যুক্তরাজ্যের রয়েল ডিফেন্স কলেজে নিষিদ্ধ ইসরায়েলিরা

গাজা যুদ্ধে ইসরায়েলি কর্মকাণ্ডের কারণে যুক্তরাজ্যের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ প্রতিরক্ষা একাডেমিতে ওই দেশটির নাগরিকদের ভর্তি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ব্রিটিশ সরকার নিশ্চিত করেছে, রয়্যাল কলেজ অব ডিফেন্স স্টাডিজ আগামী বছর থেকে ইসরায়েলের কোনো শিক্ষার্থীকে গ্রহণ করবে না। খবর দ্য টেলিগ্রাফের।
ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের এমন ঘোষণার পর এই কলেজে পড়াশোনা করা ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক আমির বারাম এই সিদ্ধান্তকে ‘যুদ্ধের একজন মিত্রের প্রতি গভীর অসম্মানজনক এবং অবিশ্বস্ত কাজ’ বলে অভিহিত করেছেন।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে লেখা এক চিঠিতে আমির বারাম এই সিদ্ধান্তকে একটি ‘বৈষম্যমূলক কাজ’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, এটি ‘যুক্তরাজ্যের সহনশীলতার গর্বিত ঐতিহ্য এবং সাধারণ শালীনতা থেকে এক লজ্জাজনক বিচ্ছেদ।’
তবে যাই হোক, রয়্যাল কলেজ অব ডিফেন্স স্টাডিজ এই প্রথমবার ইসরায়েলিদের বাদ দিল।
মেজর জেনারেল বারাম বলেন, এই সিদ্ধান্ত এমন এক সময়ে এলো যখন ইসরায়েল হুতি আগ্রাসন থেকে আন্তর্জাতিক নৌ-চলাচলকে রক্ষা করছে, ‘ইংল্যান্ডের মৃত্যু’ চেয়ে স্লোগান দেওয়া একটি ইসলামপন্থি শাসনের হাতে পারমাণবিক অস্ত্র যাওয়া ঠেকিয়ে দিচ্ছে এবং হামাসের হাতে বন্দি ৪৮ জন জিম্মিকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য যুদ্ধ করছে।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক আরও বলেন, এই সিদ্ধান্ত ব্রিটিশ নিরাপত্তার জন্য এক ধরনের আত্ম-নাশকতা ছাড়া আর কিছুই নয়।
ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ব্রিটিশ সামরিক শিক্ষা কোর্সগুলো দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন দেশের কর্মীদের জন্য উন্মুক্ত ছিল এবং সব যুক্তরাজ্যের সামরিক কোর্সে আন্তর্জাতিক মানবিক আইন মেনে চলার ওপর জোর দেওয়া হয়।
মুখপাত্র আরও বলেন, তবে সরায়েল সরকারের গাজায় সামরিক অভিযান আরও বাড়ানোর সিদ্ধান্ত ভুল। এই যুদ্ধের অবসান ঘটাতে একটি কূটনৈতিক সমাধান প্রয়োজন, যেখানে একটি তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি, জিম্মিদের মুক্তি এবং গাজার জনগণের জন্য মানবিক সহায়তা দ্রুত বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে হবে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই নিষেধাজ্ঞা শুধু সৈন্যদের জন্য নয়, বরং সব ইসরায়েলি নাগরিকের ভর্তির ওপর প্রযোজ্য।
রয়্যাল কলেজ বলেছে, তাদের আন্তর্জাতিক কৌশলগত গবেষণার স্নাতকোত্তর কোর্সটি রাজনৈতিক, কূটনৈতিক, নিরাপত্তা, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিষয়গুলোর ওপর উচ্চ কৌশলগত স্তরে গুরুত্বারোপ করে। এই স্তরে সরকারগুলো জাতীয়ভাবে ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে ওই বিষয়গুলো নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়। তবে, প্রতিষ্ঠানটি উল্লেখ করেছে, এর প্রধান কোর্সটি ‘তাত্ত্বিকের চেয়ে বেশি ব্যবহারিক’।
প্রতি বছর যুক্তরাজ্য এবং বিদেশ থেকে প্রায় ১১০ জন এই প্রোগ্রামে ভর্তি হয়। উল্লেখযোগ্য প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইম্পেরিয়াল জেনারেল স্টাফের প্রধান ফিল্ড মার্শাল অ্যালান ফ্রান্সিস ব্রুক এবং পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফ।
রয়্যাল কলেজ অব ডিফেন্স স্টাডিজ হলো যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা একাডেমির একটি অংশ, যা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়।
উইনস্টন চার্চিলের ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তা, কূটনীতিক, সরকারি কর্মচারী এবং কর্মকর্তাদের মধ্যে বৃহত্তর বোঝাপড়া বাড়ানোর দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে ১৯২৭ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
শাস্তিমূলক পদক্ষেপ
রয়েল ডিফেন্স কলেজ থেকে ইসরায়েলিদের বাদ দেওয়া ডাউনিং স্ট্রিটের পক্ষ থেকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নেওয়া ধারাবাহিক শাস্তিমূলক পদক্ষেপের সর্বশেষ ঘটনা।
এই সপ্তাহান্তে সরকার যুক্তরাজ্যের বৃহত্তম অস্ত্র প্রদর্শনীতে ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করেছে এবং গত বছর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ইসরায়েলের কাছে ব্রিটিশ অস্ত্র রপ্তানির ৩৫০টি লাইসেন্সের মধ্যে ৩০টি স্থগিত করেছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী স্টারমার বলেছেন, ইসরায়েল যদি গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বন্ধ না করে এবং পশ্চিম তীর দখল না করার প্রতিশ্রুতি না দেয়, তবে তিনি এই মাসের শেষের দিকে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবেন।
ইসরায়েল এই পদক্ষেপগুলোর জন্য স্টারমারের সমালোচনা করেছে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু স্টারমারের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে হামাসকে পুরস্কৃত করার অভিযোগ এনেছেন।
নেতানিয়াহু ইসরায়েলে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করার সিদ্ধান্তকে ‘লজ্জাজনক’ হিসেবে অভিহিত করে বলেছেন, ব্রিটেনের এই ভুল সিদ্ধান্ত শুধু হামাসকে উৎসাহিত করবে।