মল্লযুদ্ধ শেষে চিকিৎসা করাতে নিজেই ওষুধের দোকানে ছুটল হনুমান!

মল্লযুদ্ধ শেষে নিজের চিকিৎসা করাতে ওষুধের দোকানে ছুটল একটি হনুমান। ওষুধের দোকানে গিয়ে শুধু নিজ দেহের ক্ষতস্থানে ব্যান্ডেজ ও মলম লাগানোই নয়, ব্যথা কমানোর ওষুধও কার্যত চেয়ে খেল হনুমানটি। এর পর ওষুধের দোকান থেকে বেরিয়ে আসার সময় সবাইকে অবাক করে দিয়ে দোকানদার ও স্থানীয় এক যুবককে কৃতজ্ঞতাও জানিয়ে এলো প্রাণীটি।
আঘাত বা চোট লাগলে ব্যথার উপশমের জন্য মানুষ চিকিৎসকের কাছে যায় কিংবা ওষুধের দোকানে গিয়ে ওষুধ কিনে খায়। এটাই স্বাভাবিক। মানুষের মতোই এবার হনুমান তার বুদ্ধিমত্তায় দেখিয়ে দিল চোট পেলে যেতে হয় ওষুধের দোকানে।
শুনতে আজব লাগলেও বাস্তবেই এমন ঘটনা ঘটেছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বীরভূম জেলায়। গত শনিবার বীরভূমের মল্লারপুর স্টেশন চত্বর হয়ে উঠেছিল রীতিমতো কুস্তির আখড়া। এদিন সকালেই স্টেশনে ঢোকার মুখে দুই পূর্ণবয়স্ক হনুমানের লড়াই দেখতে সাধারণ মানুষের ভিড় জমে গিয়েছিল। কে কাকে মাটিতে ফেলতে পারে, চলছিল সে লড়াই। দুই হনুমানের সেই মল্লযুদ্ধে জখম হয় দুটি হনুমান। এর পর মানুষের ভিড় বাড়তেই লড়াইয়ের ময়দান থেকে রণে ভঙ্গ দেয় একটি হনুমান। অন্যটি বসে পড়ে চুপচাপ। শরীরের বেশ কয়েক জায়গায় আঘাত লেগে কেটে-ছিঁড়ে যায় তার।
এরপরই আহত হনুমানটি আজব এক কাণ্ড ঘটায়। স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আচমকা আহত হনুমানটি একটি চলন্ত টোটোয় উঠে বসে পড়ে। বসেই করুণ চোখে টোটোয় থাকা সহযাত্রীদের গায়ে হাত রেখে বোঝানোর চেষ্টা করে সে কাউকে আক্রমণ করবে না। এর পর টোটোটি মল্লারপুর স্টেশন থেকে কিছুটা দূরে স্থানীয় পঞ্চায়েত অফিসের কাছে একটি ওষুধের দোকানের সামনে আসতেই ঝুপ করে টোটো থেকে নেমে পড়ে সে। দোকানের সামনে একটি বেঞ্চে বসে অপেক্ষা করতে থাকে। ওষুধের দোকানের ভিড় একটু কমতেই লাফ মেরে দোকানের কাউন্টারের ওপর উঠে বসে কোমরের নিচে ও শরীরের অন্যান্য অংশে ক্ষতস্থানগুলো দেখাতে থাকে। ভাবভঙ্গিতেই সে বোঝাতে থাকে তার চিকিৎসার প্রয়োজন। সে সময় ওই ওষুধের দোকানে ওষুধ নিতে এসেছিলেন আনাজুল নামের এক স্থানীয় যুবক। তিনি হনুমানের ওই কাণ্ড দেখে দোকানদারকে ওষুধ দিতে অনুরোধ করেন। এর পর ওই যুবকের সহায়তায় হনুমানের শরীরের ক্ষতস্থানগুলোতে মলম ও ব্যান্ডেজ করে দেন দোকানদার।
কিন্তু এখানেই শেষ নয়। এরপরেও হনুমানটি বারবার ক্ষতস্থানগুলো দেখাতে থাকে, যা দেখে দোকানদার বুঝতে পারেন ব্যথার কারণেই সে অমন করছে। এর পর এক কাপ পানি নিয়ে তার মধ্যে ব্যথা কমানোর ওষুধ গুলে হনুমানটিকে খাওয়ানো হয়। সেইসঙ্গে দেওয়া হয় বেশ কয়েকটি কলা। কলা খেয়েদেয়ে বেশ কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে আনাজুলের কাঁধে হাত রেখে রীতিমতো কৃতজ্ঞতা জানানোর অঙ্গভঙ্গি করে দোকানের কাউন্টার থেকে রাস্তায় নেমে আসে হনুমানটি। এর পর আবার একটি স্টেশনগামী চলন্ত টোটোতে বসে পড়ে সে।
এ ঘটনায় স্থানীয় বন্যপ্রাণী গবেষক শান্তিনিকেতনের বাসিন্দা ঈশানচন্দ্র মিশ্র বলেন, ‘যেসব প্রাণী মানুষের কাছাকাছি থাকে, তাদের মধ্যে কেউ কেউ মানুষের আচরণ অনুসরণ করে। বিশেষ করে হনুমান, বানর বা কুকুর জাতীয় প্রাণীদের এই ধরনের অনুসরণ করার ক্ষমতা অনেক বেশি থাকে।’