‘ওয়াশিংটন ডিসিতে জরুরি অবস্থা ট্রাম্পের স্বৈরতান্ত্রিক পদক্ষেপ’

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সোমবার (১১ আগস্ট) যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে “জননিরাপত্তা জরুরি অবস্থা” ঘোষণা করে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা বিচার বিভাগকে দেন। একইসঙ্গে তিনি পেন্টাগনকে শহরে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের নির্দেশও দেন। ৭ লাখেরও বেশি জনসংখ্যার এই শহরে প্রথম ধাপে ৮০০ সৈন্য সক্রিয় করা হয়েছে, যাদের মধ্যে ১০০-২০০ জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সহায়তা করবে। খবর আল জাজিরার।
হোয়াইট হাউসের কাছাকাছি বিক্ষোভে অংশ নেওয়া প্রতিবাদকারীরা এ ঘোষণায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে স্লোগান দেন। ফ্রি ডিসি’র নির্বাহী পরিচালক কেয়া চ্যাটার্জি একে “বড় ধরনের উসকানি” এবং “স্বৈরতান্ত্রিক পদক্ষেপ” বলে মন্তব্য করেন।
১৭৯০ সালে কংগ্রেসের মাধ্যমে মেরিল্যান্ড ও ভার্জিনিয়ার জমি নিয়ে গঠিত ওয়াশিংটন ডিসি কখনও পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা পায়নি। ১৯৭৩ সালের হোম রুল অ্যাক্টের মাধ্যমে আংশিক স্বশাসন পেলেও কংগ্রেস এখানকার সব আইন ও বাজেট অনুমোদন করে। একসময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ সংখ্যাগরিষ্ঠ শহর হিসেবে পরিচিত ডিসি বর্তমানে কৃষ্ণাঙ্গ সংখ্যাগরিষ্ঠের কাছাকাছি জনসংখ্যা বহন করে।
এদিকে, প্রখ্যাত নাগরিক অধিকার নেতা রেভারেন্ড অ্যাল শার্পটন একে “ন্যায়বিচার ও নাগরিক অধিকারের চরম অপমান” বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি অভিযোগ করেন, ট্রাম্প কেবল রাজনৈতিক স্বার্থে এবং “এপস্টিন ফাইলস” বিতর্ক থেকে নিজের সমর্থকদের মনোযোগ সরাতে এই পদক্ষেপ নিয়েছেন।
ডিসির মেয়র মুরিয়েল বাউসার ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনকে “অস্বস্তিকর” বলে উল্লেখ করলেও পূর্বে এর নজির আছে বলে জানান। তিনি পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা পাওয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।
২০ বছর বয়সী কলেজ ছাত্র আমারি জ্যাক বলেন, এটি ডিসির ওপর ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করার প্রথম ধাপ হতে পারে। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, কংগ্রেস হোম রুল অ্যাক্ট বাতিল করে শহরের স্বায়ত্তশাসন কেড়ে নিতে পারে।
ট্রাম্প তার ঘোষণায় দাবি করেন, ডিসি সরকার জননিরাপত্তা রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে এবং অপরাধের হার ফেডারেল কার্যক্রমের জন্য ঝুঁকি তৈরি করেছে। তিনি গ্যাং, মাদক ব্যবসায়ী ও অপরাধী নেটওয়ার্ক দমনে ব্যাপক অভিযান চালানোর কথা জানান এবং শহরের বস্তি ও গৃহহীনদের সরিয়ে দেওয়ার ঘোষণা দেন।
তবে ডিসির অ্যাটর্নি জেনারেল ব্রায়ান শওয়ালব একে “অভূতপূর্ব, অপ্রয়োজনীয় ও অবৈধ” পদক্ষেপ বলে নাকচ করেন। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ থেকে ২০২৪ সালে ডিসিতে সহিংস অপরাধ ৩৫ শতাংশ এবং এ বছর আরও ২৬ শতাংশ কমেছে। এ বছরের শুরুতে সহিংস অপরাধ ৩০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে নেমেছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ জানায়।
প্রতিবাদকারীদের অনেকে মনে করেন, ট্রাম্প অপরাধকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের চেষ্টা করছেন, বিশেষ করে ডেমোক্র্যাট-নিয়ন্ত্রিত শহরগুলিকে “অপরাধপ্রবণ” হিসেবে চিত্রিত করতে। ২০২৪ সালের নির্বাচনে ডিসির ৯০ শতাংশের বেশি ভোটার ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিসকে ভোট দিয়েছিলেন।

স্থানীয় অধিকারকর্মী মরিস কার্নি বলেন, স্বল্পমেয়াদি সামরিকীকরণ নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগই অপরাধ মোকাবিলার সঠিক উপায়।