চেরনোবিলের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা করেছে রাশিয়া, দাবি ইউক্রেনের
![](http://103.16.74.218/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2025/02/14/chernobyl_radiation_shield.jpg)
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি দাবি করেছেন, রাশিয়ার একটি ড্রোন চেরনোবিল পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্ষতিগ্রস্ত চুল্লির সুরক্ষা আবরণে আঘাত হেনেছে। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) রাতে চালানো ওই হামলায় সেখানে আগুন ধরে যায়, তবে তা দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলেনস্কি। খবর বিবিসির।
জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষক সংস্থা (আইএইএ) জানিয়েছে, আজ শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সকাল পর্যন্ত চেরনোবিলের ভেতরে ও বাইরের রেডিয়েশন স্তর স্বাভাবিক রয়েছে।
রাশিয়া এই হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়েছে, তাদের সেনাবাহিনী ইউক্রেনের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায় না।
আইএইএর প্রধান রাফায়েল মারিয়ানো গ্রোসি জানান, ‘এই ধরনের ঘটনায় কোনো গাফিলতির সুযোগ নেই।’ সংস্থাটি পারমাণবিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে উচ্চ সতর্কতা বজায় রেখেছে।
চেরনোবিলের ক্ষতিগ্রস্ত চুল্লির ওপর তৈরি বিশাল সুরক্ষা শিল্ডটির ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করেছেন জেলেনস্কি। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে তৈরি এই সুরক্ষা আবরণটি ২৭৫ মিটার প্রশস্ত এবং ১০৮ মিটার উঁচু। এটি নির্মাণে খরচ হয়েছে প্রায় ১.৬ বিলিয়ন ডলার এবং আগামী একশ বছর ধরে এটি পারমাণবিক বিকিরণ ছড়িয়ে পড়া ঠেকানোর জন্য তৈরি করা হয়েছে।
তবে যুক্তরাজ্যের পোর্টসমাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জিম স্মিথের মতে, ‘হামলাটি ভয়াবহ হলেও, রেডিয়েশন ঝুঁকি ততটা নেই।’ চুল্লির নিচে থাকা মোটা কংক্রিটের আবরণ পারমাণবিক বিকিরণ আটকে রাখবে বলে তিনি মনে করেন।
এদিকে জেলেনস্কি বলেছেন, ‘প্রতিদিন রাশিয়া ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ও শহরগুলোর ওপর হামলা চালাচ্ছে। এটি স্পষ্ট যে পুতিন কোনো শান্তি আলোচনার জন্য প্রস্তুত নন।’
আজ শুক্রবার মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে তিনি মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সঙ্গে বৈঠকে বসবেন, যেখানে ইউক্রেন যুদ্ধ গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডা হতে পারে।
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/very_big_1/public/images/2025/02/14/chernobyl_radiation_shield_inner.jpg)
আইএইএ জানায়, চেরনোবিলের পাশাপাশি ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত ইউরোপের বৃহত্তম পারমাণবিক কেন্দ্র জাপোরিঝিয়ায় সামরিক উত্তেজনা বাড়ছে।
গত ডিসেম্বরে সংস্থাটির বিশেষজ্ঞদের বহনকারী গাড়িবহর লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালানো হয়, যার জন্য ইউক্রেন ও রাশিয়া পরস্পরকে দায়ী করেছে।
অধ্যাপক স্মিথ বলেন, ‘আমি চেরনোবিলের চেয়ে জাপোরিঝিয়া নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন। কারণ চেরনোবিল এখনও তেজস্ক্রিয়, তবে এটি ‘উত্তপ্ত’ নয়। কিন্তু জাপোরিঝিয়ার চুল্লিগুলো বন্ধ থাকলেও সেখানে এখনও প্রচুর তেজস্ক্রিয় জ্বালানি রয়েছে।’
উল্লেখ্য, ১৯৮৬ সালে চেরনোবিলে ভয়াবহ পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটে, যা ইউরোপ জুড়ে জনস্বাস্থ্য সংকট তৈরি করেছিল।
সরকারি হিসেবে, ওই ঘটনায় প্রাথমিকভাবে ৩১ জনের মৃত্যু হয়। তবে জাতিসংঘের অনুমান অনুসারে এ বিপর্যয়ে প্রাথমিকভাবে ৫০ জন মারা যায়। ২০০৫ সালে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল তেজস্ক্রিয়তার সংস্পর্শে আসার ফলে আরও চার হাজারের বেশি মানুষ রেডিয়েশনজনিত কারণে প্রাণ হারাতে পারেন।