মদিনায় এক টুকরো বাংলাদেশ
জায়গাটির নাম বাংলাবাজার। কাঁচা বাজার থেকে শুরু করে পানের দোকান, চায়ের দোকান, আখের রসের দোকান, দর্জির দোকান, সেলুন—সবই আছে। সেখানে গেলেই আপনার কানে আসবে দোকানে দোকানে দরদামের আওয়াজ, চায়ের কাপের টুংটাং। আছে চায়ের দোকানে টেলিভিশন, ঝালমুড়ি, পুরি-সিংগারা , হাকিমপুরি জর্দা দিয়ে খয়ার মেখে পান খেয়ে লাল দাঁত বের করা হাসি।
ভাবছেন, এটা বাংলাদেশের কোনো বাজারের চিত্র? একদমই নয়। বাংলাদেশ থেকে প্রায় পাঁচ হাজার ১২২ কিলোমিটার দূরে সৌদি আরবের মদিনার কাছে এই বাজারের অবস্থান।
ফাহাদ ক্যাম্প এলাকার এই বাজার যেন মরুর বুকে এক টুকরো বাংলাদেশ। সব সময়ই বাজারটি মুখর রাখেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। এখানে বাংলাতেই চলে দরদাম-কেনাকাটা।
ফাহাদ ক্যাম্পের লেবার অফিসার আহসানুল্লাহ শাহীন এনটিভি অনলাইনকে জানান, ফাহাদ একটি কোম্পানির নাম। এই কোম্পানিতে কর্মরত শ্রমিকদের প্রায় ৯০ শতাংশ বাংলাদেশি। তাঁদের সবাই সৌদি আরবের শোভাবর্ধনের কাজে নিয়োজিত। বাংলাবাজারের পাশে এই কোম্পানির একটি বিশাল ক্যাম্প রয়েছে, যেখানে প্রায় ছয় হাজার বাংলাদেশির বসবাস। এসব বাংলাদেশি শ্রমিককে কেন্দ্র করেই এই বাজার গড়ে উঠেছে।
শাহীন আরো বলেন, বাংলাদেশিদের কেন্দ্র করে গড়ে উঠলেও এখন মদিনার পশ্চিম ও দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ বাজার করতে এখানেই ছুটে আসেন। বিশেষ করে বাংলাদেশি, ভারতীয়, শ্রীলঙ্কান ও নেপালি প্রবাসীরা। এখানে প্রায় ৩৫০ বাংলাদেশি দোকান রয়েছে। বাংলাদেশি শ্রমিকরা লুঙ্গি পরেই চলাফেরা করেন এখানে।
ফাহাদ ক্যাম্পের এই বাংলাবাজারে এসে তমিজ উদ্দিনের দোকানের পান না খেলে বাজারে আসা বৃথা হয়ে যায় অনেকের কাছে। বাংলাদেশি এই তমিজ উদ্দিনের পানের দোকানে ৩০ রকমের পান-মসলা আছে। এর মধ্যে আজমিরি মিষ্টি, গোলাপ চাটনি, পানপরাগ, বাগদাদ ক্লার্ক, হিরামতি, নারকেল জর্দা, কাসুন্দি, পোস্টার ক্লার্ক, তাম্বুল বাহার, বাদাম চাটনি, কাজু বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
এ ছাড়া ময়মনসিংহের আবুল কালামের চায়ের দোকানের জিলাপি এখানে যেমন প্রসিদ্ধ, তেমনি কুমিল্লার ডালিমের দোকান থেকে মাছ-মাংস আর মসলা কেনেন বাংলাদেশিরা।
বাজারে গিয়ে এই প্রতিবেদক দেখেন, টাঙ্গাইলের শহীদের মোবাইল দোকানে বাংলায় লেখা রয়েছে, ‘গ্রামীণ, রবি, বাংলালিংকের সিমকার্ড ও লোড পাওয়া যায় এবং বিকাশ করা হয়।’ কাপড়ের দোকানে রয়েছে লুঙ্গি, গামছাসহ বাংলাদেশি অনেক পণ্য, যা সৌদি আরবে সাধারণত পাওয়া যায় না।
এই বাজারে প্রতি বৃহস্পতি ও শুক্রবার গানের আসর বসে। এই এলাকায় কর্মরত বাংলাদেশিরা সবান্ধবে অংশ নেন এই আসরে। বাংলা গানে গানে মাতিয়ে তোলা হয় পুরো আসর। গানের সুরে তখন প্রবাসীরা ক্ষণিকের জন্য হলেও ভুলে যান আপনজনদের কাছ থেকে দূরে থাকার সব বেদনা।