ইউরোপের তিন শক্তিধর দেশের সঙ্গে ইরানের পরমাণু আলোচনা শুক্রবার

ইউরোপের তিন শক্তিধর দেশ ফ্রান্স, জার্মানি ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ইরানের বহুল প্রতীক্ষিত পরমাণু আলোচনা শুক্রবার (২৫ জুলাই) তুরস্কের ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ইউরোপের এই তিন দেশ সম্প্রতি হুঁশিয়ারি দিয়েছিল যে, আলোচনা শুরু না হলে বা ফলপ্রসূ না হলে আগস্টের শেষ নাগাদ ইরানের ওপর আবারও আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। খবর আল জাজিরার।
এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হচ্ছে এমন এক সময়ে, যখন ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র গত মাসে ইরানের পরমাণু স্থাপনায় আক্রমণ চালানোর পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি প্রধান ও ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচির মধ্যে প্রথমবারের মতো ফোনালাপ হয়।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে একটি পরমাণু চুক্তিতে পৌঁছায় যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, চীন, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র। তবে ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র সেই চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসে। এই চুক্তির আওতায় ইরানের পরমাণু কর্মসূচির ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছিল।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাঘায়ি জানিয়েছেন, “যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানির সঙ্গে ইরানের বৈঠক উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে অনুষ্ঠিত হবে।”
ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পূর্বে ওমানের মধ্যস্থতায় পাঁচ দফা আলোচনা হয়েছিল, তবে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ইস্যুতে বড় ধরনের মতপার্থক্যের কারণে তা অগ্রগতি পায়নি। পশ্চিমা দেশগুলো ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ শূন্যে নামিয়ে আনতে চায়, যাতে এর সামরিকীকরণের আশঙ্কা না থাকে। কিন্তু তেহরান সব সময় বলে এসেছে, তাদের পরমাণু কর্মসূচি শুধুই বেসামরিক উদ্দেশ্যে।
ইসরায়েলের আকস্মিক হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রও ইরানের তিনটি বড় পরমাণু স্থাপনায় হামলা চালায় এবং দাবি করে যে তারা সেগুলো “সম্পূর্ণ ধ্বংস” করেছে। এইসব হামলায় শীর্ষ ইরানি সামরিক কর্মকর্তা, পরমাণু বিজ্ঞানী এবং শত শত বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। হামলার পর গত ২৪ জুন একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়।
ইরান এই হামলার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে “সহযোগী” হিসেবে দায়ী করেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরাগচি বলেন, “ইইউ বা ইউরোপীয় তিন দেশ যদি আলোচনায় ভূমিকা রাখতে চায়, তাহলে তাদের হুমকি ও চাপের নীতি পরিহার করতে হবে। ‘স্ন্যাপ-ব্যাক’ নিষেধাজ্ঞার মতো পদক্ষেপ নৈতিক বা আইনগতভাবে অবৈধ।”
এদিকে, মধ্যপ্রাচ্যের উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যেই রোববার হঠাৎ করে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মস্কোতে ইরানের সর্বোচ্চ নেতার পরমাণু বিষয়ক শীর্ষ উপদেষ্টা আলি লারিজানির সঙ্গে বৈঠক করেছেন।

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানান, বৈঠকে মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা এবং ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ঘিরে রাশিয়ার মূল্যায়ন লারিজানি তুলে ধরেন। পুতিন ইরানের সংকট নিরসনে রাশিয়ার অবস্থান ও রাজনৈতিক সমাধানের ওপর জোর দেন।
রাশিয়া ইরানের ধর্মীয় নেতৃত্বের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখলেও, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক বোমা হামলার পর মস্কো জোরালো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। তবু রাশিয়া কূটনৈতিক সমাধানের পক্ষে অবস্থান বজায় রেখেছে।