পেন্টাগন প্রধানের দ্বিতীয় সিগন্যাল চ্যাট ফাঁস

মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ ইয়েমেনের হুথিদের বিরুদ্ধে মার্চ মাসে পরিচালিত একটি সামরিক হামলার বিস্তারিত তথ্য তার স্ত্রী, ভাই এবং ব্যক্তিগত আইনজীবীসহ অন্তত ১২ জনের একটি সিগন্যাল গ্রুপ চ্যাটে শেয়ার করেছিলেন। স্থানীয় সময় গতকাল রোববার (২০ এপ্রিল) একটি বিশ্বস্ত সূত্র রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়েছে।
দ্বিতীয় সিগন্যাল চ্যাটের তথ্য সামনে আসায় হেগসেথের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষ করে এমন এক সময়ে যখন অভ্যন্তরীণ তদন্তের অংশ হিসেবে পেন্টাগনের একাধিক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, এই চ্যাটটি মূলত তার সচিব হওয়ার নিশ্চিতকরণ প্রক্রিয়ার সময় প্রশাসনিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে গঠিত হয়েছিল, তবে পরবর্তীতে সেখানে সামরিক আক্রমণের সময়সূচি সম্পর্কিত সংবেদনশীল তথ্যও শেয়ার করা হয়।
এমন তথ্য প্রথম আলোচনায় আসে গত মাসে, যখন দ্য আটলান্টিকের সম্পাদক জেফরি গোল্ডবার্গকে ভুলবশত একটি আলাদা সিগন্যাল চ্যাটে যুক্ত করা হয়, যেখানে ট্রাম্প প্রশাসনের শীর্ষ জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তারাও যুক্ত ছিলেন। এরপর চ্যাটের সামরিক পরিকল্পনার কিছু অংশ জনসমক্ষে আসে।
হেগসেথের স্ত্রী ফক্স নিউজের প্রাক্তন প্রযোজক জেনিফার প্রায়ই বিদেশি সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত সংবেদনশীল বৈঠকে অংশ নিয়েছেন। মার্চে ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা সচিবের সঙ্গে পেন্টাগনে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে জেনিফারকে হেগসেথের পেছনে বসে থাকতে দেখা যায়।
তার ভাই যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের পেন্টাগন সংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করছেন।
ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষপাতিত্ব ও মিডিয়া বিদ্বেষ
হেগসেথ পেন্টাগনে থাকার সময় থেকেই তথ্য ফাঁসের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নিয়েছেন, যা ট্রাম্প প্রশাসনের সাধারণ নীতি। তবে পেন্টাগনের মুখপাত্র শন পারনেল কোনো প্রমাণ ছাড়াই দাবি করেছেন, “ট্রাম্পবিরোধী গণমাধ্যম অসন্তুষ্ট সাবেক কর্মীদের অভিযোগকে ভিত্তি করে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করছে।”
পারনেল আরও বলেন, “আমরা ইতোমধ্যে মার্কিন সেনাবাহিনীর জন্য অনেক কিছু অর্জন করেছি এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এজেন্ডা বাস্তবায়নের পথে আমরা কখনও পিছু হটব না।”
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র আনা কেলিও বলেন, “সম্প্রতি বরখাস্ত হওয়া তথাকথিত ‘ফাঁসকারীরা’ এখন মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে নিজেরা সান্ত্বনা খুঁজছে এবং প্রেসিডেন্টের পরিকল্পনাকে দুর্বল করতে চাইছে।”
রাজনৈতিক চাপ ও পদত্যাগের দাবি
ডেমোক্রেট আইনপ্রণেতারা বলেছেন, হেগসেথের আর এই পদে থাকা উচিত নয়। সিনেট সংখ্যালঘু দলের নেতা চাক শুমার এক্সে (সাবেক টুইটার) বলেন, “আমরা প্রতিনিয়ত জানতে পারছি হেগসেথ কিভাবে জীবন বিপন্ন করেছেন। কিন্তু ট্রাম্প এখনও তাকে বরখাস্ত করতে সাহস পাচ্ছেন না। তাকে বরখাস্ত করতেই হবে।”
ইরাক যুদ্ধে অংশ নিয়ে গুরুতর আহত সিনেটর ট্যামি ডাকওর্থ বলেন, “হেগসেথকে লজ্জায় পড়েই পদত্যাগ করতে হবে।”
পেন্টাগনের এক সিনিয়র কর্মকর্তা প্রশ্ন তোলেন, “এই পরিস্থিতির পরেও কিভাবে তিনি তার পদে বহাল থাকতে পারেন?”

সাম্প্রতিক বরখাস্ত ও বিতর্ক
হেগসেথের অন্যতম ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা ড্যান ক্যাল্ডওয়েল সম্প্রতি ফাঁস তদন্তের আওতায় আসার পর তাকে পেন্টাগন থেকে বের করে দেওয়া হয়। যদিও তিনি তেমন পরিচিত মুখ নন, তবুও তিনি সিগন্যাল চ্যাটে পেন্টাগনের ‘পয়েন্ট পারসন’ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছিলেন।
এক্সে দেওয়া এক পোস্টে ক্যাল্ডওয়েল লিখেছেন, “আমাদের সেবা শেষ হওয়ার পদ্ধতিতে আমরা অত্যন্ত হতাশ। কিছু নামহীন কর্মকর্তা আমাদের সুনামকে ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করছেন।”
ক্যাল্ডওয়েলের পর হেগসেথের উপ-চিফ অব স্টাফ ড্যারিন সেলনিক এবং ডেপুটি ডিফেন্স সেক্রেটারির চিফ অব স্টাফ কলিন ক্যারলকেও প্রশাসনিক ছুটিতে পাঠিয়ে পরে বরখাস্ত করা হয়েছে।
এই ঘটনাগুলো হেগসেথের নেতৃত্ব নিয়ে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে যখন মার্কিন সামরিক তৎপরতা ব্যাপক আকার নিচ্ছে, তখন পেন্টাগনের এমন অস্থিরতা প্রশাসনের জন্য বড় হুমকিতে পরিণত হয়েছে।