ভিসা ফি বাড়ায় ভেঙে পড়ছে ভারতীয়দের আমেরিকার স্বপ্ন

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন এইচ-১বি ভিসার ফি নাটকীয়ভাবে বাড়িয়ে দেওয়ায় হাজারো ভারতীয় তরুণ-তরুণীর আমেরিকান স্বপ্ন ভেঙে পড়ছে।
আগে যেখানে একটি ভিসার জন্য ব্যয় ছিল প্রায় ২ হাজার ডলার, এখন সেই খরচ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ডলার পর্যন্ত। ফলে একটি এইচ-১বি কর্মীর জন্য নিয়োগদাতার খরচ সর্বনিম্ন ১ লাখ ৬০ হাজার ডলার হয়ে যাচ্ছে। এ কারণে অনেক মার্কিন কোম্পানি এখন স্থানীয় কর্মী নিয়োগে ঝুঁকছে। খবর আল জাজিরার।
মেঘনা গুপ্তা নামের এক তরুণী জানান, তিনি ছোটবেলা থেকেই আমেরিকায় ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিসেসে (টিসিএস) দীর্ঘ পরিশ্রমের পর যখন সেই সুযোগ আসছিল, তখন ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত তার সব পরিকল্পনা ভেস্তে দিয়েছে। তিনি বলেন, “আমেরিকান ড্রিম এখন এক নির্মম রসিকতা মাত্র।”
বিগত কয়েক দশক ধরে ভারতীয়রাই সবচেয়ে বেশি এইচ-১বি ভিসা পেয়েছেন। ২০২৪ সালে মোট ভিসার ৭০ শতাংশই ভারতীয় নাগরিকদের হাতে গেছে। কিন্তু নতুন নীতি কার্যকরের পর যুক্তরাষ্ট্রে কাজের সেই দরজা কার্যত বন্ধ হয়ে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ভারতের বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ অজয় শ্রীবাস্তব জানান, আইটি, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, প্রকল্প ব্যবস্থাপনা এবং স্বাস্থ্যখাতের ব্যাক-এন্ড সাপোর্ট—যেসব ক্ষেত্রে ভারতীয়রা আধিপত্য করছিলেন—সেসব ক্ষেত্রেই সবচেয়ে বড় আঘাত আসবে।
উত্তর আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়ান স্টুডেন্টসের প্রতিষ্ঠাতা সুধাংশু কৌশিক বলেন, “এই সিদ্ধান্তের মূল উদ্দেশ্য হলো ভিসাধারীদের আতঙ্কে রাখা এবং মনে করিয়ে দেওয়া যে তারা এখানে অন্তর্ভুক্ত নন।”
মার্কিন বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোও বলছে, এই নীতি কেবল ভারতীয় পেশাজীবীদের নয়, বরং আমেরিকার নিজস্ব উদ্ভাবনী শক্তিকেও ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রধান সচিব পি কে মিশ্র বলেছেন, সরকার ভারতীয় দক্ষ কর্মীদের দেশে ফিরতে উৎসাহিত করছে। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতির এই কঠোরতা অনেককে বিকল্প গন্তব্য হিসেবে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া বা ইউরোপের দেশগুলোর দিকে ঠেলে দেবে।
ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন এই ভিসা নীতি শুধু ভারতীয় আইটি খাতের জন্য নয়, যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব অর্থনীতির ওপরও গভীর প্রভাব ফেলবে বলে বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা।