ট্রাম্প-পুতিন ফোনালাপ : ইউক্রেনে পূর্ণ যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান রাশিয়ার

ইউক্রেনে তাৎক্ষণিক ও পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তবে, তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনালাপে ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামোর ওপর হামলা সাময়িকভাবে বন্ধ রাখতে সম্মত হয়েছেন। খবর বিবিসির।
ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় সৌদি আরবে ইউক্রেনের সঙ্গে আলোচনায় যে এক মাসের পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব করা হয়েছিল, পুতিন তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি বলেছেন, ইউক্রেনে বিদেশি সামরিক সহায়তা ও গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান বন্ধ না হলে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতি সম্ভব নয়। ইউরোপীয় মিত্ররা ইতোমধ্যেই এই শর্ত প্রত্যাখ্যান করেছে।
তিন বছর ধরে চলমান যুদ্ধের মধ্যে, সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়া তাদের কুরস্ক অঞ্চলের কিছু ভূখণ্ড পুনর্দখল করেছে, যা ছয় মাস আগে ইউক্রেন দখল করেছিল।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) ট্রাম্প-পুতিনের ফোনালাপকে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান থেকে কিছুটা পিছু হটার ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে, উভয় নেতা মধ্যপ্রাচ্যে দ্রুত শান্তি আলোচনার বিষয়ে একমত হয়েছেন।
ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় গত সপ্তাহে জেদ্দায় ইউক্রেনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিনিধি দল ইউক্রেনকে ৩০ দিনের জন্য সম্পূর্ণ যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে রাজি করায়।
ফোনালাপের পর, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ফিনল্যান্ডের হেলসিংকিতে বলেন, তার দেশ জ্বালানি অবকাঠামোতে হামলা বন্ধের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে আগ্রহী।

এদিকে, জেলেনস্কি অভিযোগ করেন, পুতিন যুদ্ধবিরতি প্রত্যাখ্যানের পরপরই রাশিয়া ড্রোন হামলা চালিয়েছে।
জেলেনস্কির দাবি, রাশিয়ার হামলায় সুমি অঞ্চলের একটি হাসপাতাল এবং স্লোভিয়ানস্কের বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে, বেসামরিক অবকাঠামোতে হামলা হয়েছে। আজ পুতিন কার্যত পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন।’
অন্যদিকে, ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, ‘পুতিনের সঙ্গে আমার ফোনালাপ খুবই ভালো ও ফলপ্রসূ হয়েছে। আমরা অবকাঠামো ও জ্বালানি খাতে তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছি এবং দ্রুত পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতি ও চূড়ান্তভাবে যুদ্ধের অবসান ঘটানোর জন্য কাজ করব।’
গত সেপ্টেম্বর মাসে জেলেনস্কি বলেছিলেন, রাশিয়ার হামলায় ইউক্রেনের ৮০ শতাংশ জ্বালানি অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে।
ইউক্রেনও পাল্টা হামলা চালিয়ে রাশিয়ার অভ্যন্তরে তেল ও গ্যাস স্থাপনাগুলোতে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করেছে।
জেদ্দার আলোচনার পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছিলেন, ‘বল এখন রাশিয়ার কোর্টে।’ কিন্তু ট্রাম্প-পুতিন ফোনালাপের পর হোয়াইট হাউস যে বিবৃতি দিয়েছে, তাতে ইউক্রেনের সঙ্গে পূর্ণ যুদ্ধবিরতির প্রসঙ্গ উল্লেখ করা হয়নি।
এতে বলা হয়েছে, ‘শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রথম ধাপ হবে জ্বালানি ও অবকাঠামো যুদ্ধবিরতি। এরপর কৃষ্ণ সাগরে সামুদ্রিক যুদ্ধবিরতি এবং চূড়ান্তভাবে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতির জন্য আলোচনা হবে।’
তবে, ক্রেমলিনের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইউক্রেনের সঙ্গে যেকোনো চুক্তি বাস্তবায়নে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা রয়েছে।’
এ ছাড়া ক্রেমলিন জানিয়েছে, ট্রাম্প রাশিয়ার পেশাদার আইস হকি খেলোয়াড়দের সঙ্গে মার্কিন খেলোয়াড়দের ম্যাচ আয়োজনের পুতিনের প্রস্তাব সমর্থন করেছেন।
ফোনালাপের প্রতিক্রিয়ায়, জেলেনস্কি ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গিকে রাশিয়ার কৌশলগত সময়ক্ষেপণ বলে মনে করছেন।
এদিকে, জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস ও ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এটিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে উল্লেখ করেছেন, তবে তারা আবারও সম্পূর্ণ যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমারও জেলেনস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন এবং যুক্তরাজ্যের ‘অটল সমর্থন’ নিশ্চিত করেছেন বলে ডাউনিং স্ট্রিট জানিয়েছে।