মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাককে আগামী সপ্তাহে দেশের দুর্নীতি বিরোধী কর্তৃপক্ষের সামনে হাজির হওয়ার জন্য তলব করা হয়েছে। দেশটিতে দুর্নীতি বিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে রাজাককে তলব করা হয়। গতকাল শুক্রবার এই আদেশ দেয় দুর্নীতি বিরোধী কর্তৃপক্ষ।

দেশটির রাষ্ট্র পরিচালিত সংবাদ সংস্থা বারনামা জানিয়েছে, নাজিবকে আগামী মঙ্গলবার মালয়েশিয়ান এন্টি করাপশন কমিশনের (এমএসিসি) সামনে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এসআরসি ইন্টারন্যাশনাল সংক্রান্ত অভিযোগ বিষয়ে তাঁর বক্তব্য তুলে ধরতে এমএসিসির অফিসে তাঁকে ডাকা হয়েছে।

দেশটির উন্নয়নের একটি সহযোগী  প্রতিষ্ঠান ওয়ানএমডিবি ২০১২ সালে সরাসরি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ছিল। এরপর এসআরসি ইন্টারন্যাশনালের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করে। নাজিব তখন একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। এসআরসি থেকে শত শত মিলিয়ন ডলার বেহাত করা হয়েছে এই অভিযোগে নাজিবের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।

এদিকে গত শুক্রবার নাজিব রাজাকের একটি বিলাসবহুল বাসভবন থেকে ২৮৪ বাক্স ও ১২টির বেশি ব্যাগ ভর্তি অর্থ ও গয়না উদ্ধার করেছে পুলিশ।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, নাজিব রাজাকের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালে ৭০ কোটি ডলার সরকারি তহবিল তছরুপের অভিযোগ আনা হয়। ওই অভিযোগের তদন্ত অংশ হিসেবে এই অভিযান পরিচালনা করছে পুলিশ।

এ বিষয়ে দেশটির নতুন প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ বলছেন, ‘নাজিবের বিরুদ্ধে বিলিয়ন ডলারের কেলেংকারির ঘটনায় জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে এবং তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত করা হবে। যুক্তরাষ্ট্রসহ আরো ছয়টি দেশ এই দুর্নীতির তদন্ত করছে।’        

নাজিব রাজাক যদিও এই দুর্নীতির কথা প্রথম থেকেই অস্বীকার করে আসছেন। বৃহস্পতিবার তাঁর আইনজীবী হারপাল সিং এই অভিযানের নিন্দা জানিয়েছে বলেছেন, ‘হয়রানি করার জন্য এই অভিযান চালানো হচ্ছে।’

অভিযোগ উঠেছে নাজিবের স্ত্রী রোশমা মানসুরের বেহিসাবি খরচ করতেন। আর জনগণের তহবিল থেকে এসব অর্থ নেওয়া হতো। রোশমা বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করতেন। সেই সময় দামি ব্যাগ, ঘড়ি, অলংকার কিনে আনতেন। যদিও এসব ব্যাপারে কখনও কিছুই বলেননি নাজিবের স্ত্রী।   

গত ৯ মে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ১৯৫৭ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা ন্যাশনাল ফ্রন্টের পতন হয়। ওই জোটের নেতৃত্বে ছিলেন বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক। নির্বাচনে মাহাথির মোহাম্মদের নেতৃত্বাধীন জোট ‘অ্যালায়েন্স অব হোপ’ জয়লাভ করে। এক সময় এই জোট থেকেই প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন মাহাথির।

নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক তাঁর দল এবং জোটের নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।

গত সপ্তাহে মালয়েশিয়ার সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের দেশত্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।