ট্রাম্পের অভিষেক হবে ইউএস ক্যাপিটলের ভেতরে, ৪০ বছরে প্রথম
নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান হবে ইউএস ক্যাপিটল ভবনের ভেতরে। তবে প্রেসিডেন্সিয়াল প্যারেড ও সঙ্গীতানুষ্ঠান হবে ইনডোর ভ্যানু ক্যাপিটাল ওয়ান এরিনায়। ওয়াশিংটন ডিসিতে প্রচণ্ড ঠান্ডার কারণে নতুন করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গতকাল শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) ট্রাম্প তাঁর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে এ তথ্য জানান।
ট্রাম্প বলেন, ‘খুব ঠান্ডা আবহাওয়ার কারণে আমি প্রার্থনা, অন্যদের বক্তৃতা এবং আমার শপথ ও অভিষেক ভাষণটি ইউএস ক্যাপিটল হিলের হলরুমে আয়োজনের নির্দেশ দিয়েছি, যেমনটি ১৯৮৫ সালে রোনাল্ড রিগ্যান করেছিলেন।’
‘ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানটি সরাসরি উপভোগ এবং প্রেসিডেন্সিয়াল প্যারেড আয়োজন করতে সোমবার (২০ জানুয়ারি) ক্যাপিটাল ওয়ান এরিনা (ইনডোর ভ্যানু) খুলে দেওয়া হবে। আমার শপথ গ্রহণের পর আমি ক্যাপিটাল ওয়ানে সবার সঙ্গে যোগ দেব’, যোগ করেন ট্রাম্প।
অভিষেক অনুষ্ঠানের আয়োজক যৌথ কংগ্রেসনাল কমিটির এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘অনুষ্ঠানটি ইউএস ক্যাপিটলের অভ্যন্তরে হলরুমে স্থানান্তরের জন্য নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট এবং তার প্রেসিডেন্সিয়াল অভিষেক কমিটির অনুরোধকে সম্মান জানাবে।’
কমিটি সবসময় আবহাওয়া বা অন্যান্য প্রতিবন্ধকতার জন্য ভিন্ন ভিন্ন স্থানে অভিষেক অনুষ্ঠান আয়োজন করার মতো আকস্মিক পরিকল্পনা করে থাকে। কিন্তু এখন চ্যালেঞ্জ হলো হলরুমে হাজার হাজার লোককে স্থান দেওয়া সম্ভব হয় না, যা ক্যাপিটল ভবনের বাইরে দেওয়া যায়।
শুক্রবার রাতে টিকিটধারীদের কাছে পাঠানো একটি নোটিশে কমিটি বলেছে, ‘বেশিরভাগ টিকিটপ্রাপ্ত অতিথি সশরীরে অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারবেন না।’ কমিটি দর্শকদের অনুষ্ঠানটি ‘ইনডোর ভেন্যুতে’ দেখার জন্য অনুরোধ করেছে। তবে কমিটি বলেছে, প্রেসিডেন্ট প্ল্যাটফর্মের টিকিটপ্রাপ্ত ব্যক্তি এবং কংগ্রেস সদস্যরা সশরীরে শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারবেন।
প্রেসিডেন্টের অভিষেক অনুষ্ঠানে কী হবে?
নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করছেন আগামী সোমবার (২০ জানুয়ারি)। এদিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে হোয়াইট হাউসে প্রত্যাবর্তন করবেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্টের অভিষেকের দিন আনুষ্ঠানিক শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের পাশাপাশি কুচকাওয়াজ, সংগীত পরিবেশন এবং আরও আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হয়। এদিন নবনির্বাচিত ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সও শপথ নেবেন। এর মাধ্যমে ট্রাম্প-ভ্যান্সের নেতৃত্বাধীন নতুন মার্কিন প্রশাসনের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হবে।
অনুষ্ঠানের একটি মূল অংশ হলো নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টের শপথ পাঠ। এতে বলা হয়—‘আমি দৃঢ়ভাবে শপথ করছি, বিশ্বস্ততার সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের দায়িত্ব সম্পাদন করব এবং আমার সর্বোচ্চ সক্ষমতা দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান রক্ষা, সংরক্ষণ ও সুরক্ষা নিশ্চিত করব।’
যদিও ডোনাল্ড ট্রাম্প গত নভেম্বরের নির্বাচনে জয়ী হয়ে দেশটির ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন, তবুও তিনি এর আগে এ শপথ পাঠ করেছিলেন। কারণ, তিনি ২০১৭-২০২১ মেয়াদে ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে, আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণের জন্য প্রথমবারের মতো শপথ নেবেন ভ্যান্স।
অভিষেক অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন যারা
বহু মার্কিন সিনেটর ও প্রতিনিধি পরিষদের সদস্যরা উপস্থিত থাকবেন। সেই সঙ্গে থাকছেন প্রশাসনের আমন্ত্রিত অতিথিরাও।
ট্রাম্প, ভ্যান্স এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের পর অনুষ্ঠানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হলেন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও তার স্ত্রী জিল বাইডেন এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস ও তার স্বামী ডগ এমহফ। সাধারণত সাবেক প্রেসিডেন্ট ও ফার্স্ট লেডিরা অভিষেক অনুষ্ঠানের অতিথি তালিকায় থাকেন। তবে সাবেক ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা ট্রাম্পের দ্বিতীয়বারের এই অভিষেক অনুষ্ঠান এড়িয়ে যেতে পারেন বলে জানিয়েছে তার দপ্তর।
গেল সপ্তাহে মিশেল ওবামা সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত ছিলেন। তিনি ২০০৯ সালে তার স্বামী ওবামার পাশাপাশি প্রতিটি অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন, এমনকি ২০১৭ সালে ট্রাম্পের প্রথমবার প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানেও ছিলেন।
মিশেল ওবামার স্বামী বারাক ওবামাসহ অপর সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ ও তার স্ত্রী লরা বুশ আসন্ন অভিষেক অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন বলে আশা করা হচ্ছে। তবে, সেখানে হাউস স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি ও অন্যান্য ডেমোক্র্যাট নেতারা উপস্থিত থাকবেন না।
মার্কিন গণমাধ্যমের তথ্যমতে, বিশ্বের অন্যতম ধনকুবের ইলন মাস্ক, জেফ বেজোস ও মার্ক জাকারবার্গ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
পারফর্ম করবে কারা?
কান্ট্রি গায়ক ও সাবেক আমেরিকান আইডল বিজয়ী ক্যারি আন্ডারউড অনুষ্ঠানে আমেরিকা দ্য বিউটিফুল গানটি পরিবেশন করবেন।
আন্ডারউড এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমি আমাদের দেশকে ভালোবাসি। অভিষেক অনুষ্ঠানে গান গাইতে এবং এই ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানের একটি ছোট অংশ হতে পেরে আমি সম্মানিত বোধ করছি।’
‘আমি এমন এক সময়ের আহ্বানে সাড়া দিতে পেরেছি, যখন আমাদের সবাইকে ঐক্যের চেতনায় একত্রিত হতে হবে এবং ভবিষ্যতের দিকে দৃষ্টি রাখতে হবে’, বলেন এই সংগীতশিল্পী।
ট্রাম্পের দীর্ঘদিনের বন্ধু ও সহযোগী কান্ট্রি গায়ক লি গ্রিনউড অভিষেক অনুষ্ঠানে পারফর্ম করবেন। তাদের সঙ্গে থাকছেন অপেরা গায়ক ক্রিস্টোফার ম্যাকিও। আমেরিকান ডিস্কো গ্রুপ দ্য ভিলেজ পিপল রোববার ট্রাম্পের বিজয় সমাবেশে পারফর্ম করবে। সোমবারের অভিষেক অনুষ্ঠানেও থাকবেন তারা। ট্রাম্পের নির্বাচনি প্রচারণা সমাবেশে প্রায়ই এই গ্রুপের গান ওয়াইএমসিএ ও মাচো ম্যান বাজানো হতো।
ব্যান্ড দলটি তাদের ফেসবুক পেজে এক পোস্টে বলেছে, ‘আমরা জানি, এটি শুনে আপনাদের মধ্যে কেউ কেউ খুশি হবেন না, তবে আমরা বিশ্বাস করি, রাজনীতিকে বিবেচনা না করে সঙ্গীত পরিবেশন করা উচিত। আমাদের গান ওয়াইএমসিএ একটি বৈশ্বিক গান, যা উত্তাল ও বিভক্ত প্রচারণার পরও দেশকে একত্রিত করতে সাহায্য করবে, যদিও আমাদের পছন্দের প্রার্থী হেরেছেন।’
এ ছাড়া রোববার ট্রাম্পের বিজয় সমাবেশে এবং সন্ধ্যার অন্যান্য অনুষ্ঠানগুলোতে অংশ নেবেন বিভিন্ন শিল্পীরা। তাদের মধ্যে রয়েছেন কিড রক, বিলি রে সাইরাস, জেসন অ্যাল্ডিয়ান ও রাস্কাল ফ্ল্যাটসসহ অনেকেই। এ ছাড়া পারফর্ম করবেন গেভিন ডিগ্রাও।
অভিষেক অনুষ্ঠান কীভাবে দেখা যাবে?
সশরীরে উপস্থিত থেকে অভিষেক অনুষ্ঠান দেখতে চান, এমন মানুষের সংখ্যা প্রচুর। এ অনুষ্ঠানের টিকিটের মূল্য অনেক বেশি থাকে।
কংগ্রেসের সদস্যরা অভিষেক অনুষ্ঠানের নির্দিষ্ট সংখ্যক টিকিট পান, যা তারা তাদের নির্বাচনি এলাকায় বিতরণ করেন। এই টিকিট অবশ্য বিনামূল্যের, তবে উচ্চ চাহিদা থাকায় পাওয়া মুশকিল হয়ে দাঁড়ায়। মার্কিনিরা টিকিটের জন্য সরাসরি তাদের কংগ্রেস সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।
কেউ যদি সরাসরি উপস্থিত হতে না-ও পারেন, তবে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। তাদের জন্য দূর থেকে দেখার বহু উপায় রয়েছে। সিএনএন, বিবিসিসহ বিশ্বের প্রভাবশালী বিভিন্ন টিভি চ্যানেল অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করবে, যা বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে উপভোগ করতে পারবেন দর্শকরা।