কৃষ্ণ সাগরে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত রাশিয়া-ইউক্রেন

রাশিয়া ও ইউক্রেন আলাদাভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি করে কৃষ্ণ সাগরে নৌযুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। সৌদি আরবে তিন দিনব্যাপী শান্তি আলোচনার পর এই চুক্তি সম্পন্ন হয়। খবর বিবিসির।
ওয়াশিংটন জানিয়েছে, এই চুক্তি একটি ‘স্থিতিশীল ও দীর্ঘস্থায়ী শান্তি’ প্রতিষ্ঠার দিকে এগিয়ে যাওয়ার পদক্ষেপ এবং এটি কৃষ্ণ সাগরের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য পথ পুনরায় চালু করবে।
এ ছাড়া, পূর্বে হওয়া একটি চুক্তির ভিত্তিতে একে অপরের জ্বালানি অবকাঠামোতে হামলা না চালানোর ব্যাপারে উভয় পক্ষ ‘ব্যবস্থা গ্রহণে’ সম্মত হয়েছে বলে হোয়াইট হাউস জানিয়েছে।
তবে রাশিয়া বলেছে, এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে তখনই, যখন তাদের খাদ্য ও সার বাণিজ্যের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞাগুলো তুলে নেওয়া হবে।
যুক্তরাষ্ট্র আলাদাভাবে রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে রিয়াদে বৈঠক করেছে, তবে রুশ ও ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিরা সরাসরি একে অপরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেনি।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি একে ‘সঠিক দিকের পদক্ষেপ’ বলে অভিহিত করেছেন।
কিয়েভে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘এটি সফল হবে কিনা তা বলার জন্য এখনও খুব তাড়াতাড়ি হবে, তবে এটি সঠিক বৈঠক, সঠিক সিদ্ধান্ত ও সঠিক পদক্ষেপ ছিল’।
তিনি আরও বলেন, ‘এই চুক্তির পর কেউ ইউক্রেনকে শান্তি প্রতিষ্ঠার পথে এগিয়ে না যাওয়ার অভিযোগ করতে পারবে না।’
তবে যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষণা আসার কিছুক্ষণ পরই ক্রেমলিন জানায়, কৃষ্ণ সাগরের যুদ্ধবিরতি ততক্ষণ কার্যকর হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত রাশিয়ার ব্যাংক, উৎপাদক, খাদ্য ও সার রপ্তানির সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীদের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া না হবে।
রাশিয়ার দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর সুইফটে পেমেন্ট সিস্টেমে পুনরায় সংযোগ স্থাপন, খাদ্য বাণিজ্যে রুশ পতাকাবাহী জাহাজগুলোর পরিষেবার ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার এবং কৃষি যন্ত্রপাতিসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর সরবরাহ পুনরায় চালু করা।
হোয়াইট হাউসের বিবৃতিতে চুক্তিটি কবে কার্যকর হবে তা স্পষ্ট করা হয়নি।

নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার বিষয়ে জানতে চাইলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা সব কিছু নিয়ে ভাবছি। আমরা বিষয়গুলো পর্যালোচনা করছি।’
ওয়াশিংটনের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার কৃষি ও সার রপ্তানির জন্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠায় সহায়তা করবে।
কিয়েভে দেওয়া বক্তব্যে জেলেনস্কি এটিকে ‘অবস্থান দুর্বল করার’ লক্ষণ বলে অভিহিত করেন।
তিনি সতর্ক করে বলেন, যদি মস্কো তাদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে, তাহলে ইউক্রেন রাশিয়ার ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা ও যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে বাড়তি সামরিক সহায়তা চাইবে।
পরে, রাতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে জেলেনস্কি ক্রেমলিনের দাবিকে ‘মিথ্যা’ বলে আখ্যা দেন।
ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুস্তেম উমেরভ বলেন, ‘তৃতীয় দেশগুলো’ চুক্তিটির কিছু অংশের তদারকি করতে পারে।
তিনি আরও বলেন, রুশ যুদ্ধজাহাজগুলো যদি ‘কৃষ্ণ সাগরের পূর্বাঞ্চলীয় অংশ’ ছাড়িয়ে চলে যায়, তাহলে সেটি চুক্তির লঙ্ঘন হিসেবে গণ্য হবে এবং ইউক্রেনের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। ‘এক্ষেত্রে, ইউক্রেন আত্মরক্ষার পূর্ণ অধিকার সংরক্ষণ করবে’।
২০২২ সালে রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণের পর কৃষ্ণ সাগরের বাণিজ্যিক জাহাজগুলোর নিরাপদ চলাচলের জন্য একটি চুক্তি হয়েছিল।
এই চুক্তির মাধ্যমে ইউক্রেনের শস্য, সূর্যমুখী তেল ও অন্যান্য খাদ্য উৎপাদনে প্রয়োজনীয় পণ্য, যেমন সার, নিরাপদে পরিবহন করা হতো।
প্রাথমিকভাবে ১২০ দিনের জন্য কার্যকর হওয়া চুক্তিটি কয়েকবার নবায়ন করা হলেও ২০২৩ সালের জুলাইয়ে রাশিয়া এটি থেকে বেরিয়ে আসে। তারা অভিযোগ করে যে চুক্তির গুরুত্বপূর্ণ শর্তগুলো বাস্তবায়িত হয়নি।
সর্বশেষ আলোচনার পর, উভয় দেশ একে অপরের জ্বালানি অবকাঠামোতে হামলা বন্ধের ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করতেও সম্মত হয়েছে।