ভারতজুড়ে বিক্ষোভ বেড়েই চলেছে, হিমশিম খাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বাতিলের প্রতিবাদে টানা পঞ্চমদিনের মতো বিক্ষোভে উত্তাল ভারতের বিভিন্ন রাজ্য। দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলো থেকে শুরু হওয়া এ বিক্ষোভ ক্রমেই দানা বাঁধে অন্য রাজ্যগুলোতে। উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ছে রাজধানী নয়াদিল্লিতেও। বাস-ট্রেনসহ বিভিন্ন সরকারি কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হচ্ছে। এরই মধ্যে আসামের বিক্ষোভে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ছয়জনে। নিহতের সংখ্যা বাড়লেও তাতে বিক্ষোভ থেকে সরে যাচ্ছে না মানুষ, বরং বিক্ষোভের মাত্রা আরো বেড়েছে। আর এসব বিক্ষোভ ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছে দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এদিকে পশ্চিমবঙ্গ, মেঘালয়, ত্রিপুরায়ও বিক্ষোভ দানা বেঁধে উঠেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনা মোতায়েনের পাশাপাশি এই রাজ্যগুলোতে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
নয়াদিল্লি
বিক্ষোভে উত্তাল রাজধানী নয়াদিল্লি। এরই মধ্যে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে মেট্রোরেল। এদিকে গতকাল রোববার নিউ ফ্রেন্ডস কলোনি এলাকায় জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল, লাঠিপেটা ও গুলিবর্ষণ করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসেও অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করে পুলিশ।
পুলিশের অভিযোগ, রোববার বিকেলে একের পর এক বাসে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। যদিও এ অভিযোগ অস্বীকার করছে শিক্ষার্থীরা।
আসাম
পাঁচ দিন ধরে চলা কারফিউ ভেঙে ব্যাপক বিক্ষোভ চলছে আসাম রাজ্যে। বিক্ষোভ ঠেকাতে হাজারো সেনা মোতায়েনের পাশাপাশি ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করা হয়েছে পাঁচ দিন আগেই। তবু হালে পানি পাচ্ছে না ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার। বিক্ষোভকারীরা পুলিশের গুলিতে নিহত হলেও বিক্ষোভ থেকে সরে যাচ্ছে না মানুষ। এমন পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ আসাম সফর বাতিল করেছেন।
বার্তা সংস্থা এএফপি বলছে, রোববারও পাঁচ হাজার বিক্ষোভকারী গুয়াহাটির রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছে। এ সময় পুলিশ লাঠিপেটা, কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ ও গুলি ছোড়ে। পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ, তা স্পষ্ট না হলেও আসামে ট্রেন ও বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে বলে জানা গেছে।
আসামের চলমান বিক্ষোভে ঘি ঢালতে বিজেপি, আসাম গণপরিষদ ও কংগ্রেসবিরোধী নতুন রাজনৈতিক দল গড়ছে অল আসাম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (আসু)। রোববার গুয়াহাটিতে এক জনসমাবেশে এই ঘোষণা দেন আসুর নেতারা। দাবি তোলেন, মুসলিমবিরোধী নাগরিকত্ব আইন বাতিলের।
পশ্চিমবঙ্গ
টানা তৃতীয় দিন পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্ষোভকারীরা জাতীয় সড়ক অবরোধ করে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। এ ছাড়া রেলপথও অবরোধ করে রেখেছে তারা। রেল কর্তৃপক্ষ বলছে, বহু দূরপাল্লার ট্রেনযাত্রা বাতিল করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দিয়েছে রাজ্য সরকার।
মেঘালয়
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মেঘালয়ের শিলংসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ হয়েছে। রাজ্য ভবন ঘেরাও কর্মসূচিতে পুলিশের লাঠিপেটা, কাঁদানে গ্যাসের শেল ও গুলিতে আহত হয়েছে অর্ধশত মানুষ।
ত্রিপুরা
আরেক উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ত্রিপুরায়ও এ আইনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ হয়েছে। ত্রিপুরার শিক্ষার্থীরা নয়াদিল্লির বিক্ষোভেও যোগ দিয়েছে।
মোদি
এদিকে, ভারতজুড়ে অস্থিরতার জন্য জাতীয় কংগ্রেসকে দায়ী করছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। গতকাল ঝাড়খণ্ড রাজ্যের দুমকায় এক জনসভায় মোদি বলেন, ‘মুসলিমবিরোধী কোনো আইন না হলেও কংগ্রেস মুসলিমদের উসকে দিচ্ছে। আপনার সন্তান, আপনার পরিবার, আপনার ভবিষ্যৎ, আপনার সমস্যায় তাদের কোনো যায় আসে না।’ পাশাপাশি আসামবাসীকে বিক্ষোভ বন্ধ করারও আহ্বান জানান মোদি।