রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য নিয়ে ভারত ও পশ্চিমাদের দ্বিমুখী নীতি, কে ঠিক?

রাশিয়া থেকে তেল কেনাকে কেন্দ্র করে আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নিষেধাজ্ঞা, শুল্ক ও হুমকির বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ করেছে ভারত। নয়াদিল্লি বলছে, আমেরিকা ও ইইউ একদিকে রাশিয়া থেকে বিপুল পরিমাণ পণ্য আমদানি করছে, অন্যদিকে ভারতকে শাস্তি দিচ্ছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতীয় পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়ানোর হুমকি দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর ভারত এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। এর আগে ট্রাম্প গত সপ্তাহে ভারতীয় পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিলেন, যা ৭ আগস্ট থেকে কার্যকর হওয়ার কথা।
তবে সোমবার ট্রাম্প রাশিয়ার তেল আমদানির কারণে ভারত থেকে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর আরও শুল্ক বাড়ানোর হুমকি দেন।
অন্যদিকে, ইইউও ভারতের দুটি তেল শোধনাগার কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, যা মূলত রাশিয়ার তেল থেকে পরিশোধিত তেল আমদানি করে।
দীর্ঘ নীরবতা কাটিয়ে ট্রাম্পের হুমকির দুই ঘণ্টা পরে ভারত একটি বিবৃতি জারি করে। এতে তারা আমেরিকা ও ইইউকে দ্বিমুখী আচরণের অভিযোগ করে বলেছে, তারাই আগে রাশিয়া থেকে তেল কেনার জন্য ভারতকে উৎসাহিত করেছিল।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, যেকোনো বৃহৎ অর্থনীতির মতো ভারতও তার জাতীয় স্বার্থ ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
জয়সওয়াল বলেন, বিশ্বব্যাপী জ্বালানি বাজারের স্থিতিশীলতা জোরদার করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেই সময়ে ভারতের এই ধরনের আমদানিকে সক্রিয়ভাবে উৎসাহিত করেছিল। তিনি আরও দাবি করেন, ভারতের সমালোচনাকারী দেশগুলো নিজেরাই রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য করছে।
ভারতের দাবি অনুযায়ী, ইইউ এখনও রাশিয়ার সঙ্গে বেশি বাণিজ্য করে। ইইউর তথ্যমতে, ২০২৪ সালে রাশিয়ার সঙ্গে তাদের মোট বাণিজ্য ছিল ৬৭.৫ বিলিয়ন ইউরো, যেখানে ভারতের বাণিজ্য ছিল ৬৮.৭ বিলিয়ন ডলার।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারত পশ্চিমের সঙ্গে তার সম্পর্ক নিয়ে বেশ সতর্ক। কারণ, আমেরিকা ভারতের সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার। তবে অর্থনীতিবিদ বিশ্বজিৎ ধর মনে করেন, একটি সার্বভৌম দেশের জন্য অন্য দেশের কাছ থেকে এ ধরনের হুমকি শোনা অগ্রহণযোগ্য।
অনেক ভারতীয় বিশেষজ্ঞ বিশ্বাস করেন, ট্রাম্পের এই হুমকি আসলে ভারতকে একটি বাণিজ্য চুক্তিতে রাজি করানোর কৌশল, যা আমেরিকার জন্য লাভজনক হবে। বিশেষ করে কৃষিপণ্য নিয়ে দুই দেশের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভও পশ্চিমাদের এই পদক্ষেপের সমালোচনা করে বলেছেন, সার্বভৌম দেশগুলোর নিজস্ব বাণিজ্য অংশীদার বেছে নেওয়ার অধিকার রয়েছে।