অবশেষে জেলেদের চাঁদার টাকা ফেরত দিলেন ওসি

সুন্দরবনে জেলেদের হাত-পা বেঁধে নির্যাতন করে জোরপূর্বক চাঁদা আদায়ের টাকার অর্ধেকের বেশি অবশেষে ফেরত দিয়েছেন বনবিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রবিউল ইসলাম।
জেলেদের কাছ থেকে নেওয়া এক লাখ ৩০ হাজার টাকার মধ্যে গতকাল সোমবার ৬০ হাজার টাকা ফেরত দেন পশ্চিম সুন্দরবন বিভাগের ভদ্রা ক্যাম্পের ওসি।
গতকাল খুলনায় বনবিভাগের বয়রাস্থ বন সংরক্ষকের কার্যালয়ের নিচে বসে মোংলার চাঁদপাই বন ব্যবস্থাপনা কমিটির (সিএমসি) সদস্য ওবায়দুলের মধ্যস্থতায় ওসি রবিউল ওই টাকা ফেরত দেন।
নির্যাতনের শিকার জেলে নির্মল, আল আমিন ও আলমগীর আজ মঙ্গলবার দুপুরে টাকা ফেরত পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। এ ছাড়া বনবিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছেও এই স্বীকারোক্তি দেন ভুক্তভোগী জেলেরা।
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ফরেস্ট ক্যাম্পে হাত-পা বেঁধে পায়ের পাতায় লাঠি দিয়ে পিটিয়ে চাঁদা হিসাবে জেলে ইয়াসির সর্দারের কাছ থেকে ৩০ হাজার, শ্যামল সর্দারের কাছ থেকে ৩০ হাজার, নির্মল রায়ের কাছ থেকে ৪০ হাজার এবং রমেশের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা নেন ওসি রবিউল। ওই সময় জলদস্যুদের হাতে জিম্মি আছে বলে এসব জেলেদের বাড়িতে ফোন করিয়ে টাকা আনিয়ে ওসি তা হাতিয়ে নেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
তবে সেই সময়ে ওসি রবিউল দাবি করেছিলেন, তিনি কোনো জেলেকে আটক ও নির্যাতন করেননি, এমনকি কোনো টাকাও নেননি।
এদিকে, মঙ্গলবার এসব কর্মকাণ্ডের বিষয়ে জানতে পশ্চিম সুন্দরবন বিভাগের ভদ্রা ক্যাম্পের ওসি রবিউল ইসলামের মোবাইল ফোনে (বন্ধ পাওয়া যায়) যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
পশ্চিম সুন্দরবন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মো. সোহাগ সালেহ বলেন, ‘জেলেদের কাছ থেকে পুরো ঘটনা শুনেছি, টাকা ফেরত দেওয়ার ঘটনাতেই মনে হচ্ছে ভদ্রা ক্যাম্পের ওসি রবিউলের বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগ সত্য। এ বিষয়ে তাঁর বিরুদ্ধে বন আইনে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
আর পশ্চিম সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. বশির আল মামুন বলেন, ‘তদন্ত করে ওসি রবিউলের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
গত ২১ ফেব্রুয়ারি পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই স্টেশন ও ঢাংমারী স্টেশন থেকে বনের অভ্যন্তরীণ খালে সাদা মাছ ধরার জন্য পাশ পারমিট (বনবিভাগের অনুমতিপত্র) নিয়ে পাঁচটি নৌকাসহ ওই জেলেরা মাছ ধরতে যান। পরে পশ্চিম সুন্দরবনের ভদ্রা ক্যাম্পের ওসি রবিউল এবং ওই ক্যাম্পের ট্রলার মাঝি বাদশা তাদের ১০ জন জেলেকে ধরে নিয়ে ক্যাম্পে আটকে রাখেন। অবৈধভাবে বনের ভিতরে মাছ শিকারের অজুহাত দেখিয়ে তাদের কাছে ওসি রবিউল দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। কিন্তু জেলেরা তাদের বনবিভাগের দেওয়া বৈধ পাশ পারমিট দেখালে তাতে আরো ক্ষিপ্ত হন ওসি। ওই সময় পাঁচটি নৌকায় থাকা প্রায় সাড়ে তিন মণ কোরাল, কাইন ও জাবাসহ কয়েক প্রজাতির সাদা মাছ ওসি রবিউল লুটে নেন বলেও জেলেরা অভিযোগ করেন।
এছাড়া ওসির চাহিদা অনুযায়ী এক লাখ ৩০ হাজার টাকার মধ্য থেকে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি দুটি বিকাশ নম্বরে ২৭ হাজার ২৫০ টাকা নেন। বাকি টাকা ভদ্রা ক্যাম্পের ট্রলার মাঝি বাদশার স্ত্রীর মাধ্যমে নেন বলেও জেলেরা জানান।