ট্রাম্প স্টাইলে যুক্তরাজ্যে ভারতীয় রেস্তোরাঁয় ব্যাপক অভিযান
![](http://103.16.74.218/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2025/02/11/uk.jpg)
অভিবাসন আইনের কঠোর বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে যুক্তরাজ্য অবৈধ শ্রমিকদের বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযান পরিচালনা করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কঠোর অভিবাসন নীতির অনুকরণে এই অভিযান চালানো হচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। খবর এনডিটিভির।
ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইভেট কুপার নিজেই অভিযানের তদারকি করছেন। জানুয়ারিতে রেকর্ডসংখ্যক ৮২৮টি স্থানে অভিযান চালানো হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪৮ শতাংশ বেশি। এতে ৬০৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৭৩ শতাংশ বেশি।
স্বরাষ্ট্র দপ্তরের তথ্যানুসারে, অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলেও বিশেষ করে রেস্তোরাঁ, টেকঅ্যাওয়ে, ক্যাফে, খাবার ও তামাক শিল্পে ব্যাপক অভিযান চালানো হয়েছে। উত্তর ইংল্যান্ডের হাম্বারসাইডে একটি ভারতীয় রেস্তোরাঁয় অভিযান চালিয়ে সাতজনকে গ্রেপ্তার ও চারজনকে আটক করা হয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইভেট কুপার বলেন, "অভিবাসন আইন কঠোরভাবে মানতে হবে। বহুদিন ধরে অবৈধ অভিবাসীদের কাজ করানো ও শোষণের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এখন আর তা চলবে না।"
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, "এটি মানুষকে ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে ফেলে দিচ্ছে, যেখানে তারা ছোট নৌকায় করে চ্যানেল পাড়ি দেওয়ার মতো ভয়ানক সিদ্ধান্ত নেয়। এটি আমাদের অর্থনীতি ও অভিবাসন ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।"
"শো, নট টেল" কৌশলে লেবার সরকার
প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারের সরকার অভিবাসন বিষয়ে কঠোর অবস্থান দেখাতে "শো, নট টেল" কৌশল অবলম্বন করছে। যুক্তরাজ্যের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় চারটি নির্বাসন ফ্লাইটে ৮০০-রও বেশি অবৈধ অভিবাসীকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
সরকার একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে, যেখানে দেখা যায় অবৈধ অভিবাসীদের হাতকড়া পরিয়ে সীমান্ত বাহিনীর কর্মীরা বিশেষ চার্টার বিমানে তুলে দিচ্ছেন। এই অভিযানে মাদক পাচার, চুরি, ধর্ষণ ও হত্যার মতো অপরাধে দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিদেরও ফেরত পাঠানো হয়েছে।
অভিবাসন বিরোধী কড়াকড়ি বৃদ্ধি
হোম অফিসের পরিসংখ্যান অনুসারে, গত বছরের ৫ জুলাই থেকে চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে অভিযানের হার ৩৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই সময়ে এক হাজার ৯০টি স্থানে জরিমানা আরোপ করা হয়েছে, যেখানে প্রতি অবৈধ কর্মীর জন্য নিয়োগকর্তাকে সর্বোচ্চ ৬০ হাজার পাউন্ড জরিমানা গুনতে হতে পারে।
ইমিগ্রেশন এনফোর্সমেন্ট বিভাগের পরিচালক এডি মন্টগোমারি বলেন, "আমাদের কঠোর অভিযানের ফলে যারা অভিবাসন আইন লঙ্ঘন করছে, তারা বুঝতে পারবে যে আইন থেকে পালানোর কোনো সুযোগ নেই।"
এডি মন্টগোমারি আরও বলেন, "অবৈধ অভিবাসীরা প্রায়ই অমানবিক পরিস্থিতিতে কাজ করতে বাধ্য হয়। তাই আমরা তাদের সুরক্ষার বিষয়টিকেও গুরুত্ব সহকারে দেখছি।"
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/very_big_1/public/images/2025/02/11/uk_inner.jpg)
নতুন সীমান্ত নিরাপত্তা ও অভিবাসন বিল
এই অভিযান এমন সময় চালানো হচ্ছে যখন লেবার সরকারের বর্ডার সিকিউরিটি, অ্যাসাইলাম ও ইমিগ্রেশন বিল পার্লামেন্টে দ্বিতীয় পাঠের জন্য উপস্থাপন করা হয়েছে।
এই নতুন আইন অপরাধী চক্র ভেঙে দেওয়া ও সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার করার লক্ষ্য নিয়ে এসেছে। এতে অবৈধভাবে যুক্তরাজ্যে আসা ব্যক্তিদের মোবাইল ফোন জব্দ করার মতো নতুন ক্ষমতা দেওয়া হবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে।
বিরোধী কনজারভেটিভ পার্টি এই বিলকে "দুর্বল" আখ্যা দিয়ে বলেছে, এটি "নৌকা থামাতে পারবে না" এবং আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
কনজারভেটিভ পার্টির ছায়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস ফিলিপ বলেন, "নতুন নেতৃত্বে কনজারভেটিভ পার্টি বাস্তবসম্মত ও কার্যকর অভিবাসন সংস্কার আনছে। আমাদের দেশ আমাদের ঘর, হোটেল নয়।"