অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করে দেওয়া রিপোর্ট প্রত্যাহার ব্রিটিশ এমপিদের
অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করে যুক্তরাজ্যের একদল এমপির দেয়া প্রতিবেদনটি প্রত্যাহার করা হয়েছে। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের পক্ষ নিয়ে ওই প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠার পর তাদের পক্ষ থেকে এ পদক্ষেপ নেয়া হয়।
গতকাল রোববার (১৯ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান।
প্রতিবেদনে বলা হয়, কমনওয়েলথ বিষয়ক সর্বদলীয় সংসদীয় গ্রুপ (এপিপিজি) গত নভেম্বরে বাংলাদেশ সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে যেখানে ঢাকার বর্তমান শাসনব্যবস্থার সমালোচনা করা হয়েছিল এবং কিছু উল্লেখযোগ্য ভুলের বিষয়ে অভিযোগ আনা হয়েছিল।
কর্মকর্তারা বলছেন, লেবার পার্টির একজন এমপি হাউস অব কমন্সে এটি সম্পর্কে অভিযোগ করার পরে ওই প্রতিবেদনটি আর বিতরণ করা হচ্ছে না এবং প্রতিবেদনটি এখন “পর্যালোচনাধীন” রয়েছে।
একজন মুখপাত্র বলেছেন, “প্রতিবেদনটি পর্যালোচনার অধীনে থাকা অভ্যন্তরীণ নথি হিসাবে রয়ে গেছে এবং প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে পররাষ্ট্র দপ্তরের সঙ্গে শেয়ার করা হয়েছে। এটি ব্যাপক প্রচারের উদ্দেশ্যে নয় এবং এটি আর বিতরণ করা হচ্ছে না বা কোনো ফলোআপও করবে না।”
বিতর্কিত ওই প্রতিবেদনটিতে হাসিনার পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা শান্তিতে নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে একাধিক সমালোচনা করা হয়েছে। এপিপিজি-এর কনজারভেটিভ চেয়ার অ্যান্ড্রু রোসিন্ডেল একটি প্রেস রিলিজে লিখেছিলেন: “বাংলাদেশের একটি সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ থাকা উচিত, যেখানে শুধু ক্ষমতাসীনদের সমর্থকদের জন্য নয় বরং সবার জন্য সকল সুযোগ উন্মুক্ত থাকবে। অবিলম্বে এই ধারার পরিবর্তন না হলে নতুন সরকারের কাছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যে আশা করছে, তা হাওয়ায় মিলিয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে পড়বে।”
এ ছাড়া প্রতিবেদনে ইউনূস প্রশাসনকে "আইনকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার" এবং "কট্টরপন্থী ইসলামপন্থীদের" ক্ষমতায়নের অভিযোগ আনা হয়েছে।
মূলত নয়া দিল্লিভিত্তিক থিংক-ট্যাংক রাইটস অ্যান্ড রিস্ক অ্যানালাইসিস গ্রুপের তথ্য-প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে বিতর্কিত এই প্রতিবেদনটি লেখা হয়েছিল। ব্রিটিশ এমপিদের প্রত্যাহার করে নেওয়া এই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছিল, “আমরা প্রমাণ পেয়েছি, সাবেক মন্ত্রী, আওয়ামী লীগ নেতা, এমপি, সাবেক বিচারক, স্কলার, আইনজীবী ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এতো বেশি সংখ্যায় হত্যার অভিযোগ আনা হচ্ছে যে, সেগুলোর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।”
সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে ঘুরে যাওয়া লেবার পার্টির এমপি রূপা হক এই সপ্তাহে হাউস অব কমন্সে প্রতিবেদনটির কঠোর সমালোচনা করেছেন এবং এটিকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে কুচক্রী কাজ বলে অভিহিত করেছেন।
রূপা হক আরও বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস ব্যক্তিগতভাবে তার কাছে বিতর্কিত এই প্রতিবেদনটির বিষয় উত্থাপন করেছিলেন এবং জিজ্ঞাসা করেছিলেন: “আপনার সরকার কী করছে, পার্লামেন্টের নামে এই মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হচ্ছে?”
লন্ডনের স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজের অধ্যাপক নাওমি হোসেন বলেছেন: “প্রতিবেদনে মৌলিক ত্রুটি রয়েছে... এটি মারাত্মকভাবে পক্ষপাতদুষ্ট বা অত্যন্ত খারাপ বিশ্লেষণ। জবাবদিহিতার হাতিয়ার হিসেবে এটি সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ।”
এপিপিজির একজন মুখপাত্র বলেছেন: "গোষ্ঠীটি একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে কমনওয়েলথ অফ নেশনসের দিকে মনোযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাই আর কোনো দেশ নিয়ে তারা প্রতিবেদন তৈরি করবে না।"