ভারতের জিডিপির বৃদ্ধির হার আরো কমল

ভারতের অর্থনীতিতে রীতিমতো লাল সতর্কতা দেখা দিয়েছে। চলতি অর্থ বছরের ভারতের জিডিপি বৃদ্ধির হার আরো কমে চার দশমিক পাঁচ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। যা গত ছয় বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে ভারত অর্থনীতিতে কোমায় চলে গেছে বলে কটাক্ষ করতে শুরু করেছে জাতীয় কংগ্রেস। যদিও মোদি সরকারের দাবি, সব কিছুই ঠিকঠাক আছে। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে দাবি করা হয়েছে, চলতি অর্থবছরের তৃতীয় ত্রৈমাসিকেই বাড়বে ভারতের জিডিপি বৃদ্ধির হার।
আগামী ২০২৪ সালের মধ্যে পাঁচ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতির স্বপ্ন দেখাচ্ছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। যদিও সেই স্বপ্নের মধ্যেই কার্যত আরো তলিয়ে যাচ্ছে ভারতের আর্থিক পরিস্থিতি। বিশ্বব্যাংক ও রিজার্ভ ব্যাংকের মতো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, চলতি অর্থবছরে আর্থিক বৃদ্ধির পূর্বাভাস ৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে গড়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। গত শুক্রবার প্রকাশিত সিএসওর সরকারি তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে আর্থিক বৃদ্ধির হার ০.৪৫ শতাংশ। যেখানে গত অর্থ বছরে দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে আর্থিক বৃদ্ধির হার ছিল ৭ শতাংশ।
পাশাপাশি, চলতি অর্থবছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে আর্থিক বৃদ্ধির হার ছিল ৫ শতাংশ। ভারতের ২০১২-১৩ অর্থবছরের শেষ ত্রৈমাসিকে শেষবার আর্থিক বৃদ্ধির হার তলানিতে নেমে দাঁড়িয়েছিল ৪ দশমিক ৩ শতাংশে।
বিশ্ব অর্থনীতিতে ঢিমে গতি, রপ্তানি কম, দেশে নতুন বিনিয়োগের অভাব, চাহিদার অভাব, কর্মী ছাঁটাই এসবের জেরেই আর্থিক বৃদ্ধির হার ক্রমেই কমছে বলে মনে করছেন অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা।
সিএসওর তথ্য বলছে, দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে সাধারণ ব্যবসা, পরিবহন, টেলিযোগাযোগ, পর্যটন, আবাসনের মতো নানা ক্ষেত্রে বৃদ্ধির হার ৪.৩ শতাংশ। কৃষি ক্ষেত্রে বৃদ্ধির হার মাত্র দুই শতাংশ। খনিশিল্পে যা প্রায় শূন্যে এসে দাঁড়িয়েছে।
ভারতে আর্থিক বৃদ্ধির বদলে চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে উৎপাদন ক্ষেত্র ১ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে। বিকাশ হার কমলেও ভারতের কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন দেশের এই আর্থিক মন্দা মানতে নারাজ। ভারতের আর্থিক বাজার চাঙ্গা করতে বিশেষ করে করপোরেট কর ব্যবস্থায় বড় ছাড়, ব্যাংক সংযুক্তি, আবাসন ক্ষেত্রকে সুবিধা দানসহ একাধিক পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন। কিন্তু তারপরও জিডিপি পতন রোখা যাচ্ছে না।
ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের অভিযোগ, আসল অসুখ সারছে না। কারণ কেন্দ্রীয় সরকার অসুখ মানতেই চাইছে না।
সরকার বলছে, ভারতের অর্থনীতির মৌলিক বিষয়গুলো এখনো একইরকম শক্তিশালী। তৃতীয় ত্রৈমাসিক থেকেই আর্থিক বৃদ্ধির হার বাড়বে।
এদিকে সিএসওর রিপোর্টে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসেই রাজস্ব ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১০২.৪ শতাংশ। সরকারি খরচের চেয়ে কর আদায় বহুগুণ কম। ফলে চিন্তা আরো বাড়ছে। ভারতের গত ছয় বছরে দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক অর্থনীতির হার সর্বনিম্নে পৌঁছে যাওয়ার পাশাপাশি বাড়ছে পাল্লা দিয়ে কর্মী ছাটাই।
ভারতের ২০১৪ সালে লোকসভা ভোটের আগে প্রতি বছর দুই কোটি কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদি। কিন্ত তিনি সরকারে আসার পর থেকে ভারতে কর্মসংস্থানের বাজার ক্রমশই নিম্নমুখী। মোদির জমানাতেই বেকারত্বের হার বেড়েছে ৬.১ শতাংশে। ভারতে গত ৪৫ বছরে বেকারত্ব ছুঁয়েছে সর্বোচ্চ জায়গায়।
তথ্য বলছে, ভারতে ২০১৪ সাল থেকে বিভিন্ন উৎপাদন ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত কর্মী ছাটাই হয়েছে ৩৫ লাখ। যার মধ্যে ৭৫ হাজার কর্মীকে স্বেচ্ছায় অবসর নিতে বাধ্য করেছে দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ব সংস্থা বিএসএনএল (ভারত সঞ্চার নিগম লিমিটেড)। চলতি বছরের এপ্রিল মাস থেকে ভারতের অটো সেক্টরে কাজ হারিয়েছে তিন লাখ মানুষ। এ ছাড়া তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে ৪০ লাখ কর্মী ছাটাইয়ের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। সব মিলিয়ে ভারতের অর্থনীতি এককথায় বলা যায় রীতিমতো হুমকির মুখে দাঁড়িয়ে।