ওআইসি-আরব লীগ বৈঠকে গাজা-ইসরায়েল যুদ্ধ প্রসঙ্গ

গাজায় ইসরায়েলের হামলায় ভয়াবহ ধ্বংস ও মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে আরব লীগ ও ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) জরুরি বৈঠকে বসছে। আজ শনিবার (১১ নভেম্বর) সৌদি রাজধানী রিয়াদে এই বৈঠক হবে। নেতারা অন্যান্য দেশে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার আগেই গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ শেষ হওয়ার দাবির ওপর জোর দেবেন। এই বৈঠকে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিও ছিলেন।
মধ্যপ্রাচ্যের দুই হেভিওয়েট সৌদি আরব ও ইরান গত মার্চ মাসে একটি বিস্ময়কর সমঝোতা চুক্তিতে পৌঁছানোর পর সাত বছরের বিচ্ছিন্ন সম্পর্কের অবসান ঘটিয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় রিয়াদে ওআইসি বৈঠকে ইরানের প্রেসিডেন্টের প্রত্যাশিত উপস্থিতি দেশটিতে তার প্রথম সফর।
ইরান হামাসের পাশাপাশি লেবাননের হিজবুল্লাহ এবং ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের সমর্থন করে। যুদ্ধ প্রসারিত হওয়ার উদ্বেগের কেন্দ্রে রয়েছে হিজবুল্লাহ এবং হুথি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সৌদি আরব ওয়াশিংটনের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে এবং যুদ্ধ শুরুর আগে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার কথা বিবেচনার কারণে সম্ভাব্য হামলার জন্য দেশটি ঝুঁকিপূর্ণ বোধ করছে।
আরব কূটনীতিকরা এএফপিকে বলেছেন, আরব লীগের প্রতিনিধিদল চূড়ান্ত বিবৃতিতে একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে ব্যর্থ হওয়ার পরে বৈঠকগুলোতে সবাইকে একত্রিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
আলজেরিয়া এবং লেবাননসহ কয়েকটি দেশ ইসরায়েলে ও ইসরায়েলি মিত্রদের তেল সরবরাহ বন্ধের হুমকি দিয়ে গাজায় ধ্বংসযজ্ঞের প্রতিক্রিয়া জানানোর প্রস্তাব করেছে বলে জনিয়েছেন কূটনতিকরা। তারা আরও জানিয়েছেন, পাশাপাশি ইসরায়েল ও তার মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্নের প্রস্তাবও এসেছে। নামপ্রকাশ না করার শর্তে কূটনীতিক বলেছেন, ইসরায়েলের সঙ্গে ২০২০ সালে সম্পর্ক স্বাভাবিক করা সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইনসহ অন্তত তিন দেশ এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে।
গাজায় ইসরায়েলি হামলা শুরুর পর দীর্ঘ বিলম্বে এই বৈঠক আহ্বানের জন্য আরব নেতাদের সমালোচনা করে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গোষ্ঠী ইসলামিক জিহাদ শুক্রবার বলেছে, বৈঠক থেকে তারা ‘কিছুই আশা করছে না।’ গ্রুপের ডেপুটি সেক্রেটারি-জেনারেল মোহাম্মদ আল-হিন্দি বৈরুতে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘আমরা এই ধরনের বৈঠকের ওপর আমাদের আশা রাখছি না, কারণ আমরা বহু বছর ধরে তাদের ফলাফল দেখেছি।’
ইসরায়েল এবং তার প্রধান সমর্থক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখনও পর্যন্ত যুদ্ধবিরতির দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে। এমন একটি অবস্থান যা শনিবারের বৈঠকে ব্যাপক সমালোচনার সম্মুখীন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সৌদি বিশ্লেষক আজিজ আলগাশিয়ান বলেছেন, একটি ঐক্যবদ্ধ ‘কূটনৈতিক ফ্রন্ট এতে আরব ও মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর কাছ থেকে কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টি হবে।’

আঞ্চলিক নেতাদের সমালোচনা ইঙ্গিত করে, ‘এটি কেবল ইসরাইল-ফিলিস্তিনের বিষয় নয়, এই অবস্থা তৈরি করার জন্য ইসরায়েলকে সুযোগ দিচ্ছে মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্ব।’
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সম্প্রতি এই অঞ্চলে সফরের সময় এবং এই সপ্তাহে রিয়াদে ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রী জেমস ক্লিভারলির সফরে আরব নেতারা যুদ্ধবিরতির জোর দাবি জানিয়েছিলেন।
জেমস ক্লিভারলির বৃহস্পতিবার বলেছেন, ‘আমরা যা বলেছি তাতে ছিল যুদ্ধবিরতির আহ্বান। তবে, আমরা যা স্বীকার করি তা হলো—ইসরায়েল তার নিজস্ব স্থিতিশীলতা এবং নিজস্ব নিরাপত্তা নিশ্চিতে পদক্ষেপ নিচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘অবশ্যই আমরা এই ভয়ানক পরিস্থিতির যত দ্রুত সম্ভব সমাধান দেখতে চাই। তাৎক্ষণিক চ্যালেঞ্জ হলো, গাজার মানুষের মানবিক চাহিদা। সে কারণেই আমরা সেদিকে মনোযোগ দিচ্ছি।’