ভুলে ফাঁস বিশ্বনেতাদের গোপন তথ্য

একটি সম্মেলনে অংশ নিতে অস্ট্রেলিয়া গিয়েছিলেন ৩১ জন। সেখানে আয়োজকদের সামান্য ভুলের কারণে ফাঁস হয়ে গেল তাঁদের ব্যক্তিগত নানা তথ্য। ভাবছেন, তাতে কি? আসলে বিষয়টি যতটা সহজ শোনাচ্ছে, আসলে ততটা সহজ নয়। কারণ, এই ব্যক্তিরা সাধারণ কেউ নন। তাঁরা সবাই বিশ্বনেতা। আর যে সম্মেলনটির কথা বলা হচ্ছে, সেটি হলো বিশ্বের ধনী দেশগুলোর প্রতিনিধিদের নিয়ে জি-২০ সম্মেলন।
এই বিশ্বনেতাদের মধ্যে রয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে, ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইডোডো এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন।
দ্য গার্ডিয়ান এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, এজেন্সির একজন কর্মকর্তা অসাবধানতাবশত বিশ্বনেতাদের পাসপোর্ট নম্বর, ভিসার বিবরণ এবং অন্যান্য ব্যক্তিগত তথ্য এশিয়ান কাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের স্থানীয় আয়োজকদের কাছে পাঠিয়ে দেন।
গত বছরের নভেম্বরে ব্রিসবেনে অনুষ্ঠিত জি-২০ সম্মেলনে যোগ দেওয়া এসব নেতার ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ হয়ে গেছে।
অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসন বিভাগের ভুলের কারণেই এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে।
২০১৪ সালের ৭ নভেম্বর এই ঘটনা কীভাবে ঘটল বা তথ্য সুরক্ষায় কী কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সে সম্পর্কে পরামর্শ করতে অস্ট্রেলিয়ার ভিসা সার্ভিস বিভাগের অভিবাসন ও সীমান্ত সুরক্ষা শাখার পরিচালকের সঙ্গে দেখা করেছেন দেশটির ব্যক্তিগত গোপনীয়তা বিষয়ক কমিশনার।
এ বিষয়ে কমিশনারের অফিস থেকে পাঠানো এক ই-মেইল বার্তায় বলা হয়েছে, ‘প্রকাশ হওয়া ব্যক্তিগত তথ্যের মধ্যে রয়েছে জি-২০ সম্মেলনে যোগ দিতে আসা ৩১ জন বিশ্বনেতার নাম, জন্ম তারিখ, পদবি, জাতীয়তা, পাসপোর্ট নম্বর, ভিসা অনুমোদন নম্বর ও বিভিন্ন ধরনের ভিসার নির্দিষ্ট শ্রেণি।’
এই ত্রুটির কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, এটি মানুষের সহজাত ভুল। মাইক্রোসফটের ই-মেইল আদান-প্রদান সফটওয়্যার আউটলুকের একটি সামান্য ভুলের কারণে মেইলটি ভুল মানুষের কাছে চলে যায়। প্রাপকের একটি ফিরতি বার্তার পরই ভুলটি ধরা পড়ে। এই ভুলকে শুধু মানুষের সহজাত ত্রুটি হিসেবেই দেখছেন অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসন কর্মকর্তারা। তাঁরা বলছেন, এটা যান্ত্রিক ত্রুটি বা প্রাতিষ্ঠানিক কোনো ত্রুটি নয়।
কর্মকর্তারা বলছেন, এসব তথ্য পাবলিক ডোমেইনে প্রকাশ হওয়ার সম্ভাবনা কম। কেননা অননুমোদিত ওই প্রাপক তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে বার্তাটি মুছে ফেলেছেন। এশিয়া কাপের স্থানীয় আয়োজকরা বলেছেন, ওই তথ্যগুলো এমনভাবে তাদের সিস্টেম থেকে মুছে ফেলা হয়েছে যে, আর কারো পক্ষে তা উদ্ধার করা সম্ভব নয়।
তবে এ সম্পর্কে বিশ্বনেতাদের সচেতন করা বা জানানো প্রয়োজন নয় বলে মনে করছেন অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসন বিভাগের কর্মকর্তারা। তাঁরা বলছেন, তথ্য প্রকাশের ঝুঁকি খুবই কম এবং যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার কারণে এ সম্পর্কে ওই নেতাদের আর জানানোর তেমন প্রয়োজন নেই।
অবশ্য যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও ফ্রান্সে গোপন তথ্য প্রকাশ সম্পর্কিত আলাদা আইন আছে। তাই পরবর্তী সময়ে নেতাদের এই তথ্য প্রকাশ সম্পর্কে অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসন বিভাগ তাঁদের অবহিত করবে কিনা, সে সম্পর্কে স্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি। এমনকি দেশটির অভিবাসনমন্ত্রী পিটার ডাটন এ সম্পর্কিত প্রশ্নের কোনো উত্তর দেননি বলে জানিয়েছে গার্ডিয়ান।
এদিকে দেশটির বিরোধী দলের নেতা তানইয়া প্লিবারসেক বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী টনি অ্যাবটকে অবশ্যই এই তথ্য প্রকাশের ঘটনা বিশ্বনেতাদের কাছে ব্যাখ্যা করতে হবে।
এই তথ্য প্রকাশের ঘটনায় বেশ বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে অস্ট্রেলিয়ার সরকার।