আরো প্রায় সাড়ে তিন হাজার রোহিঙ্গা ভাসানচরে যাচ্ছে

তৃতীয় দফায় আরো প্রায় সাড়ে তিন হাজার রোহিঙ্গা নোয়াখালীর দ্বীপ ভাসানচর যাচ্ছে। এর অংশ হিসেবে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ১৮টি বাসে করে ৮৫৪ জন রোহিঙ্গার একটি দল ভাসানচরের উদ্দেশে কক্সবাজারের উখিয়া ছেড়েছে। এরা টেকনাফ ও উখিয়ার বিভিন্ন শরণার্থী ক্যাম্পে ছিল।
কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার শামসুদ দৌজা নয়ন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আজ ও আগামীকাল শুক্রবার এই দুদিনে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তরের প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে। আজ দুপুরে একটি দল রওয়ানা দিয়েছে। বিকেলে আরেকটি দল যাবে। এই সময়ে স্বেচ্ছায় আরো কেউ যেতে চাইলে তাদেরও ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া হবে। প্রথমে তাদেরচট্টগ্রামের নৌবাহিনীর বোট ক্লাবে নিয়ে যাওয়া হবে, পরে সেখান থেকে নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে জাহাজে করে ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া হবে।’
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, উখিয়ার মূল ক্যাম্প ছাড়াও ৩৪টি ক্যাম্প থেকেই রোহিঙ্গারা পরিবার-পরিজন নিয়ে গতকাল বুধবার বিকেল থেকে অস্থায়ী ট্রানজিট পয়েন্ট উখিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠে আসতে শুরু করে। বাকিরা আজ সকাল ও দুপুরের মধ্যে চলে আসে। দুপুরে ছেড়ে যাওয়া প্রতিটি বাসে ৩০ জন করে রোহিঙ্গা রয়েছে বলে জানা গেছে। দুদিনের জন্য মোট ৮০টি বাস ও সংশ্লিষ্ট যানবাহন তৈরি করে রাখা হয়েছে। প্রতিটি গাড়িবহরের সামনে ও পেছনে পুলিশের গাড়ি এবং অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, নোয়াখালীর হাতিয়ায় সাগরের মাঝে ভেসে থাকা ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য সব ধরনের সুবিধা সংবলিত ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। ঝড় জলোচ্ছ্বাস থেকে সুরক্ষায় রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থাও। বসবাসের যে ব্যবস্থা করা হয়েছে তা দেখতে গত বছরের সেপ্টেম্বরে দুই নারীসহ ৪০ রোহিঙ্গা নেতাকে সেখানে নিয়ে যায় সরকার। ভাসানচরের আবাসন ব্যবস্থা দেখে মুগ্ধ হয়ে তাঁরা ক্যাম্পে ফিরে অন্যদের ভাসানচরে যেতে উদ্বুদ্ধ করেন। দুই বছর আগে সরকার ভাসানচরে এক লাখ রোহিঙ্গাকে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়।
এরপর প্রথম দফায় গত বছরের ৪ ডিসেম্বর এক হাজার ৬৪২ জন আর দ্বিতীয় দফায় ৪২৮টি পরিবারের এক হাজার ৮০৫ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তর করা হয়েছে। দুই দফায় স্থানান্তরিত রোহিঙ্গার সংখ্যা এখন তিন হাজার ৪৪৭ জন। এর আগে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমাতে গিয়ে ফিরে আসা সমুদ্রে ভাসমান তিন শতাধিক রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করে ভাসানচরে নিয়ে রাখা হয়।
ভাসানচরে যেতে আগ্রহী অনেকে জানান, রোহিঙ্গাদের মুখে সেখানকার পরিবেশের বর্ণনা শুনেছেন। তারা মনে করেন, পাহাড়ের ঘিঞ্জি বস্তিতে বসবাসের চেয়ে ভাসানচর অনেক নিরাপদ হবে। সেখানে নির্মিত অবকাঠামো অনেক বেশি আধুনিক।
কোনো বলপ্রয়োগ ছাড়াই রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে যাওয়ার ইতিবাচক মনোভাব দেখে তাদের সেখানে পাঠানোর বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেয় সরকার।