পাকিস্তানে ভয়াবহ বন্যায় চার পর্যটকের মৃত্যু, নিখোঁজ ১৫

পাকিস্তানের গিলগিট-বালটিস্তানের দায়ামার জেলার বাবুসার এলাকায় ভারি বৃষ্টিপাতের ফলে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় অন্তত চারজন পর্যটক নিহত হয়েছেন এবং দুইজন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরও ১৫ জন নিখোঁজ রয়েছেন। সোমবার (২১ জুলাই) এই ঘটনা ঘটে বলে নিশ্চিত করেছে স্থানীয় প্রশাসন। খবর ডনের।
গিলগিট-বালটিস্তান সরকারের মুখপাত্র ফাইজুল্লাহ ফারাক জানান, ঠাক এলাকায় বন্যার স্রোতে আটটি পর্যটকবাহী গাড়ি ভেসে গেছে। নিহতদের মধ্যে একজন নারী পাঞ্জাবের লোধরান জেলার বাসিন্দা ছিলেন। আহত ও নিহতদের স্থানীয় হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
ঘটনার পর বাবুসার হাইওয়ে বন্ধ হয়ে গেছে। বিদ্যুৎ এবং যোগাযোগব্যবস্থাও ভেঙে পড়েছে। ফারাক আরও জানান, স্থানীয় বাসিন্দারা শত শত আটকে পড়া পর্যটকদের আশ্রয় দিয়েছেন এবং উদ্ধারকার্য চলছে।
ডায়ামারের সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা (এসএসপি) আব্দুল হামিদ জানান, বন্যার তীব্রতা অত্যন্ত উদ্বেগজনক এবং প্রায় সাত কিলোমিটার এলাকাজুড়ে এই ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে। কমপক্ষে তিনটি পর্যটকবাহী গাড়ি চোখের সামনে ভেসে যেতে দেখা গেছে।
তিনি বলেন, ২০ থেকে ৩০ জন পর্যটক নিখোঁজ থাকতে পারেন। তবে অব্যাহত কাদাপানির কারণে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে।
বন্যায় কারাকোরাম হাইওয়ের (কেকেএইচ) একটি অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় হাজারো পর্যটক ও যাত্রী দুই পাশে আটকে পড়েছেন। গিলগিট-বালটিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে উদ্ধার ও সহায়তায় সর্বোচ্চ সম্পদ ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন।
বন্যায় ফসলি জমি, গাছপালা, সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা এবং অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
এদিকে, ঘিজার জেলাতেও বৃষ্টির ফলে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। কাঁচে ও সালপি গ্রামে বেশ কিছু ঘরবাড়ি, কৃষিজমি, ফসল ও মৌলিক অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে বলে স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে।
উপ-ইয়াসিনের থুই এলাকায় শনিবার রাতের অল্প সময়ের বৃষ্টিতেই আকস্মিক বন্যায় কয়েকটি বাড়ি ও একটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ছয়টি বাড়ি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায় এবং আরও কয়েকটি বাড়ি ও আগা খান এডুকেশন সার্ভিসের পরিচালিত একটি স্কুল ক্ষতির মুখে পড়েছে। গম ক্ষেত, এপ্রিকট ও চেরি বাগানও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বন্যার্তরা সরকারের কাছে জরুরি সহায়তার আবেদন জানিয়েছেন।
স্কারদুতে বার্গি ও সাদপারা নালায় বন্যার হুমকি থাকায় রেসকিউ ১১২২ গাম্বা স্টেশনকে হাই অ্যালার্টে রাখা হয়েছে।
বন্যায় বসতবাড়ি, সড়ক, কৃষিজমি এবং পানির চ্যানেল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বালটিস্তানের কমিশনার কামাল খান এলাকা পরিদর্শন করে পানি সরবরাহ ও রাস্তা পুনর্গঠনে যন্ত্রপাতি মোতায়েন করেছেন।
প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানান, খঞ্জেরাব নদীর পানির স্তর বেড়ে যাওয়ায় গোজালের পাশু এলাকায় কারাকোরাম হাইওয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ফলে চীন সীমান্তের সঙ্গে পাকিস্তানের একমাত্র সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
গিলগিট-বালটিস্তান পরিবেশ সংরক্ষণ সংস্থার পরিচালক খাদিম হোসেন জানান, এ বছর অঞ্চলটিতে রেকর্ড তাপমাত্রা বিরাজ করছে।
তিনি বলেন, “গত দেড় মাস ধরে উচ্চ তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা থাকায় ঘন ঘন বৃষ্টি হচ্ছে।”
তিনি ব্যাখ্যা করেন, এই বৃষ্টি পাহাড়ি অঞ্চলে ভয়াবহ আকস্মিক বন্যার সৃষ্টি করছে, যা নিচু এলাকায় কাদা ও পাথরের ঢলে ধ্বংসযজ্ঞের মাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে।
এদিকে, মনসেহরা, তোর্ঘর, আপার ও লোয়ার কোহিস্তান এবং কলাই-পালাস এলাকায় দুপুরের পর শুরু হওয়া বৃষ্টি পুরো দিন ধরে চলেছে।
মানসেহরার কাগান, সিরেন ও কনশ উপত্যকায় ভূমিধসে সংযোগ সড়কগুলো বন্ধ হয়ে গেছে।
অন্যদিকে, পাঞ্জাবের প্রাদেশিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (পিডিএমএ) চেনাব, রাভি, সুতলজ ও ঝেলাম নদীতে মাঝারি থেকে উচ্চমাত্রার বন্যার সতর্কতা জারি করেছে।

২১ থেকে ২৩ জুলাইয়ের মধ্যে ভারি বৃষ্টিপাতের আশঙ্কায় এই সতর্কতা দেওয়া হয়েছে।
পিডিএমএ জানিয়েছে, তাউনসা পয়েন্টে ইন্দাস নদীর পানির প্রবাহ ৪ লাখ ২৯ হাজার কিউসেকে পৌঁছেছে, যা মাঝারি বন্যা অবস্থান নির্দেশ করে।
রাওয়ালপিন্ডি, গুজরানওয়ালা, সারগোধা, ফয়সালাবাদ, লাহোরসহ বিভিন্ন জেলার কমিশনার ও ডেপুটি কমিশনারদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।