চীনে বিক্রি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে ১৫ শতাংশ রাজস্ব দেবে এনভিডিয়া-এএমডি

বিশ্বের দুই প্রধান চিপ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এনভিডিয়া ও এএমডি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে, যার আওতায় তারা চীনে সেমিকন্ডাক্টর বিক্রি থেকে ১৫ শতাংশ রাজস্ব যুক্তরাষ্ট্রকে দেবে। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বিবিসিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এই চুক্তিটি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে রপ্তানি লাইসেন্স পাওয়ার অংশ হিসেবে করা হয়েছে। খবর বিবিসির।
এনভিডিয়া বিবিসিকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেছে, “আমরা যুক্তরাষ্ট্র সরকারের নির্ধারিত নিয়ম মেনে বৈশ্বিক বাজারে অংশ নেই। আমরা কয়েক মাস ধরে চীনে এইচ২০ চিপ পাঠাচ্ছি না, তবে আশা করছি রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের নিয়মগুলো যুক্তরাষ্ট্রকে চীনসহ বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতার সুযোগ দেবে।”
এএমডি এই বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য জানায়নি।
ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রথম প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চুক্তির আওতায় এনভিডিয়া চীনে এইচ২০ চিপ বিক্রি থেকে অর্জিত রাজস্বের ১৫ শতাংশ এবং এএমডি এমআই৩০৮ চিপ বিক্রির রাজস্বের ১৫ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্রকে দেবে।
গ্লোবাল গবেষণা প্রতিষ্ঠান ফরেস্টারের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও প্রধান বিশ্লেষক চার্লি ডাই বলেছেন, এই চুক্তি “অভূতপূর্ব”। তিনি যোগ করেন, “এটি ক্রমবর্ধমান প্রযুক্তি-বাণিজ্য উত্তেজনার মধ্যে বাজারে প্রবেশের উচ্চমূল্যকে তুলে ধরে, যা প্রযুক্তি বিক্রেতাদের জন্য বড় আর্থিক চাপ ও কৌশলগত অনিশ্চয়তা তৈরি করছে।”
নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগের কারণে এর আগে ওয়াশিংটন বেইজিংয়ে এনভিডিয়ার এইচ২০ চিপ বিক্রি নিষিদ্ধ করেছিল। তবে সম্প্রতি সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ঘোষণা এসেছে। শক্তিশালী এই চিপগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) অ্যাপ্লিকেশনে ব্যবহৃত হয়।
হিনরিচ ফাউন্ডেশনের বাণিজ্য নীতি প্রধান ডেবোরাহ এলমস বলেন, “আপনার যদি জাতীয় নিরাপত্তা উদ্বেগ থাকে, তাহলে ১৫ শতাংশ রাজস্ব প্রদানের মাধ্যমে সেটি দূর হয়ে যায় না।”
এইচ২০ চিপটি ২০২৩ সালে বাইডেন প্রশাসনের রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের পর বিশেষভাবে চীনা বাজারের জন্য তৈরি করা হয়েছিল। তবে চলতি বছরের এপ্রিলে ট্রাম্প প্রশাসন এর বিক্রি কার্যত নিষিদ্ধ করে।
এনভিডিয়ার প্রধান নির্বাহী জেনসেন হুয়াং মাসের পর মাস উভয় পক্ষকে রাজি করানোর চেষ্টা চালিয়ে গেছেন যাতে চীনে চিপ বিক্রি পুনরায় শুরু করা যায়। জানা গেছে, গত সপ্তাহে তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছেন।
চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য উত্তেজনা কিছুটা প্রশমিত হওয়ায় চিপ বিক্রি পুনরায় শুরু হচ্ছে। বেইজিং বিরল খনিজ রপ্তানির ওপর নিয়ন্ত্রণ শিথিল করেছে এবং যুক্তরাষ্ট্র চীনে কার্যরত চিপ ডিজাইন সফটওয়্যার কোম্পানির ওপর থেকে বিধিনিষেধ তুলে নিয়েছে।
মে মাসে বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতি ৯০ দিনের শুল্কবিরতির চুক্তি করেছে। এরপর থেকে দুই পক্ষের শীর্ষ বাণিজ্য কর্মকর্তারা কয়েক দফা বৈঠক করেছেন, যদিও ১২ আগস্টের আগে এই বিরতি বাড়ানোর বিষয়ে কোনো চূড়ান্ত ঘোষণা আসেনি।
এর আগে ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস জানিয়েছিল, সম্ভাব্য শুল্ক চুক্তির অংশ হিসেবে চীন যুক্তরাষ্ট্রকে সেমিকন্ডাক্টর রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ শিথিল করার আহ্বান জানিয়েছে।
বাণিজ্য নীতির অংশ হিসেবে ট্রাম্প বড় কোম্পানিগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রে বেশি বিনিয়োগে চাপ দিচ্ছেন। গত সপ্তাহে অ্যাপল ঘোষণা করেছে, তারা দেশে আরও ১০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। এর আগে তারা আগামী চার বছরে মোট ৫০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।

এ বছরের জুনে মেমোরি চিপ নির্মাতা মাইক্রন টেকনোলজি জানিয়েছে, তাদের যুক্তরাষ্ট্রে পরিকল্পিত বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়াবে ২০০ বিলিয়ন ডলার, যার মধ্যে আইডাহোতে নতুন উৎপাদন কারখানা নির্মাণও রয়েছে।
এনভিডিয়া নিজেও যুক্তরাষ্ট্রে সর্বোচ্চ ৫০০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের এআই সার্ভার তৈরির পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে, যার মধ্যে পুরোপুরি যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি প্রথম এআই সুপারকম্পিউটার নির্মাণের প্রতিশ্রুতিও রয়েছে।