জাতিসংঘে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের পক্ষে ভোট, বিপক্ষে ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্র

ফিলিস্তিন–ইসরায়েল দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের লক্ষ্যে একটি প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে অধিকাংশ সদস্য দেশ। ‘নিউইয়র্ক ঘোষণা’ নামের এই প্রস্তাবে বলা হয়েছে, একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠিত হলে সেখানে হামাসের কোনো সংশ্লিষ্টতা থাকবে না।
স্থানীয় সময় শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত এই ভোটাভুটিতে প্রস্তাবের পক্ষে ১৪২টি দেশ ভোট দেয়। তবে ১০টি দেশ এই প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেয় এবং ১২টি দেশ ভোটদানে বিরত ছিল। খবর এএফপির।
প্রস্তাবটি উত্থাপন করেছিল ফ্রান্স ও সৌদি আরব। এতে বলা হয়েছে, দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের প্রচেষ্টায় তৎপরতা আনতে গাজায় চলমান সংঘাত বন্ধ করতে হবে। এর জন্য হামাসকে অবশ্যই উপত্যকাটির শাসন থেকে সরে যেতে হবে এবং ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের (পিএ) কাছে নিজেদের অস্ত্রসমর্পণ করতে হবে। আরব লিগসহ ইতোমধ্যে ১৭টি সদস্যদেশ এই প্রস্তাবের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে।

তবে এই প্রস্তাবকে ‘বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন এক রাজনৈতিক সার্কাস’ বলে আখ্যা দিয়ে এর তীব্র বিরোধিতা করেছে ইসরায়েল। ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওরেন মারমোর্সটেইন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) লিখেছেন, ইসরায়েল এই ঘোষণাকে পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করছে।
জাতিসংঘের এই ভোটাভুটির বিপরীতে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের সম্ভাবনাকে কার্যত অসম্ভব করে তুলতে মাঠে নেমেছে ইসরায়েল। সম্প্রতি দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু পশ্চিম তীরে অবৈধ বসতি বাড়ানোর একটি চুক্তিতে সই করেছেন। এর মাধ্যমে সেখানে নতুন তিন হাজার ৪০০টি বাড়ি নির্মাণ করা হবে। গত বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) একটি অনুষ্ঠানে দম্ভ প্রকাশ করে নেতানিয়াহু বলেন, ‘কোনো ফিলিস্তিন রাষ্ট্র থাকবে না—এই প্রতিশ্রুতি আমরা পূরণ করতে যাচ্ছি।’ এই নতুন বসতি পরিকল্পনা কার্যকর হলে পূর্ব জেরুজালেম থেকে পশ্চিম তীরের বেশিরভাগ অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।
এদিকে জাতিসংঘে প্রস্তাবটি গৃহীত হওয়ায় তাকে স্বাগত জানিয়েছেন ফিলিস্তিনের ভাইস প্রেসিডেন্ট হুসেইন আল–শেখ। তিনি বলেছেন, এর মাধ্যমে তাদের মানুষের অধিকারের প্রতি আন্তর্জাতিক আগ্রহ প্রকাশ পেয়েছে। ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের (পিএ) মুখপাত্র নাবিল আবু রুদেইনেহ নেতানিয়াহুর পরিকল্পনার সমালোচনা করে বলেন, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী পুরো এলাকাকে ‘নরকের’ দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। তিনি যেসব দেশ এখনও ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়নি, তাদের দ্রুত এই পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।
চলতি মাসের ২২ তারিখে রিয়াদ ও প্যারিসের সভাপতিত্বে সাধারণ পরিষদের অধিবেশন বসতে যাচ্ছে। সেখানে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ফিলিস্তিনের স্বীকৃতি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বর্তমানে জাতিসংঘের ১৯৩টি দেশের মধ্যে ১৪৯টি দেশই ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এই কূটনৈতিক তৎপরতার মধ্যেই গত ২৩ মাসে গাজায় ইসরায়েলের হামলায় ৬৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়েছে বলে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।