‘ঝুঁকিতে উপসাগরীয় অঞ্চল’ : ইসরায়েলি হামলার ‘সম্মিলিত জবাব’ চায় কাতার

কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুর রহমান আল থানি বলেছেন, দোহায় ইসরায়েলি হামলার জবাব দিতে হবে আঞ্চলিকভাবে সমন্বিত পদক্ষেপের মাধ্যমে। তিনি সতর্ক করে বলেন, “সম্পূর্ণ গালফ অঞ্চল এখন ঝুঁকির মুখে।” খবর আল জাজিরার।
বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কাতারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, আঞ্চলিক দেশগুলো ইতোমধ্যে আলোচনায় বসেছে এবং একটি যৌথ প্রতিক্রিয়ার পরিকল্পনা চলছে। তিনি “অঞ্চলকে বিশৃঙ্খলার দিকে ঠেলে দেওয়ার” জন্য ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে অভিযুক্ত করেন।
মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) দোহায় হামাস নেতাদের বৈঠকের সময় ইসরায়েল হামলা চালায়। কাতার জানিয়েছে, হামলায় তাদের দুইজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় অন্তত সাতজন নিহত হলেও হামাসের নেতৃত্ব বেঁচে গেছে। কাতার একে “রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদ” আখ্যা দিয়েছে।
হামলার পর ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির সঙ্গে ফোনে কথা বলে ঘটনাটিকে “অগ্রহণযোগ্য” উল্লেখ করে নিন্দা জানান।
হামলার প্রতিক্রিয়ায় আরব নেতারা দোহায় ছুটে যাচ্ছেন। বুধবার কাতারে গিয়ে সংহতি জানিয়েছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ। কুয়েত ও জর্ডানের ক্রাউন প্রিন্সরাও দোহায় পৌঁছেছেন। বৃহস্পতিবার সেখানে পৌঁছাবেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান (এমবিএস)। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, “কাতারকে আমরা সীমাহীন সমর্থন দেবো, সব সক্ষমতা কাজে লাগানো হবে।”
কাতারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, হামাস নেতাদের উপস্থিতি কোনো গোপন বিষয় ছিল না, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলও তা জানত। তিনি অভিযোগ করেন, এই হামলার মাধ্যমে নেতানিয়াহু গাজার শান্তি প্রক্রিয়ার সব সম্ভাবনাই হত্যা করেছেন।
এদিকে, নেতানিয়াহু হুমকি দিয়ে বলেছেন, কাতারসহ যারা সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দেবে তাদের বিরুদ্ধেও ভবিষ্যতে হামলা চালানো হবে। তবে কাতার তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছে, হামাস অফিস রাখা হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের অনুরোধেই, শান্তি আলোচনার অংশ হিসেবে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি ইসরায়েলের এই হামলায় “খুশি নন” এবং বিষয়টি তার সিদ্ধান্তে হয়নি। তবে যুক্তরাষ্ট্র হামলার ব্যাপারে পূর্বেই জানত কি না, তা স্পষ্ট নয়।
হিজবুল্লাহর উপপ্রধান নাইম কাসেম বলেছেন, কাতারে হামলা উপসাগরীয় দেশগুলোকে হুঁশিয়ারি দেওয়ার বার্তা। তিনি অভিযোগ করেন, ইসরায়েল “গ্রেটার ইসরায়েল” প্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত, যার মধ্যে পশ্চিম তীর, গাজা, লেবানন, সিরিয়া, মিসর ও জর্ডানের অংশ দখলের পরিকল্পনা রয়েছে।
এদিকে, গাজায় ইসরায়েলি হামলায় বুধবার অন্তত ৭২ জন নিহত হয়েছেন। গত বছরের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৪ হাজার ৬৫৬ জনে।
কাতারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, “নেতানিয়াহু আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে বিচারের মুখোমুখি হওয়া উচিত। তিনি প্রতিটি আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছেন।”