নতুন পোপ নির্বাচন করা হবে যেভাবে

বিশ্বের ১৪০ কোটিরও বেশি ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস বেশ কয়েক মাস অসুস্থ ছিলেন। গতকাল সোমবার (২১ এপ্রিল) মারা যান তিনি। ক্যাথলিকদের প্রধান এ ধর্মগুরুর মৃত্যুর পর অনেক নিয়ন-নীতি মেনে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে। ৮৮ বছর বয়সে মারা যাওয়া ফ্রান্সিস ছিলেন দক্ষিণ আমেরিকার কোনো দেশ থেকে আসা প্রথম পোপ। খবর বিবিসির।
তবে পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুর পর নতুন করে পোপ নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। নতুন পোপ হবেন এ নিয়ে চলছে জল্পনা-কল্পনা। পোপ নির্বাচন প্রক্রিয়াই বেশ জটিল। এক্ষেত্রে কয়েকশ বছরের পুরোনো রীতি অনুসরণ করে ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের প্রধান ধর্মগুরু নির্বাচন করা হবে।
নতুন পোপ নির্বাচন করেন কারা?
ক্যাথলিক চার্চের শীর্ষ ধর্মযাজক, যারা ‘কলেজ অব কার্ডিনালস’ নামে পরিচিত, তারাই ভোট দিয়ে নতুন পোপ নির্বাচন করেন। এসব কার্ডিনালদের সবাই পুরুষ। তারা সরাসরি পোপ কর্তৃক বিশপ হিসেবে নিযুক্ত হন।
বর্তমানে মোট ২৫২ জন ক্যাথলিক কার্ডিনাল রয়েছেন, যাদের মধ্যে নতুন পোপ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন ১৩৫ জন।
অন্য কার্ডিনালদের বয়স ৮০ বছরের বেশি হওয়ায় তারা সরাসরি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। তবে নতুন পোপ হিসেবে কাকে নির্বাচিত করা উচিত, সেই বিতর্কে অংশ নিয়ে তারা নিজেদের মতামত জানাতে পারবেন।
নতুন পোপ বেছে নেওয়া হয় কীভাবে?
যখন একজন পোপ মারা যান অথবা পদত্যাগ করেন (যেমনটি ২০১৩ সালে পোপ বেনেডিক্ট ষোড়শের ক্ষেত্রে ঘটেছিল, যেটি ছিল বিরল ঘটনা), তখন ভ্যাটিকানে কার্ডিনালদের একটি সম্মেলন ডাকা হয়। তারপর কনক্লেভ অনুষ্ঠিত হয়, যেটি পোপ নির্বাচনের সময় হিসেবে পরিচিত।
বর্তমান পোপের মৃত্যুর পর থেকে নতুন পোপ নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত মধ্যবর্তী সময়কালে ‘কলেজ অব কার্ডিনালস’ই গির্জার যাবতীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে থাকেন।
পোপ নির্বাচনের ভোট অনুষ্ঠিত হয় চিত্রশিল্পী মাইকেলেঞ্জেলোর আঁকা বিখ্যাত সিস্টিন চ্যাপেলের ভেতরে। কঠোর গোপনীয়তার সঙ্গে সেখানে কার্ডিনালরা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেন। নতুন পোপ নির্বাচনের এই প্রক্রিয়ায় বেশ কয়েক দিন সময় লেগে যেতে পারে। অতীতে এক সপ্তাহ, এমনকি এক মাস সময় ধরেও ভোট চলতে দেখা গেছে। ভোট চলাকালে কার্ডিনালদের মধ্যে কেউ কেউ মারা গেছেন, এমন ঘটনারও নজির আছে।
এই সময় নতুন পোপ নির্বাচন কতটুকু এগোলো, সেটি বোঝার একমাত্র উপায় হলো ধোঁয়া। নির্বাচন চলাকালে প্রতিবার ভোট শেষে নির্দিষ্ট চুল্লিতে ব্যালট পেপার পুড়িয়ে ফেলা হয়। এর ফলে দিনে দু’বার যে ধোঁয়া বের হয়, সেটিই নতুন পোপের বিষয়ে ইঙ্গিত দেয়। কালো ধোঁয়ার অর্থ হলো পোপ নির্বাচন হয়নি। আর সাদা ধোঁয়া দেখার মানে হলো নতুন পোপ নির্বাচিত হয়েছেন।

নতুন পোপের ঘোষণা আসে যেভাবে
সাদা ধোঁয়া দেখা যাওয়ার পর সাধারণত ঘণ্টা খানেকের মধ্যে নতুন পোপ ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে সেন্ট পিটার্স স্কয়ারের বারান্দায় এসে দাঁড়ান।
এরপর কনক্লেভে অংশগ্রহণকারী একজন জ্যেষ্ঠ কার্ডিনাল আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন পোপের বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানান। তিনি ল্যাটিন ভাষায় চিৎকার করে বলেন, ‘হ্যাবেমাস পাপাম’, বাংলায় যার অর্থ দাঁড়ায়, ‘আমাদের একজন পোপ আছেন’।
কার্ডিনাল এরপর নতুন পোপের নাম ঘোষণা করেন। এসময় নতুন পোপকে যে নামে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়ে থাকে, সেটি তার আসল নাম হতে পারে, আবার নাও হতে পারে।
পোপ ফ্রান্সিসই এক্ষেত্রে বড় উদাহরণ। তার প্রকৃত নাম ছিল জর্জ মারিও বার্গোগলিও। কিন্তু তেরো শতকের ধর্মপ্রচারক ও প্রাণী প্রেমিক অ্যাসিসির সেন্ট ফ্রান্সিসের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি নিজের নতুন নাম দেন ‘পোপ ফ্রান্সিস’। গত একযুগ ধরে পৃথিবীতে তিনি ওই নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন।
পোপ হওয়ার যোগ্যতা কী?
তাত্ত্বিকভাবে বললে বলা যায়, ব্যাপ্টাইজ বা বাপ্তিস্ম হওয়া যে কোনো রোমান ক্যাথলিক পুরুষই পোপ হতে পারেন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, ভ্যাটিকানের কার্ডিনালরা তাদের নিজেদের মধ্য থেকেই একজনকে পোপ হিসেবে বেছে নিতে পছন্দ করেন।
২০১৩ সালের নির্বাচনে আর্জেন্টিনায় জন্মগ্রহণকারী জর্জ মারিও বার্গোগলিও, যিনি পোপ ফ্রান্সিস নামে পরিচিত, তিনি পোপ নির্বাচিত হন। দক্ষিণ আমেরিকায় বিশ্বের প্রায় ২৮ শতাংশ ক্যাথলিক খ্রিষ্টান বসবাস করে, সেখান থেকে প্রথমবারের মতো পোপ নির্বাচিত হন ফ্রান্সিস।
কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, নতুন পোপ নির্বাচনের ক্ষেত্রে কার্ডিনালরা সাধারণত একজন ইউরোপীয়, বিশেষ করে একজন ইতালিয়কেই বেছে নেন।
এখন পর্যন্ত নির্বাচিত ২৬৬ জন পোপের মধ্যে ২১৭ জনই এসেছেন ইতালি থেকে।