ভারতের লোকসভায় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাস

ভারতের লোকসভায় পাস হয়েছে বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল-সিএবি। গতকাল সোমবার দীর্ঘ ১২ ঘণ্টা বিতর্কের পর মধ্যরাতের দিকে পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে বিলটি পাস হয়। এ সময় বিলের পক্ষে ভোট দেন ৩১১ জন। বিপক্ষে ভোট দেন ৮০ এমপি। আগামীকাল বুধবার বিলটি রাজ্যসভায় তোলা হবে। সেখানে পাস হলেই এটি আইনে পরিণত হবে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস এ খবর জানিয়েছে।
বিল পাসের প্রতিক্রিয়ায় দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানান, বিলটি পাস হওয়ার ফলে প্রতিবেশী দেশের অমুসলিম শরণার্থীরা ভারতের নাগরিকত্ব পাবেন। সেইসঙ্গে দেশের মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের কোনো সমস্যা হবে না বলেও আশ্বস্ত করেন তিনি।
অমিত শাহ আরো বলেন, শিগগিরই পুরো ভারতকে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি বা এনআরসির আওতায় নেওয়া হবে।
এর আগে গত দুপুরে বিলটি উত্থাপন করেন অমিত শাহ। এদিকে বিল পাসের পর অভিনন্দন জানিয়ে টুইট করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। যাঁরা বিলের পক্ষে ভোট দিয়েছেন, তাঁদের ধন্যবাদও জানান তিনি।
এই বিলের সংশোধনীর ফলে পাকিস্তান, আফগানিস্তান, বাংলাদেশের হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, পার্সি ও খ্রিস্টানরা ভারতের নাগরিকত্ব পেয়ে যাবেন। তবে নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য ভারতে অন্তত তাঁদের পাঁচ বছর বসবাস করতে হবে।
আগের নিয়ম অনুযায়ী, ভারতের নাগরিকত্ব পেতে গেলে অন্তত ১১ বছর ভারতে থাকতে হতো।
এদিকে গতকাল পার্লামেন্টে বিতর্কে অংশ নিয়ে কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী বলেন, ‘নাগরিকত্ব সংশোধন বিলটি অসাংবিধানিক। প্রথমত, সংবিধানের ১৪ নম্বর ধারা তা লঙ্ঘন করছে। ওই ধারায় সমান অধিকারের কথা বলা হয়েছে। তা ছাড়াও সংবিধানের ৫, ১০ ও ১৫ নম্বর ধারা লঙ্ঘন করছে এই বিল।’
তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বিলের বিপক্ষে জোরালো বক্তৃতা দিয়ে বলেন, ‘এনআরসি এবং নাগরিকত্ব বিল—দুটোই বিজেপির ফাঁদ। পুরো দেশে বিভাজনের পরিবেশ তৈরি করতে চাইছে তারা।’
আসাদউদ্দিন ওয়াইসি বলেন, ‘ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলছে সরকার। এরপর ভারতের মুসলিমদের আর দেশ থাকবে না।’
এসব বিরোধিতার জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেন, ‘এই বিল ০.০১ শতাংশই মুসলিমবিরোধী নয়। ভারতের সংখ্যালঘুদের অভয় দিয়ে বলছি, নরেন্দ্র মোদি যতদিন ক্ষমতায় রয়েছেন, আপনাদের ভয়ে ভয়ে থাকার কোনো কারণ নেই।’
অমিত শাহ দাবি করেন, ‘ধর্মের ভিত্তিতে ভারত ভাগ করেছে কংগ্রেস। নেহরু-লিয়াকত চুক্তির মাধ্যমে তা করা হয়েছে। ধর্মের ভিত্তিতে দেশ ভাগ না হলে এই পরিস্থিতিই কখনো আসত না।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যুক্তিসংগত শ্রেণিবিন্যাসের মাধ্যমে পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে আসা ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। মুসলিমরা ওই তিন দেশে সংখ্যালঘু নয়। বরং ওই তিন দেশই ইসলামিক রাষ্ট্র। সেখানে মুসলিমদের ধর্ম পালনে কোনো বাধা নেই। বরং নিগৃহীত হয়েছেন হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, পার্সি, শিখ, জৈনরা।’
এরপরও পাকিস্তান, আফগানিস্তান থেকে আসা মুসলিমরা নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারেন বলে জানান অমিত শাহ। তিনি বলেন, ‘তা বিবেচনা করে দেখা হবে। তবে রোহিঙ্গাদের কোনোভাবেই ভারতে ঢুকতে দেওয়া হবে না। কারণ, মিয়ানমার হলো ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ হয়ে ভারতে ঢুকতে চাইছে।’
এদিকে নাগরিকত্ব সংশোধন বিলে সমর্থন করে শিবসেনা। লোকসভায় শিবসেনার নেতারা দাবি করেন, বালাসাহেব ঠাকরে আগে থেকেই বেআইনি অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে ছিলেন।
এদিকে, এ বিলের প্রতিবাদে আজ মঙ্গলবার ১১ ঘণ্টার ‘বনধ’ ডেকেছে ভারতের নর্থ ইস্ট স্টুডেন্টস ইউনিয়ন। তাদের দাবি, বিলটি ১৯৮৫ সালের আসাম চুক্তিবিরোধী। ওই চুক্তিতে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চ পর্যন্ত জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে যাঁরা ভারতে এসেছেন, তাঁরা নাগরিকত্ব পাবেন। যে কারণে এই বিলের বিরোধিতা করে রাস্তায় নামার হুমকি দিয়েছে আসামের বেশ কয়েকটি ছাত্রসংগঠন। অন্যদিকে, বিলটির বিরোধিতায় সরব হয়েছে ভারতের জাতীয় কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস ও সিপিএম।
কংগ্রেস নেতা শশী থারুর বলেন, ‘সব ধর্মের মানুষকে নাগরিকত্ব দেওয়া হলে তা মেনে নেব। কিন্তু ধর্মের ভিত্তিতে কাউকে নাগরিকত্ব দেওয়া হলে, তার বিরোধিতা করব। এই বিল একেবারে অসাংবিধানিক।’
পাশাপাশি বিলটির বিরোধিতা করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।