হয়ে বিভিন্ন ফ্লাইটে দেশ থেকে পালানো চেষ্টা করছিল বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসা বেশ কয়েকটি ভিডিওতে গুলির শব্দের মধ্যে শত শত লোককে তাদের মালপত্রসহ নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে বিমানবন্দরের টার্মিনালের দিকে দৌড়ে যেতে দেখা গেছে; তবে এসব ভিডিও যাচাই করতে পারেনি রয়টার্স।
সেখানে অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। তবে তারা গুলিতে না ভিড়ের চাপে পিষ্ট হয়ে মারা গেছেন তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।
কাবুলের সরকারি দপ্তরগুলো ফাঁকা পড়ে আছে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন। প্রায় সব কূটনীতিক তাদের পরিবার নিয়ে শহরটি ছড়ে চলে যাওয়ায় নগরীর ওয়াজির আকবর খান কূটনৈতিক এলাকা জনশূন্য হয়ে আছে।
এমনিতে অত্যন্ত সুরক্ষিত এই এলাকাটির চেকপয়েন্টগুলোতে এখন অল্প কয়েকজন রক্ষী আছেন। কিছু গাড়িচালক নিজেরাই গাড়ি থেকে বের হয়ে চেকপয়েন্টের বাধা সরিয়ে গন্তব্যের পথে রওনা হন।
![](http://103.16.74.218/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2021/08/16/capture_1.jpg 511w)
এই এলাকায় নিজের নান রুটির দোকানে বসা গুল মোহাম্মদ হাকিম বলেন, ‘এখানে বসে ফাঁকা রাস্তা দেখতে অদ্ভুত লাগছে, দূতাবাসের ব্যস্ত গাড়িবহর, মেশিনগান বসানো বড় বড় গাড়ি আর নেই।
‘রুটি বানাতেই এখানে এসেছি, কিন্তু আয় তেমন একটা হবে না। যে নিরাপত্তা রক্ষীরা আমার বন্ধু ছিল তারা চলে গেছে।’
সে সময় পর্যন্ত কোনো ক্রেতার দেখা পাননি হাকিম, কিন্তু তাদের অপেক্ষায় চুলা জ্বালিয়ে রেখেছেন।
‘আমার প্রথম কাজ হচ্ছে দাঁড়ি রাখা, কীভাবে এগুলোকে দ্রুত বাড়ানো যায় তা নিয়ে উদ্বিগ্ন আমি। স্ত্রী ও মেয়েদের জন্য যথেষ্ট বোরকা আছে কিনা তাও দেখে রেখেছি আমরা,’ বলেন হাকিম।
১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত তালেবান আমলে পুরুষদের দাঁড়ি কাটার অনুমতি দেওয়া হতো না এবং নারীদের জনসম্মুখে আপাদমস্তক বোরকা ঢাকা অবস্থায় চলাফেরা করতে হতো।
নগরীর চিকেন স্ট্রিটের সব দোকান বন্ধ ছিল। এখানে আফগানিস্তানে তৈরি কার্পেট, হস্তশিল্প ও অলঙ্কারের দোকানের পাশাপাশি ছোট ছোট ক্যাফে আছে।
এখানে একটি কার্পেট ও কাপড়ের দোকানের মালিক শেরজাদ করিম স্টানেকজাই জানান, মালপত্র রক্ষার জন্য দোকানের শাটার ফেলে ভেতরে ঘুমিয়ে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।
‘আমি পুরোপুরি মর্মাহত অবস্থায় আছি। তালেবান শহরে প্রবেশ করায় আমি শঙ্কিত, কিন্তু আমাদের সবাইকে এই অবস্থায় ফেলে রেখে (প্রেসিডেন্ট আশরাফ) ঘানির চলে যাওয়াটাই সবচেয়ে খারাপ হয়েছে,’ বলেন তিনি।
‘এই যুদ্ধে সাত বছরে তিন ভাইকে হারিয়েছি আমি, এখন আমাকে আমার ব্যবসা রক্ষা করতে হবে।’
পরবর্তী ক্রেতা কোথা থেকে আসবেন সে বিষয়ে তাঁর কোনো ধারণা নেই বলে জানান শেরজাদ করিম।