যকৃতের অংশ দিয়ে শ্বশুরের জীবন বাঁচালেন নারী

নিজের যকৃতের অংশ দান করে শ্বশুরকে নতুন জীবন দিলেন এক নারী। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের নদিয়া জেলার চাপড়ার এলেমনগর গ্রামের ঘটনা এটি। গত সোমবার ২০ ঘণ্টা ধরে অস্ত্রোপচারের পর চিকিৎসকরা জানান, অস্ত্রোপচার সফল।
বেঙ্গালুরুর হাসপাতাল থেকে সে কথা জানাতে গিয়ে আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন শ্বশুর সুলতান মল্লিক। তিনি বলেন, ‘বউমা হলো মেয়ের মতো। সে আমাকে বাবা বলে। কিন্তু এবার তো ওর শরীরের অংশ নেওয়ায় আমাদের বাবা-মেয়ের মধ্যে রক্তের বন্ধন তৈরি হলো। এমন বউমা লোকে ভাগ্য করে পায়।’
জানা গেছে, ৫৫ বছর বয়সী সুলতান মল্লিক পেশায় গাড়িচালক ছিলেন। বছর তিনেক আগে তাঁর যকৃতের সমস্যা ধরা পড়ে। এর পর কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা চলতে থাকে। কিন্তু অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় তাঁকে দক্ষিণ ভারতে নিয়ে যাওয়া হয়।
সুলতানের বড় ছেলে আশীষ মল্লিক বলেন, ‘হায়দরাবাদ, চেন্নাই ও বেঙ্গালুরুর তিনটি হাসপাতাল থেকেই আমাদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, বাবার যকৃতে টিউমার হয়েছে। দ্রুত প্রতিস্থাপন করতে হবে।’
এর পর সুলতানের তিন ছেলেকে পরীক্ষা করা হয়। কিন্তু চিকিৎসকরা জানান, একমাত্র বড় ছেলের সঙ্গেই সুলতানের রক্তের গ্রুপ মিলেছে। কিন্তু সেই ছেলের যকৃতে চর্বি বেশি থাকার কারণে তাঁর যকৃৎ কাজে আসবে না।
পরে যোগাযোগ করা হয় পরিবারের বেশ কয়েকজন আত্মীয়র সঙ্গে। কিন্তু এগিয়ে আসেননি কেউ। তখনই নিজের যকৃতের অংশ দেওয়ার প্রস্তাব দেন বাড়ির বড় বউ জাহানারা।
প্রথমে শুনে স্তম্ভিত হয়ে পড়েছিলেন সবাই। এরপরই শুরু হয় তোড়জোড়। মিলে যায় রক্তের গ্রুপও। পরিবার সূত্রে জানা গেছে, বেঙ্গালুরুর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও প্রথমে শুনে বিশ্বাস করতে চাননি যে শ্বশুরকে স্বেচ্ছায় যকৃতের অংশ দিতে চেয়েছেন তাঁর ছেলের বউ। জেলা পুলিশের রিপোর্ট দেখার পর আশ্বস্ত হয় কর্তৃপক্ষ।
জাহানারার পাশাপাশি তাঁর পরিবারের সঙ্গেও কথা বলেন চিকিৎসকরা। এরপরই লিভার প্রতিস্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয় বেঙ্গালুরুর ওই হাসপাতাল।
জাহানারার স্বামী আশীষ বলেন, ‘বারো বছর হলো আমাদের বিয়ে হয়েছে। সন্তানও রয়েছে। কিন্তু এ ঘটনায় ওকে যেন নতুন করে আবিষ্কার করলাম। সারা জীবন ওর কাছে কৃতজ্ঞ থাকব।’
জাহানারা বলেন, ‘বাবা অনেক কষ্ট করে আমাদের সংসারকে দাঁড় করিয়েছেন। তিনি বেঁচে থাকলে গোটা সংসার সুখে থাকবে। তিনি আমাদের সবার অভিভাবক। তাই আমি যা করেছি, তা সংসারের সবার ভালোর জন্য করেছি।’