মিয়ানমার-থাইল্যান্ডে ভূমিকম্পে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ, নিহত ১৫০ ছাড়াল

মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডে আঘাত হানা শক্তিশালী ভূমিকম্পে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞে উদ্ধার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আজ শনিবার (২৯ মার্চ) সকাল পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ১৫০ ছাড়িয়েছে। খবর বার্তা সংস্থা এএফপির।
গতকাল শুক্রবার দুপুরে মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় সাগাইং শহরের উত্তর-পশ্চিমে ৭ দশমিক ৭ মাত্রার অগভীর ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। কয়েক মিনিটের মধ্যে ৬ দশমিক ৭ মাত্রার আরেকটি আফটারশক অনুভূত হয়।
ভূমিকম্পের কারণে মিয়ানমারের বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে ভবন ধসে পড়েছে, সেতু ভেঙে গেছে এবং রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্ডালায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে।
মিয়ানমারের জান্তা প্রধান মিন অং হ্লাইংয়ের জানান, দেশটিতে অন্তত ১৪৪ জন নিহত এবং ৭০০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। তবে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় সামরিক শাসিত রাষ্ট্রটি থেকে প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও জানা সম্ভব হয়নি।
মার্কিন ভূতাত্ত্বিকদের মতে, এটি ছিল এক শতাব্দীরও বেশি সময়ের মধ্যে মিয়ানমারে আঘাত হানা সবচেয়ে বড় ভূমিকম্প। এর কম্পন এতটাই শক্তিশালী ছিল যে, কেন্দ্রস্থল থেকে শত শত কিলোমিটার দূরে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককের ভবনগুলোও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ব্যাংককের চাটুচাক সাপ্তাহিক বাজারের কাছে নির্মাণাধীন একটি ৩০তলা আকাশচুম্বী ভবন ধসে পড়ে। ওই ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়া শ্রমিকদের উদ্ধারের রাতভর চেষ্টা চালান উদ্ধারকারীরা।
ব্যাংককের গভর্নর চাদচার্ট সিট্টিপুন্টর বরাতে এএফপি জানায়, শহরটিতে প্রায় ১০ জন নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই আকাশচুম্বী ভবনটি ধসে মারা গেছেন। তবে ধসে পড়া ওই ভবনে এখনও প্রায় ১০০ জন শ্রমিক আটকা রয়েছেন।
চাদচার্ট সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা আমাদের সীমিত সরঞ্জাম দিয়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। প্রতিটি জীবন মূল্যবান। তাদের সবাইকে বাঁচানোর জন্য আমরা দ্রুত কাজ করছি।’
ব্যাংকক সিটি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দুই হাজারেরও বেশি ভবনের ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। ভবনগুলোর নিরাপত্তা পরিদর্শনের জন্য ১০০ জনেরও বেশি প্রকৌশলীকে মোতায়েন করা হবে।
চাদচার্ট আরও জানান, প্রায় ৪০০ জন শহরের পার্কগুলোতে রাত কাটাতে বাধ্য হয়েছেন। কারণ তাদের বাড়িগুলো বসবাসের জন্য নিরাপদ না।

ব্যাংককে শক্তিশালী ভূমিকম্প বিরল। গতকাল শুক্রবারের ভূমিকম্পের কারণে শহরের দোকানদার ও কর্মীরা আতঙ্কিত হয়ে রাস্তায় নেমে আসেন। কোনো ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ না ঘটলেও, শহরের উঁচু অ্যাপার্টমেন্ট ও হোটেলগুলোর ছাদের সুইমিং পুল থেকে পানি রাস্তায় ছিটকে পড়ার মতো কিছু নাটকীয় দৃশ্য দেখা গেছে। এমনকি হাসপাতালগুলোও খালি করা হয়েছিল। একজন নারী হাসপাতালের বাইরে সন্তান জন্ম দেন।
মিয়ানমারে ভূমিকম্প তুলনামূলকভাবে সাধারণ ঘটনা। ইউএসজিএসের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৩০ থেকে ১৯৫৬ সালের মধ্যে সাগাইং ফল্টের কাছে ৭ দশমিক ০ বা তার বেশি মাত্রার ছয়টি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। ২০১৬ সালে প্রাচীন শহর বাগানে ৬ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে তিনজন নিহত হন এবং অনেক মন্দির ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দেশটির রাজধানী নেপিদোসহ ছয়টি অঞ্চল এবং থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককেও জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে।
এদিকে ভূমিকম্পের পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ‘এটি সত্যিই ভয়াবহ। আমরা তাদের সাহায্য করব। ইতোমধ্যে তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে।’
ভারত, ফ্রান্স ও ইউরোপীয় ইউনিয়নও সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) জানিয়েছে, তারা ট্রমা ইনজুরি সরঞ্জাম প্রস্তুত করছে।