গাজা পুনর্গঠনে আরব পরিকল্পনার প্রতি সমর্থন ইউরোপীয় নেতাদের

গাজা পুনর্গঠনের জন্য আরব-সমর্থিত পরিকল্পনার প্রতি সমর্থন জানিয়েছে শীর্ষ ইউরোপীয় দেশগুলো। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ৫৩ বিলিয়ন ডলার (৪১ বিলিয়ন পাউন্ড) ব্যয়ের কথা বলা হয়েছে এবং ফিলিস্তিনিদের তাদের ভূমি থেকে উচ্ছেদ না করার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। খবর বিবিসির।
মিসরের উদ্যোগে তৈরি এই পরিকল্পনাটি আরব নেতাদের অনুমোদন পেলেও ইসরায়েল ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। ট্রাম্প গাজাকে ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভেরা’ হিসেবে রূপান্তরের একটি বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন।
শনিবার (৮ মার্চ) ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি ও ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এই পরিকল্পনাকে ‘বাস্তবসম্মত’ বলে অভিহিত করেছেন এবং স্বাগত জানিয়েছেন।
এক বিবৃতিতে তারা বলেছেন, প্রস্তাবটি ‘গাজার জনগণের বিপর্যয়কর জীবনযাত্রার দ্রুত এবং টেকসই উন্নতি’ নিশ্চিত করতে পারে।
পরিকল্পনাটিতে গাজায় স্বাধীন বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি অস্থায়ী পরিচালনা কমিটি গঠনের কথা বলছে, যা আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষীদের সহায়তায় পরিচালিত হবে।
এই কমিটি মানবিক সহায়তা তদারকি এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে গাজার প্রশাসনিক কার্যক্রম সাময়িকভাবে পরিচালনা করবে।
এই পরিকল্পনাটি এমন এক সময়ে এসেছে, যখন ১ মার্চ গাজায় ছয় সপ্তাহের অস্ত্রবিরতির প্রথম ধাপ শেষ হওয়ার পর নতুন সংঘাতের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
এদিকে ইসরায়েল নতুন মার্কিন প্রস্তাব গ্রহণের জন্য হামাসকে চাপ দিতে গাজার ত্রাণ প্রবেশে বাধা দিচ্ছে। মার্কিন প্রস্তাব অনুযায়ী, অস্ত্রবিরতির মেয়াদ বাড়ানোর শর্ত হিসেবে হামাসকে আরও ইসরায়েলি বন্দিদের মুক্তি দিতে হবে।

তবে হামাস বলছে, অস্ত্রবিরতির দ্বিতীয় ধাপে ইসরায়েলের পূর্ণ সামরিক প্রত্যাহার নিশ্চিত করতে হবে।
ইসরায়েল সোমবার (১০ মার্চ) কাতারে আলোচনার জন্য একটি প্রতিনিধি দল পাঠাবে বলে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় জানিয়েছে।
হামাসের মুখপাত্র আব্দেল লতিফ আল-কানৌয়া জানিয়েছেন, আগামী সপ্তাহের আলোচনার জন্য ‘ইতিবাচক ইঙ্গিত’ পাওয়া যাচ্ছে।
আরব-সমর্থিত এই পরিকল্পনাটি ট্রাম্পের প্রস্তাবিত মার্কিন তত্ত্বাবধানের বিকল্প হিসেবে দেখা হচ্ছে।
মিসর গত মঙ্গলবার আরব লিগ সম্মেলনে এই পরিকল্পনাটি উপস্থাপন করে, যা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ও হামাসের সমর্থন লাভ করে।
তবে হোয়াইট হাউস ও ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পরিকল্পনাটি গাজার বাস্তব সমস্যার সমাধান করতে পারবে না।
ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের মুখপাত্র ব্রায়ান হিউজ বলেন, ‘একটি ধ্বংসস্তূপে ঢাকা এলাকায় মানবিকভাবে বসবাস করা সম্ভব নয়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এমন একটি গাজা পুনর্গঠনের পক্ষে, যা হামাসমুক্ত।’
অপরদিকে, চার ইউরোপীয় দেশের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তারা ‘আরব উদ্যোগের সাথে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’ এবং এই পরিকল্পনাকে ‘গুরুত্বপূর্ণ বার্তা’ হিসেবে দেখছে।
তারা বলেছে, ‘হামাস গাজার শাসন করতে পারবে না এবং এটি ইসরায়েলের জন্য হুমকি হয়ে থাকতে পারবে না।’
এ ছাড়া, তারা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের ভূমিকা ও তার সংস্কার কর্মসূচির বাস্তবায়নকে সমর্থন জানিয়েছে।
গাজার ২৩ লাখেরও বেশি বাসিন্দা সংঘাতের ফলে বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি হামলায় ৪৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে এবং অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।