শিবসেনার উদ্ধব ঠাকরেই মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী, আজ শপথগ্রহণ

নানা নাটকীয়তা ও চড়াই উৎরাইয়ের পর ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যে শিবসেনা নেতৃত্বাধীন জোট সরকার আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে। শিবসেনার প্রধান উদ্ধব ঠাকরে গতকাল বুধবার স্ত্রী রেশমিকে নিয়ে রাজ্যটির গভর্নর ভগৎ সিং কোশিয়ারির সঙ্গে দেখা করেছেন। যে পার্ককে ঘিরে শিবসেনার বিভিন্ন অনুষ্ঠান হতো, মুম্বাইয়ের সেই শিবাজি পার্কেই আজ বৃহস্পতিবার বাল ঠাকরের ছেলে উদ্ধব ঠাকরে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে যাচ্ছেন।
গত মঙ্গলবার কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপির দেবেন্দ্র ফড়নবিশ মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করলে মহারাষ্ট্রে শিবসেনা-এনসিপি-কংগ্রেস মহাজোট সরকারের ক্ষমতা আরোহনের পথ নিষ্কণ্টক হয়। ভারতের সু্প্রিম কোর্ট মঙ্গলবার এক রায়ে ফড়নবিশকে বুধবারের মধ্যে বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের নির্দেশ দেন। তবে আস্থা ভোটের আগেই বিজেপি নেতা তাঁর পদ থেকে সরে দাঁড়ান।
এরই পথ ধরে আজ বৃহস্পতিবার মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেবেন শিবসেনা সুপ্রিমো উদ্ধব ঠাকরে। প্রথমে ঠিক হয়েছিল ১ ডিসেম্বর শপথ নেবেন উদ্ধব। পরে সিদ্ধান্ত বদলে শপথ গ্রহণের দিন এগিয়ে আনা হয়। বাবা বাল ঠাকরের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াস্থল শিবাজি পার্ককেই শপথ গ্রহণের জন্য বেছে নিয়েছেন উদ্ধব ঠাকরে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া এ খবর জানিয়েছে।
দপ্তর বণ্টন নিয়ে গতকাল বুধবার ন্যাশনাল কংগ্রেস পার্টির (এনসিপি) বর্ষীয়ান নেতা শরদ পাওয়ারের সঙ্গে কথা বলেন কংগ্রেসের শীর্ষ নেতা আহমেদ প্যাটেল ও মল্লিকার্জুন খাড়গে। সূত্রের খবর, উদ্ধব ঠাকরের মন্ত্রিসভায় উপমুখ্যমন্ত্রী হতে পারেন অজিত পাওয়ার। উপমুখ্যমন্ত্রী পদে কংগ্রেসের বালাসাহেব থোরাটের নামও উঠে এসেছিল। কিন্তু এনসিপি নেতা প্রফুল্ল প্যাটেল বুধবার রাতে জানান, শিবসেনা, কংগ্রেস ও এনসিপির বৈঠকে ঠিক হয়েছে একজনই উপমুখ্যমন্ত্রী থাকবেন। আর এনসিপি থেকেই উপমুখ্যমন্ত্রী বেছে নেওয়া হবে। কংগ্রেস পাবে স্পিকারের পদ।
মহারাষ্ট্রে বিজেপি ও শিবসেনা জোট করে নির্বাচনে লড়লেও মুখ্যমন্ত্রীর পদ নিয়ে বিরোধ সামনে আসে। শিবসেনা দাবি করে, দুই দলের মুখ্যমন্ত্রী আড়াই বছর করে ক্ষমতায় থাকবেন, এমন শর্তেই জোট হয়েছিল।
কিন্তু শিবসেনার এই দাবি নাকচ করে বিজেপি নেতৃত্ব। ফলে দুই দলের দীর্ঘ তিন দশকের বন্ধুত্বে ছেদ পড়ে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিজেপির হাত ছেড়ে এনসিপি ও কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সরকার গঠনের তোড়জোড় করে শিবসেনা। এরই মধ্যে এনসিপি নেতা শরদ পাওয়ারের ভাতিজা অজিত পাওয়ারকে উপমুখ্যমন্ত্রীর টোপ দিয়ে, তড়িঘড়ি শপথ নেন দেব্রেন্দ্র ফড়নবিশ। বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টের নজরে আনা হলে, আস্থাভোটে হারের আশঙ্কায় শপথ গ্রহণের তিন দিনের মাখায় রণেভঙ্গ দেন ফড়ডনবিশ ও অজিত পাওয়ার। পদত্যাগ করেন দুজনেই। এর ফলে মহারাষ্ট্রে সরকার গঠন নিয়ে যে জটিলতা তৈরি হয়েছিল, তা কেটে যায়। শিবসেনা-এনসিপি-কংগ্রেস জোটের কাছে সরকার গঠনের দরজা খুলে যায়। জোটের নেতা হিসেবে উদ্ধব ঠাকরেকে মনোনীত করে, মুখ্যমন্ত্রীর দাবিদার হিসেবে তুলে ধরা হয়। আজ বৃহস্পতিবার শিবাজি পার্কে হতে যাচ্ছে সেই শপথগ্রহণ।
মহারাষ্ট্রে বিজেপির সঙ্গে জোট করে ৫৬টি আসন পেয়েছে শিবসেনা। আর বিজেপি এককভাবে ১০৫টি আসন পেয়ে বৃহত্তম দল হলেও সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় আসন তাদের ছিল না। অন্যদিকে এনসিপি ও কংগ্রেসের আসন সংখ্যা যথাক্রমে ৫৪ ও ৪৪। মহারাষ্ট্রের ২৮৮ আসনবিশিষ্ট বিধানসভায় সরকার গঠন করতে ১৪৫টি আসন প্রয়োজন হয়। কংগ্রেস, এনসিপি ও শিবসেনা জোটের আসন সংখ্যা ১৫৪টি।