গাজায় নিরস্ত্রদের গুলি করার ‘নির্দেশ’ পেয়েছিলেন ইসরায়েলি সেনারা

গাজায় খাদ্য সহায়তা নিতে আসা নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের ওপর ইচ্ছাকৃতভাবে গুলি চালিয়েছে ইসরায়েলি সেনারা, আর এই নির্দেশ এসেছে তাদের কমান্ডারদের কাছ থেকে। গতকাল শুক্রবার (২৭ জুন) ইসরায়েলের হারেৎজ পত্রিকার প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। খবর আলজাজিরার।
হারেৎজ জানায়, কিছু সেনার এই স্বীকারোক্তির পর ইসরায়েল সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তদন্তে নির্দেশ দিয়েছে।
গাজার সরকারি গণমাধ্যম অফিস বৃহস্পতিবার জানায়, ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ)-এর পরিচালিত খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রগুলোতে খাদ্যের জন্য অপেক্ষারত অবস্থায় অন্তত ৫৪৯ জন নিহত এবং চার হাজার ৬৬ জন আহত হয়েছেন। মে মাসে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই ফাউন্ডেশন নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা চলছে।
হারেৎজের প্রতিবেদনে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেনাদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, সেনাদের বলা হয়েছিল ফিলিস্তিনিদের ভিড় লক্ষ্য করে গুলি চালাতে এবং যারা কোনো হুমকি তৈরি করেনি তাদের বিরুদ্ধেও প্রাণঘাতী শক্তি ব্যবহার করতে।
এক সেনা বলেন, “আমরা ট্যাঙ্ক থেকে মেশিনগান চালিয়েছি, গ্রেনেডও নিক্ষেপ করেছি। একবার কুয়াশার মধ্যে অগ্রসর হওয়া একদল বেসামরিক মানুষকে গুলি করে হত্যা করা হয়।”
অন্য এক সেনা জানান, তারা যেখানে অবস্থান করছিলেন, সেখানে “প্রতিদিন ১ থেকে ৫ জন মানুষ নিহত হচ্ছিলেন।” তিনি একে “একটি হত্যার মাঠ” হিসেবে বর্ণনা করেন।
‘দমন পদ্ধতি’ হিসেবে গুলি
জিএইচএফ-এর বিতরণকেন্দ্রগুলোর ঘটনাগুলোতে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরীণ তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে হারেৎজ।
প্রতিবেদনের লেখক নির হাসন আলজাজিরাকে বলেন, “এটি মানুষকে দমনের জন্য করা হয়েছে। নিরস্ত্র মানুষের ওপর গুলি চালিয়ে তাদের এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।”
ইসরায়েলি প্রতিক্রিয়া
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে এই অভিযোগগুলো “দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান” করেছে। প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ এই প্রতিবেদনের নিন্দা করে একে “রক্তমিথ্যা” আখ্যা দিয়েছেন। তারা বলেন, “আইডিএফ (ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী) সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠিন পরিবেশে কাজ করছে, নিরীহ মানুষকে আঘাত না করার স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া আছে।”
জিএইচএফ বিতরণকেন্দ্রগুলো ‘মৃত্যুকূপ’
গাজার সরকারি গণমাধ্যম অফিস জানিয়েছে, হারেৎজের “হৃদয়বিদারক স্বীকারোক্তি” প্রমাণ করছে সহায়তা কেন্দ্রগুলোতে “যুদ্ধাপরাধ” হচ্ছে। তারা বলছে, “নিরস্ত্র বেসামরিকদের ওপর ভারী অস্ত্র ব্যবহার গণহত্যার নীতি প্রমাণ করে।”
আলজাজিরার হামদা সালহুত বলেন, “গাজাবাসীরা বলছেন, এই সহায়তা কেন্দ্রগুলো এখন ফিলিস্তিনিদের জন্য মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে।”

জিএইচএফ বর্তমানে গাজার কেন্দ্র ও দক্ষিণে চারটি কেন্দ্রে খাবার বিতরণ করছে, যেখানে হামলা ক্রমেই বেড়েছে। শুক্রবারও খাদ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে দক্ষিণ গাজায় ছয়জন গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
জিএইচএফ-এর বিতরণকেন্দ্রগুলো নিয়ে জাতিসংঘসহ অনেক ত্রাণ সংস্থা কড়া সমালোচনা করেছে। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, “গাজায় আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘিত হচ্ছে — এতে কোনো সন্দেহ নেই। এ ধরনের লঙ্ঘনের জন্য জবাবদিহি থাকতে হবে।”
ডাক্তারি সহায়তা সংস্থা এমএসএফও (ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস) বলেছে, “জিএইচএফ-এর বিতরণ কেন্দ্রগুলো মানবিক সহায়তার নামে গণহত্যার মঞ্চ।”
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ হিসাবে, অক্টোবর ২০২৩ থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি অভিযানে অন্তত ৫৬ হাজার ৩৩১ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১ লাখ ৩২ হাজার ৬৩২ জন আহত হয়েছেন।