মোদির রাষ্ট্র পরিচালনা নীতি প্রশংসাযোগ্য
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির রাষ্ট্র পরিচালনার নীতিকে প্রশংসাযোগ্য বলে মন্তব্য করেছেন নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী। মোদির আসন্ন বাংলাদেশ সফর সামনে রেখে সাপ্তাহিক সাময়িকী ‘ইন্ডিয়া টুডে’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন। সাক্ষাৎকারে মোদির শাসনকাল, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কসহ বিভিন্ন বিষয় সামনে এনেছেন তিনি। এটির চুম্বক অংশ এনটিভি অনলাইনের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
প্রশ্ন : প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোনো নীতিগত পরিবর্তন হবে বলে মনে করেন কি?
উত্তর : নিশ্চিতভাবেই। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের একটি ঐতিহাসিক মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফর করছেন। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের ৬৮ বছর এবং মুজিব-ইন্দিরা চুক্তির ৪১ বছর পর আমরা দুই দেশের মধ্যকার স্থলসীমান্ত চুক্তির বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে পেরেছি। এটা সম্ভব হয়েছে চুক্তি কার্যকরে রাজ্যসভা ও লোকসভায় বেশির ভাগ সদস্যের মতামতের ভিত্তিতে বিল আনায়। পুরো বিষয়টি রাষ্ট্রনায়কসুলভ পন্থায় সম্পন্ন করায় আমরা প্রধানমন্ত্রী মোদিকে পুরোপুরি কৃতিত্ব দিই।
প্রশ্ন : আগের শাসনামলে বিলটি পাস না হওয়ায় খুব বেশি অসন্তোষ বা হতাশা ছিল?
উত্তর : অতীত শেষ। আসুন, আমরা ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলি। ৪৪ বছর ধরে ওই মানুষগুলো (ছিটমহলের বাসিন্দা) স্বাধীন দেশে স্বাধীন মানুষ হিসেবে বসবাস করতে পারেনি। প্রথমবারের মতো আমরা তাদের মৌলিক সুযোগ-সুবিধা দেওয়া এবং তাদের স্বাধীন দেশে স্বাধীনভাবে বসবাস করতে দেওয়ার মতো অবস্থানে পৌঁছেছি। মূলত এটা ওই সব জায়গায় থাকা ৪৪ হাজার লোকের জন্য নতুন '৪৭, নতুন '৭১।
প্রশ্ন : সফরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকেশ্বরী মন্দির, রামকৃষ্ণ মিশন সফরের কথা আছে মোদির। এতে সবচেয়ে বড় বিষয় কোনটি হবে?
উত্তর : আমি মনে করি, মূল দৃষ্টি নিবদ্ধ থাকবে দুই দেশের আলোচনার ওপর। তিনি (মোদি) বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, বুদ্ধিজীবী, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও সুশীল সমাজের নেতাসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে দেখা করবেন। সর্বোপরি, আমাদের ৩৬ ঘণ্টার আঁটসাঁট কর্মসূচি আছে। এ সফরে মোদি বঙ্গবন্ধু জাদুঘর, জাতীয় স্মৃতিসৌধ ও অন্য দুই থেকে তিনটি স্থাপনাও সফর করবেন। নিশ্চিতভাবেই এটা মোদির প্রথম সফর। তবে শেষ সফর নয়। আগামী সফরগুলোতে আমরা তাঁকে ঢাকার আরো অনেক বিষয় দেখাব।
প্রশ্ন : মনমোহন সিংয়ের সরকার থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার তিনি মোদির সঙ্গে আসছেন। বিষয়টি দ্রুত তিস্তা ইস্যুর সমাধানে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন কি?
উত্তর : নিশ্চিতভাবেই। ঘন ঘন যোগাযোগ ও আলোচনা যেকোনো চুক্তির নিষ্পত্তিতে অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে। আমরা এ ক্ষেত্রের অগ্রগতিকে উষ্ণ স্বাগতম জানাই। এটা সম্ভব হয়েছে, এ ইস্যুতে জনমত সৃষ্টিতে সবাইকে একত্রে আনতে মোদি ভূমিকা রেখেছেন বলে। আমরা খুবই আশাবাদী যে, তিস্তা ইস্যুটি খুবই দ্রুত নিষ্পন্ন হবে। এটা চলতি আলোচনায় না হলেও পরবর্তী আলোচনাগুলোতে সম্ভব।
প্রশ্ন : সংবাদ সম্মেলনে সুষমা স্বরাজ ইঙ্গিত করেছেন, সফরে আলোচ্যসূচিতে থাকছে না তিস্তা ইস্যু। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুধু স্থলসীমান্ত চুক্তি স্বাক্ষরে আসছেন। আপনিও তাই মনে করেন?
উত্তর : সফরসূচি থেকে এখন পর্যন্ত জানা গেছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্থলসীমান্ত চুক্তির অনুমোদন অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে যাচ্ছেন। যেহেতু তিন নেতাই সেখানে থাকবেন, সেহেতু তিস্তার মতো অন্যান্য ইস্যু নিয়েও আলোচনা হতে পারে।
প্রশ্ন : বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বিএনপি ইস্যুটি সামনে নিয়ে আসছে এবং তিস্তা এজেন্ডায় না থাকলে, এমনকি খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে দেখা করবেন না।
উত্তর : বিষয়টি নির্ধারণের দায়িত্ব বিএনপির। আমরা অনেক বছর ধরে অমীমাংসিত বিষয়টি নিয়ে আছি। তাই অন্ধকারের ওপর দায় না চাপিয়ে একটা মোম জ্বালানোই ভালো। আমরা স্থলসীমান্ত চুক্তির বিষয়টি সমাধান করেছি এবং আশা করছি, আগামী আলোচনায় তিস্তা চুক্তিও সমাধান হবে।
প্রশ্ন : মোদির সফরে বিএনপি অবরোধ বা প্রতিবাদ করতে পারে—এমন আশঙ্কা করছেন?
উত্তর : আমি এ বিষয়ে আদৌ চিন্তিত নই। কারণ, ভারতের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ এবং ঐক্যবদ্ধভাবে থাকতে জনগণের সমর্থন অভূতপূর্ব।
প্রশ্ন : সুষমা স্বরাজ এ-ও উল্লেখ করেছেন, প্রধানমন্ত্রী মোদি অনুপ চেটিয়াকে (উলফা নেতা) বহিঃসমর্পণের পরিবর্তে প্রত্যাবর্তনের বিষয়টি উত্থাপন করবেন। বিষয়টি বিবেচনা করতে ঢাকা কি রাজি হবে?
উত্তর : শুধু এ বিষয়েই নয়, অন্যান্য বিষয়েও আলোচনার সুযোগ তৈরি হবে। আমি আশা করি, দুই নেতা একান্ত বৈঠকে বসতে পারেন এবং তাঁরা বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে একটি নির্দেশনা আমাদের দিতে পারেন।