বাণিজ্যে চীনকেই কেন আঘাত করছেন ট্রাম্প? এরপর কী হতে পারে

হঠাৎ করেই ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধ এখন অনেক বেশি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। পুরো বিশ্বের সঙ্গে লড়াইয়ের বদলে এটি এখন যেন ফিরে এসেছে তাঁর চেনা ময়দানে – যুক্তরাষ্ট্র বনাম চীন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের ওপর আরোপিত প্রতিশোধমূলক শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করলেও, সামগ্রিকভাবে ১০ শতাংশ শুল্ক এখনও বহাল আছে। তবে চীনকে কঠোরভাবে টার্গেট করা হয়েছে – যেখানে শুল্ক হার দাঁড়িয়েছে চমকে দেওয়ার মতো ১২৫ শতাংশে।
আজ বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
ট্রাম্প বলেছেন, বেইজিং ৮৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে আমেরিকার পণ্যের ওপর প্রতিশোধ নেওয়ার যে পরিকল্পনা করেছে, সেটিই এই পদক্ষেপের কারণ। তিনি এটিকে ‘অসম্মান’ হিসেবেই দেখছেন।
তবে এই লড়াই কেবল প্রতিশোধ নয়, বরং ট্রাম্পের কাছে এটি তার প্রথম মেয়াদের অসমাপ্ত কাজের অংশ। প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথমবার নির্বাচিত হওয়ার পেছনে তাঁর ‘চীন বিরোধী’ বার্তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।
ট্রাম্প বলেন, “আমরা তখন ঠিকমতো কাজ করার সময় পাইনি, যা এখন করছি।”
এই যুদ্ধের লক্ষ্য শুধু চীনকে দমন করা নয়, বরং বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থার ভিত্তিটাকেই চ্যালেঞ্জ করা।
ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের বাণিজ্য যুদ্ধ ঐতিহাসিক প্রভাব ফেলেছিল। এমনকি তাঁর উত্তরসূরি জো বাইডেনও অনেক শুল্ক বহাল রেখেছেন।
তবুও, এই শুল্ক নীতিগুলো চীনের অর্থনৈতিক কাঠামো বদলাতে পারেনি। চীন এখন বিশ্বের ৬০ শতাংশ বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরি করে এবং বিশ্বের ৮০ শতাংশ ব্যাটারি উৎপাদন করে।
এখন ট্রাম্প আবার ফিরেছেন এবং শুল্কের পাল্টা শুল্কের এই নতুন পর্ব শুরু হয়েছে।

এর ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তিনটি প্রশ্নের ওপর:
১. চীন কি আলোচনায় বসবে?
২. যদি বসেও, তবে তারা কি আমেরিকার চাওয়া বড় ধরনের ছাড় দেবে – বিশেষ করে তাদের রপ্তানিনির্ভর অর্থনীতি ঢেলে সাজানো?
৩. শেষত, আমেরিকাই বা এখনও ফ্রি ট্রেডে বিশ্বাস করে কি না?
ট্রাম্প বারবার বলেছেন, শুল্ক কেবল একটি উপায় নয়, বরং নিজের মধ্যেই একটি লক্ষ্য। তাঁর মতে, এটি দেশের শিল্পে বিনিয়োগ বাড়ায়, বিদেশ থেকে শিল্প ফিরিয়ে আনে এবং সরকারকে রাজস্ব দেয়।
যদি চীন মনে করে আমেরিকার এই পদক্ষেপ আসলে আলোচনার জন্য নয়, তবে তারা আলোচনায় বসার প্রয়োজনই অনুভব নাও করতে পারে।
ফলে, এই পরিস্থিতি গড়াতে পারে একটি দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক দ্বন্দ্বে—যেখানে সহযোগিতার বদলে থাকবে শীর্ষে ওঠার লড়াই। তা হলে, ভেঙে যাবে পুরনো বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থার ভিত্তি—আর সামনে অপেক্ষা করছে এক অনিশ্চিত এবং ঝুঁকিপূর্ণ ভবিষ্যৎ।