শ্রীলঙ্কায় জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার, বেসামাল সরকার

শ্রীলঙ্কায় ১ এপ্রিল জরুরি অবস্থার ঘোষণা করেছিলেন দেশটির প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে। কিন্তু, এতেও জনবিক্ষোভ এবং ক্ষমতাসীন জোট ও দলে ভাঙন এড়াতে পারেননি তিনি। এমন পরিস্থিতিতে গোটাবায়া জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। খবর বার্তা সংস্থা রয়টার্সের।
শ্রীলঙ্কায় জরুরি অবস্থা জারি হওয়ায় সেনা ও পুলিশ কোনো তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই যে কাউকে আটকের ক্ষমতা পায়। কিন্তু, এর পরেও বিক্ষোভ থামানো যায়নি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লাগাতার বিক্ষোভ চলছে। বিরোধী দলগুলোও বিক্ষোভ করছে। সাধারণ মানুষ পথে নেমেছে।
জোটে ভাঙন
রাজাপাকসের জোট ছেড়ে বেরিয়ে গেছেন ৪১ জন পার্লামেন্ট সদস্য। তাঁরা প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ দাবি করেছেন। এতে পার্লামেন্টে ক্ষতাসীন জোট সংখ্যালঘু হয়ে পড়েছে।
তবে, বিরোধীরা পার্লামেন্টে সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনবে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। এর আগে বিরোধীরা প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসের প্রস্তাবিত জাতীয় সরকারে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানায়।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে নিজের গদি বাঁচাতে শ্রীলঙ্কায় জরুরি অবস্থার ঘোষণা করেছিলেন গোটাবায়া রাজাপাকসে। কিন্তু, চাপের মুখে মঙ্গলবার গভীর রাতে শেষ পর্যন্ত জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার করেছন গোটাবায়া।
শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে গোটাবায়ার বাসভবনের সামনে সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে কারফিউ জারি করা হয়েছিল কলোম্বোতে। তবে, কারফিউ অমান্য করে লঙ্কাবাসী রাস্তায় নামেন। এর আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা জারি করে তা ১৩ ঘণ্টা পরেই তুলে নিতে হয়েছিল।
শ্রীলঙ্কার বর্তমান পরিস্থিতির জন্য সে দেশের বেশির ভাগ মানুষ রাজাপাকসে পরিবারকে দোষারোপ করছেন। বর্তমানে শ্রীলঙ্কার মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ। খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে, শ্রীলঙ্কার মুদ্রার অবমূল্যায়ন অব্যাহত রয়েছে। দিনে ১০ ঘণ্টার বেশি সময় বিদ্যুৎ থাকে না। পেট্রল পাম্পে নেই জ্বালানি। এমন পরিস্থিতিতে নাজেহাল শ্রীলঙ্কার সাধারণ মানুষ। ১৯৪৮ সালে স্বাধীন হওয়ার পর থেকে শ্রীলঙ্কায় এত বাজে সময় আর কখনও আসেনি।
৩ এপ্রিল শ্রীলঙ্কাজুড়ে বড় ধরনের আন্দোলনের পরিকল্পনা করা হয়েছিল৷ তা রুখতে ‘পাবলিক সিকিউরিটি অর্ডিন্যান্স’ জারি করেছিলেন প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসে৷ কারফিউ জারি ছিল সারা দেশে৷ তবে, কারফিউ সত্ত্বেও প্রতিবাদ চলেছে। মন্ত্রিসভার ২৬ মন্ত্রী পদত্যাগ করেন।

প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া বিরোধীদের সরকারে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান। কিন্তু, তাঁর প্রস্তাব মেনে নেয়নি বিরোধীরা। এ পরিস্থিতিতে শাসকগোষ্ঠী পার্লামেন্টে নিজেদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে। চরম সংকটের মুখে শাসকগোষ্ঠী থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করেছেন বহু সদস্য। শরিক দল আগেই সরকারের পাশ থেকে সর গেছে। এর জেরে শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।
অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগ
প্রেসিডেন্ট গোটাবায়ার অস্বস্তি আরও বাড়িয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই পদত্যাগ করেছেন আলি সাবরি। ঋণ ও অর্থসংক্রান্ত বিষয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-আইএমএফের সঙ্গে তাঁর জরুরি ভিত্তিতে আলোচনায় বসার কথা ছিল। কিন্তু, আলোচনার আগেই তিনি দায়িত্ব ছাড়লেন।
আইএমএফ জানিয়েছে, তারা শ্রীলঙ্কার আর্থিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখছে।
দূতাবাস বন্ধ
প্রবল আর্থিক সংকটের মুখে পড়ে শ্রীলঙ্কা সরকার দুটি দূতাবাস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দূতাবাস দুটি হলো—নরওয়ে ও ইরাক। এ ছাড়া সিডনির কনস্যুলেট অফিসও বন্ধ করা হয়েছে।
চলছে বিক্ষোভ
প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসে এবং তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করছে সাধারণ মানুষ। গত শনিবার থেকে এ বিক্ষোভ চলছে। জনতা ও বিরোধী দল প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ দাবি করছে। এ ছাড়া কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়েও বিক্ষোভ হচ্ছে। বিরোধী দলও বিক্ষোভ করছে।